ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আইয়ুব বাচ্চুর নামের ভুল বানানে গভীর শ্রদ্ধা

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৪, ৫ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আইয়ুব বাচ্চুর নামের ভুল বানানে গভীর শ্রদ্ধা

রাহাত সাইফুল : বিশ্বে ভাষার ভিন্নতা রয়েছে। আবার একই ভাষার হলেও আঞ্চলিকতার কারণে উচ্চারণে ভিন্নতা থাকে। তবে নাম লেখার ক্ষেত্রে ব্যক্তি যেভাবে লিখে থাকেন সেটি গুরুত্ব পায়। সেক্ষেত্রে উচ্চারণে কিছু পার্থক্য সহনীয় এবং গ্রহণযোগ্য। কিন্তু বাস্তবতা হলো- এই নাম, বিশেষ করে শোবিজ অঙ্গনের তারকাদের নাম লেখার ক্ষেত্রে বারবার বিকৃত করে প্রকাশ করছে ওপার বাংলার গণমাধ্যম। ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের নামও তারা বিকৃত করে ব্যবহার করছেন। এ থেকে বাদ পরছেন না দুই বাংলাতেই জনপ্রিয় এমন শিল্পীরাও।

ওপার বাংলার কিংবদন্তি কিংবা শিল্পীদের যে কোনো খবর এদেশের সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু সাধারণত ওপার বাংলায় বাংলাদেশের শিল্পীদের সংবাদ একই রকম গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করতে দেখা যায় না- এমন অভিযোগ অনেক দিনের। সংবাদ প্রকাশ করলেও দেখা যায়, শিল্পীর নামের বানান সেখানে ভুল লেখা হয়েছে। এটা কি তাদের ইচ্ছাকৃত ভুল না কি গুরত্বহীনতা? এমন প্রশ্ন অনেকেই তুলেছেন।

গত ১৮ অক্টোবর কিংবদন্তি ব্যান্ডশিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর আকস্মিক মৃত্যুতে দেশজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। গতকাল ৪ নভেম্বর ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল জি বাংলার সংগীত বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে আইয়ুব বাচ্চুকে স্মরণ করে তার মৃত্যুতে গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়। বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই। তবে এ সময় টেলিভিশনের পর্দায় আইয়ুব বাচ্চুর নাম দেখানো হয় ‘আয়ুব বাচ্চু’। নামের এমন বানান নিয়ে আপত্তি তুলেছেন এপার বাংলার অনেকে। কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় এর প্রতিবাদ করে পোস্ট দিয়েছেন। আইয়ুব বাচ্চুর অসংখ্য ভক্ত ও অনুরাগী ওপার বাংলায় রয়েছেন। জীবদ্দশায় সেখানে তিনি অসংখ্য কনসার্টে অংশ নিয়েছেন। এছাড়া অনলাইনে মাউসের এক ক্লিকেই আইয়ুব বাচ্চুর নামের সঠিক বানান খুঁজে পাওয়া কষ্টকর নয়। তারপরও গণমাধ্যমে এ কেমন ভুল?

সাংবাদিক, চলচ্চিত্র বিষয়ক অধ্যাপক অনুপম হায়াৎ বলেন, ‘অঞ্চলগতভাবে এক এক অঞ্চলে লোকাল কিছু উচ্চারণ আছে। তাজউদ্দীন আহমদকে তারা (ভারত) সবসময় ‘তাজউদ্দীন আমেদ’ লিখতো। তারা উচ্চারণ যেভাবে করে সেভাবেই লিখে থাকে। এখন দেখতে হবে যার নাম তিনি কীভাবে লিখছেন। সেভাবেই লেখা উচিৎ।’ এ প্রসঙ্গে গল্পকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা ছটকু আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এই বিষয়টি নিয়ে অনেকবার আপত্তি করা হয়েছে। ওরা বাংলা বানানটাকে ভেঙে ভেঙে লেখে। আমি মনে করি এটা অবহেলা। নামের বানান ভুল অবশ্যই অসন্মানজনক। আমি যখন সিনেমা করতে ওখানে (ভারত) গিয়েছি তখনও দেখেছি ওরা ওদের মতো করেই লিখছে।’ নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘এই বিষয়গুলো নিয়ে এর আগে অনেক বলেছি। ফেসবুকে লেখালেখি করেছি। এজন্য নতুন করে আর বলতে চাই না। এবার অন্যরা বলুক।’

