ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ভারতের প্রথম নারী ‘সুপারস্টার’

মনিরুল হক ফিরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভারতের প্রথম নারী ‘সুপারস্টার’

বিনোদন ডেস্ক: শ্রীদেবী একটি নাম, লাখো ভক্তের বুকের গহীনে লালন করা এক প্রেয়সীর মুখ। যে মুখ কখনও পুরনো হয় না। যায় না হারিয়ে। তারপরও শ্রীদেবী হারিয়ে গেলেন চিরতরে জীবনের নিয়মে। রেখে গেলেন অবিস্মরণীয় কিছু চলচ্চিত্র, যেগুলোর কথা মানুষ মনে রাখবে। তিনি বেঁচে থাকবেন ভক্তের হৃদয়ে।

১৯৬৩ সালের ১৩ আগস্ট তামিলনারুর শিভাকাশিতে শ্রীদেবীর জন্ম। তখন নাম ছিল শ্রী আম্মা ইয়াঙ্গার। মা রাজেশ্বরী ছিলেন তামিল এবং পিতা আয়ুপপান ছিলেন তেলেগুর অধিবাসী। পেশায় তিনি উকিল ছিলেন। পরিবারে শ্রীদেবীর এক বোন এবং দুই সৎ ভাই ছিল। শ্রীদেবীকে বলা হয় ভারতের প্রথম নারী ‘সুপারস্টার’। এর কারণও ছিল, তারও আগে মধুবালা, নার্গিস কিংবা হেমামালিনী মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি কাঁপিয়েছেন। কিন্তু তারা কেউই দক্ষিণী ছবিতে সফল হননি। শ্রীদেবী হয়েছেন। শ্রীদেবীর প্রথম সফল ছবি ‘১৬ ভায়াথিনিলে’ একটি তামিল ছবি। এটি মুক্তি পায় ১৯৭৭ সালে। তখন তার বয়স মাত্র ১৪। তিনি মুম্বাই মাত করেছেন আরো পরে। শুধু অভিনয় নয়, শ্রীদেবীর নাচ ছিল দর্শকের কাছে বিশেষ কিছু। চরিত্র বাছাইয়ে তিনি সচেতন ছিলেন। যখন ভারতজুড়ে অমিতাভের ক্রেজ তখন একমাত্র নায়িকা শ্রীদেবী যিনি চরিত্র পছন্দ না হওয়ায় অমিতাভের বিপরীতে অভিনয় না করার সাহস দেখিয়েছিলেন। এ ছাড়াও তিনিই একমাত্র অভিনেত্রী যে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের সিনেমায় অভিনয় করেছেন এবং সফল হয়েছেন।

এখানেই শেষ নয়। মাত্র ৪ বছর বয়সে শ্রীদেবীর অভিনয় জীবনের শুরু। প্রথম তামিলা সিনেমা ‘থানাইভান’। ১৯৭১ সালে ‘বুমবাটা’ সিনেমায় শিশু শ্রীদেবীর অভিনয় ব্যাপক প্রশংসিত হয়। মালায়াম এই সিনেমায় দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য তাকে কেরালার সেরা শিশুশিল্পীর পুরস্কার দেয়া হয়। শিশুশিল্পী হিসেবে কেবল দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমাতেই তিনি অভিনয় করেননি। হিন্দি সিনেমা ‘জুলি’তেও তাকে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করতে দেখা গেছে। সেসময় বিখ্যাত পরিচালক কে বালা চন্দন শ্রীদেবীর জীবন বদলে দেন। তিনি শ্রীদেবীকে ‘মুনড্রু মোরিচু’ সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। ভেবে দেখুন কিশোরী শ্রীদেবীর বিপরীতে এই সিনেমায় নায়ক কমল হাসান এবং রজনীকান্ত। দুজনই তখন সুপার স্টার। কমল হাসানের সঙ্গে শ্রীদেবীর ‘সাদমা’র কথা কে ভুলতে পারে?

