ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আম্মার মতো আমিও হারিয়ে যাব : রাইমা

আমিনুল ইসলাম শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আম্মার মতো আমিও হারিয়ে যাব : রাইমা

বিনোদন ডেস্ক : মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি না ফেরার দেশে চলে যান বাংলা চলচ্চিত্রের এই কিংবদন্তি। আজ বুধবার এ নায়িকার প্রয়াণের চার বছর।

সুচিত্রা সেনের নাতনি রাইমা সেন। তিনিও একজন অভিনয়শিল্পী। সুচিত্রাকে তিনি ‘আম্মা’ বলে ডাকতেন। প্রয়াণ দিবসে প্রিয় ‘আম্মা’ কে নিয়ে ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমে স্মৃতিচারণ করেছেন রাইমা। তার স্মৃতিচারণমূলক লেখাটি রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-   

‘আমার আম্মা। অবান্তর স্মৃতির ভেতর যার মায়া মুখ, গন্ধ, স্পর্শ নিয়ে রোজ আমার বেঁচে থাকা। আলাদা করে অন্তত তাকে আমার মনে করতে হয় না। হঠাৎ শাড়ির ভাঁজে, মেকআপ রুমের আয়নায়, খোঁপার সাজে আম্মা চলে আসে। আম্মাকে দেখিয়ে নিই, ‘দেখ সুন্দর লাগছে তো, স্টাইলটা ঠিক আছে তো...?’

মানুষকে দেখতে পেলাম না, আর তাই সে আমার কাছে থাকল না, এটা ভুল। আম্মা চলে গিয়ে এই সত্যিটা আমাদের শিখিয়ে দিল। সময় আর স্মৃতির একটা চাপা লড়াই আছে, মানুষকে কাছে পাওয়ার, দূরে নিয়ে যাওয়ার অন্তহীন এই খেলায়। আমি কি খুব আবেগতাড়িত হয়ে পড়ছি?  নাহ্! আসলে অন্যরকমভাবে আজ দেখতে ইচ্ছে করছে জীবনকে, আম্মাকে, সুচিত্রা সেনকে। আর আমার কাছে আম্মা মানে তো আমার অন্য এক গভীর জীবন!

লিখতে লিখতে আমার হাতের দিকে চোখ গেল। আজও আমার হাতে তার মিনাকারী সোনার বালা। মা পরিয়ে দিয়েছিল আমায়। মা বিশ্বাস করে, তার মধ্যে আম্মার শক্তি ভরা আছে। এই বালা আমার জন্য সবচেয়ে ভালো পাওয়া। সত্যি তাই, এই সুন্দরী বালা আমার জন্য বরাবর একরাশ খুশি নিয়ে আসে। খুশির আর এক নাম যে আম্মা।

তার শাড়ি, গয়না সব কিছুই তো আজ আমাদের সঙ্গে। আজ মনে পড়ছে, একবার আম্মার শাড়ি পরে, আম্মার মতো করে সেজেছিলাম। তখন তো আম্মা ছিল, আম্মা মায়ের বিয়েতে যে বেনারসি পরেছিল সেটাই আমার শুটের জন্য পরতে বলেছিল। আজও ওই শাড়িটা আছে। আম্মার গন্ধ নিতে চাইলে তার কাছে যাই। তার ফ্ল্যাটটাও তো আমাদের ফ্ল্যাটের পাশেই। আমরা রোজই যাই। ছোট ড্রইংরুম। তেমন কিছু আসবাবপত্র নেই দামি টেবিলটা ছাড়া। ঘরটা চৌদ্দ বাই চৌদ্দ হবে। দেয়ালে আম্মার ছবি ঝুলছে। একটা সপ্তপদীর। অন্যটা বাড়িতে তোলা।

আসলে আম্মার সম্পর্কে আমরা কেউ খুব বেশি কিছু বলি না। কারণ সকলেই জানে আম্মা সেটা চাইত না। আম্মার জন্মদিন আর চলে যাওয়ার দিনের আগে মিডিয়া আমাকে ও মাকে ঘিরে ধরেছিল। অথচ কী আশ্চর্য, কলকাতাবাসী জানেন, এক সময় কিছু দিন পর পর একটা অদ্ভুত গুজব গোটা শহরে ছড়িয়ে পড়ত যে, একটু আগে আম্মা প্রয়াত হয়েছেন। আমরা এর সঙ্গে খুব পরিচিত। কারণ কনফার্মেশনের জন্য কেউ না কেউ ফোন করত আর ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করত আমায় ‘বাড়ির সবাই ভালো আছেন তো?’ আমি বলতাম, ‘শী ইজ ফাইন।’ সেটা হয়তো কুড়ি নম্বর কল ছিল।

বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের বাড়ির ছাদেই আম্মার শ্রাদ্ধ করা হয়। কোথাও কোনো বাড়ি ভাড়া করে নয়।

আম্মা চেয়েছিল আমি বিয়ে করে সেটল করি। রিয়া যে বিয়ে করেছে আমি জানি, আম্মা খুব খুশি! রিয়ার বিয়ের পর আরো বেশি করে অনেকে জানতে চায় আমি কবে বিয়ে করব। কিন্তু আমার বিশ্বাস, আম্মা জানে যে আমি এখনো কেন বিয়ে করছি না, কী কারণ আম্মা ঠিক বুঝেছে। আম্মা জানে আমি এই মুহূর্তে আমার ক্যারিয়ার নিয়ে খুব ব্যস্ত। সব কিছুর সময় থাকে, আমার বিয়ের জন্য নিশ্চয়ই একটা সময় ঠিক করা আছে। সময়ের সঙ্গে চলি। আর জানি, কোনো একদিন আমার জন্য যা বেস্ট, তা আমি ঠিক পাব, আমার অপেক্ষার মূল্য নিশ্চয়ই আছে।

প্রতি ১৭ জানুয়ারি আম্মার জন্য আমরা পূজো করব। কেবল পরিবারের আমরা। তবে এটার মধ্যেও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। অনেক সময় এমন হয়েছে, আমরা শহরে হয় তো নেই! তাতে কী! থাকতেই হবে এমন তো নয়। আজও আমরা একে অন্যকে কানেক্ট করি। অনেকে আমায় জিজ্ঞেস করেন, আমি না রিয়া কে বেশি আম্মার মতো? আমি ঠিক উত্তর দিতে পারি না। আমার তো মনে হয় আমি আর রিয়া দু’জনে আম্মার একটা অংশ। আচ্ছা, এই আম্মার মতো আমিও কোনো দিন সবার সামনে থেকে হারিয়ে যাব। গায়ে জড়াব অন্ধকার? এমনো কি হবে? উঁহু...বলব না!’

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ জানুয়ারি ২০১৮/শান্ত/মারুফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়