ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘করুণায় নয়, কর্মে বাঁচতে চাই’

আবু রায়হান ইফাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৫, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘করুণায় নয়, কর্মে বাঁচতে চাই’

মো. জসিম উদ্দিন

আবু রায়হান ইফাত: গল্পটি হার মানতে না-চাওয়া একজনের। যিনি শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রবল ইচ্ছা প্রকাশ করেন। অন্যের মুখাপেক্ষি হয়ে থাকতে চান না, কাজ করে জীবন অতিবাহিত করতে চান।

মো. জসিম উদ্দিন (২৬)। পিতা আজম আলী, মাতা সখিনা বেগম। দুই ভাইয়ের মধ্যে জসিম ছোট। প্রবল ইচ্ছা কোনো কাজে নিজেকে জড়িয়ে জীবনের দায়িত্ব নিজ হাতে তুলে নেবেন। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তার স্বপ্ন পূরণে। ছোটবেলায় পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়ে জসিমের সঙ্গী এখন হুইল চেয়ার। সেই থেকে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। এ যেন এক তরুণের পূরণ না-হওয়া কোনো স্বপ্ন। অথচ তার আশপাশে কত শত তরুণ চলছে ফিরছে নিজের পায়ে। জসিমের জন্য এটি একটি দীর্ঘশ্বাস!

জসিম জানেন স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা তার দ্বারা আর কখনো হবে না। তাই সেই স্বপ্ন তিনি আর দেখেন না। তবে মাঝে মাঝে মনের কোণে কষ্টের চোরা স্রোত বয়ে চলে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ফিরিঙ্গি বাজারে জসিমের বসবাস। বাবার রেখে যাওয়া কিছু টাকা ব্যবসায় বিনিয়োগ করে জসিম স্বাবলম্বী হতে চান। সিটি করপোরেশনের অধীনে একটি দোকান হলে তার জন্য ভালো হয়। কিন্তু দোকান পাওয়া তার জন্য যেন সোনার হরিণ! তাই বলে বসে নেই জসিম। তিনি ছুটছেন সেই হরিণের পেছনে। যদি ভাগ্য সহায় হয়।

দোকান পাওয়ার জন্য সিটি করপোরেশনে লিখিত আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। যদিও সন্তোষজনক কোনো উত্তর পাননি। সম্প্রতি রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা হয় জসিমের। তিনি বলেন, ‘আমি ফিরিঙ্গি বাজার দোভাষ গলির স্থানীয় বাসিন্দা। মা-বাবা বেঁচে নেই। বর্তমানে বড় ভাইয়ের সংসারে এবং সমাজের বোঝা হয়ে দিনযাপন করছি। আমি কারো করুণা চাই না, চাই একটু সহযোগিতা। যেন ডাল-ভাত খেয়ে সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকতে পারি। আমি উচ্চাভিলাষী কোনো স্বপ্ন দেখি না। কারণ আমাদের স্বপ্ন দেখতে নেই। নানাজন নানা কথা শুনিয়ে যায়। কিন্তু এখানে আমাদের দোষ কোথায়? সৃষ্টিকর্তা আমাদের শারীরিক প্রতিবন্ধী করেছেন। আমরা কেন সমাজের বোঝা হবো? আমরাও তো পারি কাজ করে খেতে। কিন্তু কাজের চেষ্টা করলেও আমাদের কেউ কাজ দেয় না।’

জসিম আরো বলেন, ‘চেয়েছিলাম সিটি করপোরেশনের অধীনে ছোট একটা দোকানের ব্যবস্থা করতে। কিন্তু তা আর হলো কই? হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী শারীরিক প্রতিবন্ধীর জীবন কত কষ্টের তা একমাত্র আমি জানি। বাবার রেখে যাওয়া সামান্য টাকায় এখন কোনো মতে চলছে। এভাবে বসে বসে খেয়ে কতদিন চলতে পারবো জানি না। সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছে একটাই অনুরোধ, আমরাও মানুষ। সবার মতো স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারি না, কিন্তু আমাদেরও আত্মসম্মান আছে। কারো করুণা নিয়ে বাঁচতে চাই না। আমাকে কাজ দিন। কাজ করে বাঁচতে চাই। প্রমাণ করতে চাই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কাজের জন্য বাধা নয়। দৃঢ় সংকল্প থাকলে সবই সম্ভব।’

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়