১৯৭৮ সালে হিন্দি সিনেমার নায়িকা হিসেবে শ্রীদেবীর অভিষেক হয়। ১৯৮৩ সালে অভিনেতা জিতেন্দ্রর সঙ্গে শ্রীদেবীর ‘হিম্মতওয়ালা’ বক্স অফিসে ঝড় তোলে। এরপর ‘মাওয়ালি’, ‘তোফা’, ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’, ‘চালবাজ’, ‘লামহে’ প্রতিটি সিনেমার সঙ্গে তার অভিনয়ের পরিপক্কতা আসতে থাকে। শ্রীদেবী সব ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। গ্লামারাস নায়িকা হিসেবে তিনি যেমন অভিনয় করেছেন, তেমনি মেকআপ ছাড়া চরিত্রেও অভিনয় করেছেন। এমন একটা সময়ও আসে যখন শ্রীদেবীর সম-মানে অবস্থান করার মতো দ্বিতীয় কোনো অভিনেত্রী ছিল না। ফলে ট্রেনের গতিতে সামনে দিকে ছুটতে থাকে তার ক্যারিয়ার। সফল নায়করাও তার সঙ্গে অভিনয় করার জন্য মুখিয়ে থাকত। অনিল কাপুর হোক, কিংবা অমিতাভ বচ্চন, কমল হাসান হোক কিংবা রজনীকান্ত, জিতেন্দ্র হোক কিংবা মিঠুন-সকলের সঙ্গে শ্রীদেবীর জুটি রেকর্ডের পর রেকর্ড সৃষ্টি করতে থাকে।

এরপর তার জীবনে এমন একটি পরিবর্তন আসে, যা সকল নারীর জীবনে আসে। ১৯৯৬ সালে শ্রীদেবী বিয়ে করেন। খ্যাতনামা প্রযোজক বনি কাপুরের সঙ্গে সাত পাঁকে বাধা পড়েন শ্রীদেবী। কিন্তু বনি কাপুর বিবাহিত ছিলেন এবং সংসারে বাচ্চাও ছিল। বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াটা শ্রীদেবীর জন্য কঠিন ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়। বনি কাপুর তার প্রথম স্ত্রী থেকে আলাদা হন এবং শ্রীদেবীর সঙ্গে দ্বিতীয় সংসার সাজান। এ সূত্রে শ্রীদেবী অর্জুন কাপুরের সৎ মা। বনি কাপুরের সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আগে অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল শ্রীদেবীর।

পড়ুন : মিঠুন–শ্রীদেবীর প্রেমে বাধা ছিলেন কে?

বিয়ের পর শ্রীদেবী সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি থেকে দূরে চলে যান। তিনি দুই কন্যা সন্তানের জননী। তার বড় মেয়ে জানভি এবং ছোট মেয়ে খুশি। প্রায় ৬ বছর রূপালি পর্দা থেকে দূরে থাকার পর শ্রীদেবী অভিনয়ে ফেরেন। তবে সিনেমা হলে নয় বরং ঘরের টিভি স্ক্রিনে তাকে দেখা যায়। ২০০৪ সালে তার অভিনীত টিভি সিরিয়ালটির নাম ছিল ‘মালিনি আইয়ার’। পরবর্তী সময়ে রিয়েলিটি শোতেও তাকে বিচারক হিসেবে দেখা যায়। খুব বেশিদিন তিনি সিনেমা থেকে দূরে থাকতে পারেননি। কয়েক বছর প্রতীক্ষার পর ২০১১ সালে ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ সিনেমার মাধ্যমে শ্রীদেবীকে দ্বিতীয়বার দেখা যায়। এতে তিনি প্রমাণ করে দেন যে, কেন তাকে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে জবরদস্ত অভিনেত্রী হিসেবে মানা হয়ে থাকে।

শ্রীদেবী বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার পুরস্কারের তালিকা অনেক লম্বা। শ্রীদেবী হাতেগোনা সেসব অভিনেত্রীদের একজন যিনি ভারতের সাদাকালো সময়ের সিনেমায় কাজ করেছেন, শিশুশিল্পী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছন এবং বিভিন্ন ভাষার সিনেমায় অভিনয় করেছেন এবং সবক্ষেত্রে সফল হয়েছেন। এ জন্যই তিনি সুপারস্টার। ভারতের সিনেমা ইতিহাসে শ্রীদেবীর নাম গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হবে।

পড়ুন :



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়