ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

বারী সিদ্দিকীর বিদায়বেলায় প্রবীণ শিল্পীরা নেই : ফকির আলমগীর

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:০৯, ২৪ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বারী সিদ্দিকীর বিদায়বেলায় প্রবীণ শিল্পীরা নেই : ফকির আলমগীর

রাহাত সাইফুল : ‘শুয়া চান পাখি আমার, আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি’, গানের কথার মতোই সুরের জাদুকর বারী সিদ্দিকী চিরঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। শত ডাকা-ডাকিতেও তিনি আর সাড়া দিয়ে গাইবেন না ‘আমি একটা জিন্দা লাশ, কাটিস নারে জংলার বাঁশ, আমার লাইগা সাড়ে তিন হাত কবর খুঁড়িস না’।

গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ২টার পর রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে অসংখ্য ভক্তদের কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান বারী সিদ্দিকী। এর আগে গত কয়েকদিন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে। এরপর ১০টার দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন প্রাঙ্গণে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সুরের জাদুকর বারী সিদ্দিকীকে দেখতে গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়জী, সংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর, রবি চৌধুরী, নোলক, সংগীত পরিচালক মানাম আহমেদ, বংশীবাদক জালালসহ নবীন শিল্পী, গীতিকার সুরকারসহ অসংখ্য ভক্তরা শেষ বিদায় জানাতে ভিড় জমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণ ও বিটিভি ভবনের সামনে। কিন্তু প্রবীণ শিল্পীদের তেমন চোখে পড়েনি। এ বিষয়টি নিয়ে কেউ কেউ ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন।

এ প্রসঙ্গে ফকির আলমগীর রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বারী সিদ্দিকী একজন সুরকার, সংগীত পরিচালক, বংশীবাদক, টেলিভিশন কর্মকর্তা। সব ছাপিয়ে তিনি একজন লোকসংগীত শিল্পী। আমরা গর্ব করি আমাদের আব্বাস আছে, আব্দুল আলিম আছে, শাহ আব্দুল করিম আছে, উকিল মুন্সি আছে, রাধারমন আছে, তেমনি আমাদের একজন বারী সিদ্দিকী ছিল। কিছুদিন আগে আমরা হারিয়েছি কালিকাপ্রসাদকে। তার মুখেও শুনেছি বারী সিদ্দিকীর প্রশংসা।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা মনে করি বারী সিদ্দিকীর শিক্ষা, গানের গভীরতা, তার গবেষণা তাকে বাঁচিয়ে রাখবে নতুন প্রজন্মের কাছে। কারণ বারী সিদ্দিকী ক্ষণে ক্ষণে জন্মায় না। বহু বছর পর একজন বারী সিদ্দিকী জন্মায়। ক্ষণজন্মা এই শিল্পী আমাদের কাছে চির জাগরুক থাকবেন। বারী সিদ্দিকী থাকবেন না কিন্তু আকাশে-বাতাসে, ইথারে যখন তার গান ভেসে বেড়াবে তখন বার বার আমাদের মনের মধ্যে এক কলতান জাগাবে। এই জনপদে, লোকসংগীতের জনপদে একজন বারী সিদ্দিকী এসেছিলেন।’

ঢাকায় বারী সিদ্দিকীর দুটি জানাজা সম্পন্ন হয়। এতে নবীন কিছু শিল্পী ছাড়া প্রবীণ শিল্পীদের তেমন দেখা যায়নি। এছাড়া স্কয়ার হাসপাতালেও প্রবীণদের দেখা মেলিনি। ক্ষোভ প্রকাশ করে এ প্রসঙ্গে ফকির আলমগীর বলেন, ‘স্কয়ার হাসপাতালে আমি দেখেছি শহীদুল্লাহ ফরায়জীকে, দেলোয়ারকে কাঁদতে। কত গীতিকার কেঁদেছেন, কত কত বর্তমান প্রজন্মের শিল্পীরা কেঁদেছেন। কিন্তু আমি সেইভাবে প্রবীণ শিল্পীদের স্কয়ার হাসপাতালে যেতে দেখিনি। এ বিষয়টা আমাকে দুঃখ দিয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি, এই শিল্পীর একটি সরকারি স্বীকৃতি দরকার। আজ বারী সিদ্দিকী নেই কিন্তু তার মরনোত্তর একটি পুরস্কার যেন তাকে দেয়া হয়। বাংলাদেশ টেলিভিশনই পারে বিশেষ একটি পুরস্কার ঘোষণা করে তাকে স্মরণীয় করে রাখতে।’

দ্বিতীয় জানাজা শেষে বারী সিদ্দিকীর মরদেহ এখন নেত্রকোনার পথে। নেত্রকোনা সরকারি কলেজ মাঠে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বাদ আসর নেত্রকোনার কারলি গ্রামে বাউল বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

বারী সিদ্দিকী গত দুই বছর ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। গত বছর থেকে কিডনির ডায়ালাইসিস করে আসছিলেন। এ ছাড়া তার ডায়াবেটিসও ছিল। ১৭ নভেম্বর রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পরের দিন ১৮ নভেম্বর বারী সিদ্দিকীকে লাইফ সাপোর্টে নেন চিকিৎসকেরা। বারী সিদ্দিকীর দুটি কিডনিই অকার্যকর হয়ে পড়েছিল বলে চিকিৎসকেরা জানান।



রাইজিংবিডি/ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০১৭/রাহাত/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়