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক, প্রাবন্ধিক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘নামের বানান অন্যভাবে লেখা ভুল তো বটেই। ইচ্ছাকৃত বিষয়ও আছে। হিন্দু কমিউনিটির নাম সাধারণত সংস্কৃত শব্দ থেকে হয়। সংস্কৃত শব্দ থেকে যুক্ত বাংলা শব্দ হয়। ফলে এর একটা ব্যাকরণগত বিষয় আছে। কিন্তু বাঙালি মুসলমানের নাম সাধারণত আরবি বা ফার্সি তদ্ভব। ফলে এর বানান বাংলা ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী সাধারণত করা যায় না। যার নাম তিনি যেভাবে লিখবেন সাধারণত সেভাবেই লিখতে হয়। প্রায় একশ বছর ধরে এই বিষয়টিতে কম মনোযোগী তারা। সারা পৃথিবীতেই রেওয়াজ হলো নাম যথার্থভাবে লিখতে হয়। তারা সেই ব্যাপারে কম মনোযোগ দিচ্ছে বলে গত একশ বছর দেখে আসছি। আমাদের লেখকদের প্রচুর আপত্তি সত্ত্বেও তারা মনোযোগ দিতে পারেনি। ফলে একটা সিদ্ধান্তে আমরা আসতে পারি, এর মধ্যে উন্নাসিকতার একটা ব্যাপার আছে। এই সমস্যাটা ব্যাকরণগতভাবে সমাধান করার মতো নয়।’

মোহাম্মদ আজম আরো বলেন, ‘আইয়ুব বাচ্চুর নাম ভুল করা একেবারেই অপরাধ। কারণ আমাদের এখানে আইয়ুব বাচ্চুর নাম কোটি কোটি বার লেখা হয়েছে। অনলাইনে সার্চ দিলেই পাওয়া যাবে। এটা একেবারেই ক্ষমা করা যায় না। ওরা নিশ্চয়ই পশ্চিমের কোনো নাম এভাবে লেখে না। সেটা মূলের সঙ্গে মিলিয়ে লেখে।’     

ওপার বাংলায় নামের বানান ভুল নতুন কিছু নয়। কিংবদন্তী শিল্পী নায়ক রাজরাজ্জাক দুই বাংলায় সমানভাবে জনপ্রিয় ছিলেন। দুই বাংলার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। কিন্তু তার নামের বানানও কলকাতার শীর্ষস্থানীয় পত্রিকাগুলো ‘রেজ্জাক’ লিখেছে। সর্বশেষ তার মৃত্যুর সংবাদটিও এই নামে প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া কবরীর নাম ‘করবী’ লিখতে দেখা গেছে।  বর্তমানে জয়া আহসান দুই বাংলায় অভিনয় করছেন। কলকাতার সংবাদ মাধ্যমে তার নাম লেখা হচ্ছে ‘জয়া এহসান’। এই অভিনেত্রী কলকাতায় বেশ কয়েকটি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। শোনা যায় এ নিয়ে তিনি একাধিকবার প্রতিবাদ করেও কোনো ফল পাননি। এছাড়া চিত্রনায়ক ফেরদৌসের নাম কলকাতায় লেখা হতো ‘ফিরদাউস’। অনেক আপত্তির পরে তার নাম সংশোধন করা হয়েছে বলে জানান ফেরদৌস। শমী কায়সারের নাম লেখা হয় ‘শোমি কায়সার’। এমন আরো কিছু শিল্পীদের নাম ভুল বানানে লেখা হচ্ছে যা লজ্জাজনক ও বিব্রতকর। এ নিয়ে জোড় প্রতিবাদ করা উচিৎ বলে মনে করছেন অনেকেই।



রাইজিংবিডি/৫ নভেম্বর ২০১৮/রাহাত/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়