ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আমি বড় দুঃখ পেয়েছি : ফারুক

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১৬, ২ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আমি বড় দুঃখ পেয়েছি : ফারুক

আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক)

রাহাত সাইফুল : চিত্রনায়ক, পরিচালক, প্রযোজক- একাধিক পরিচয়ে পরিচিত তিনি। সব ছাপিয়ে ভক্তদের কাছে ‘মিয়া ভাই’ হিসেবে পরিচিত। বলছি- নায়ক ফারুকের কথা। তার আরেকটি পরিচয় তিনি রাজনৈতিক নেতা। স্কুল জীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহভাজন ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন।

শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শকের মন জয় করেছেন। এখন তিনি মাঠে নেমেছেন ভোটারের মন জয় করতে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ঢাকা-১৭ (গুলশান-বনানী) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আকবর হোসেন পাঠান (চিত্রনায়ক ফারুক)। কিন্তু এরই মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে ঢাকা ১৭ থেকে মনোনয়ন পাচ্ছেন না ফারুক। নির্বাচন ‍ও রাজনৈতিক নানা বিষয়ে রাইজিংবিডির এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেছেন ফারুক। এ আলাপচারিতার চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

রাহাত সাইফুল : ঢাকা-১৭ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। একই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আরো একজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এরই মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে আপনি চূড়ান্ত মনোনয়ন পাচ্ছেন না। এ গুঞ্জনের সত্যতা জানতে চাই।

আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) : (অট্টহাসি) নিজেকে একটা মজার মানুষ মনে হচ্ছে। আমার জীবনটাই এমন। আমি কখনো এই ধরণের ধুম্রজাল থেকে বের হতে পারলাম না। নির্বাচনের আগেই যে প্রচারণা শুরু হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে নির্বাচন করতে পয়সাকড়ি লাগবেই না। আমি এ আসন থেকে নির্বাচন করব না তো কোথা থেকে করব? আমাকে দেয়া হয়েছে ঢাকা-১৭ আসন। আর এ আসনেই নমিনেশন পেপার সাবমিট করেছি। এরই মধ্যে ব্যাংকের সব ঝামেলা ক্লিয়ার করেছি। এখন কী হলো ভাই? আমি তো বুঝতে পারলাম না। দল থেকে আমাকে শুধু একটি কথাই বলা হয়েছে-এই আসনে তুমি নির্বাচন করবে।

রাহাত সাইফুল : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনাকে নিয়ে সম্প্রতি একটি বিতর্ক উঠেছে। আপনি ধর্ম নিয়ে নাকি মন্তব্য করেছেন। আসলে বিষয়টি কী?

আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) : ধর্ম নিয়ে আমি কিছু বলেছি এই ধরণের প্রমাণ পৃথিবীর কেউ দেখাতে পারবে না। কারণ আমি পাগল হয়ে যাইনি। আমার বংশ কি? আমার বংশ পীর বংশ। আমি, আমার স্ত্রী, আমার ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে হজ করেছি। অনেকেই মনে করেন, ফিল্মের মানুষ মানেই খারাপ। ফিল্মের মধ্যে ভালো মানুষের বাস আছে এটা অনেকেই জানেন না। জানতেও চান না। আসলে রাজনৈতিকভাবে অপদস্থ করার জন্য এই বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে। এটা কিছুই না। কখনই আমি এ ধরণের কথা বলিনি।

আমার দাদা মসজিদের জন্য ত্রিশ বিঘা জায়গা দিয়ে গেছেন। এই মসজিদের মুতল্লী আমি। আমাদের ওখানে একটা মাদ্রাসা আছে যেটা আমাদের টাকায় তৈরি। ২৬ জন এতিম বাচ্চা নিয়ে এই মাদ্রাসার যাত্রা শুরু হয়। আমার বাবা তখন বলেছিলেন-এই সংসার তোমার। সেই সংসারেরও হাল আমি ধরেছি। প্রতি বছর রোজার মাসে দরিদ্র মানুষদের কাপড় দিই। একটি কাপড়ও আমি আমার নিজের মানুষদের দিই না। কোরবানির সময় আমার পূর্ব পুরুষরা যা করে আসছেন আমিও তাই করে আসছি। যে কটা গরু কোরবানি দিই তা থেকে এক টুকরা মাংস নিজের জন্য নেই না। আমি হলাম সেই মানুষ।

এ দেশের ক্ষুধার্ত মানুষ ও মাটির জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছি। মুক্তিযুদ্ধ কেন করা হয়েছে? তখন চাকরির জন্য গেলে চাকরি দেয়া হতো না, শিক্ষার জন্য গেলে ভর্তি করানো হতো না, এ দেশের মানুষকে শিল্প চর্চা করতে দেয়া হতো না, এ দেশের মানুষকে মন্ত্রীত্ব  দেয়া হতো না, এ দেশের মানুষকে অফিসার বানানো হতো না। এই যে পরাধীনতার শিকল গলায় পরিয়ে দেয়া হয়েছিল, সেখান থেকে বিসমিল্লাহির রহমানের রাহিম বলে আমরা যুদ্ধ শুরু করেছিলাম। আর তারাই একটা নির্বাচনকে ঘিরে যে মনোভাব দেখিয়েছে, তাতে আমি বড় দুঃখ পেয়েছি। যারা এই ধরণের প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছেন আপনাদের বিচার আল্লাহ করবেন। দেশের আইনের কাছেও বিচার দিলাম। যারা মিথ্যাচার করছেন তাদের কাছে অনুরোধ, এই মিথ্যাচার আর করবেন না। আসুন পৃথিবীতে ভালোবাসা ছড়িয়ে দিই। দেখবেন কত শান্তি, কত সুখ। এটা সত্যের পৃথিবী, আমি সত্যের কথা বলি।

রাহাত সাইফুল : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহচর্য পেয়েছেন। রাজনীতির সঙ্গে অনেক আগে থেকেই সম্পৃক্ত। কিন্তু এতদিন পর কেন নির্বাচনে অংশ নিতে চাচ্ছেন?

আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) : এতগুলো বছর পর-যেটা দেখলাম না তা নিয়ে আমার কথা বলা দরকার। কেন জানি মনে হলো-দেশের জন্য, মানুষের জন্য এত কিছু করছেন কিন্তু কেউ খুলে বলেন না। স্বাধীনতার পর এত অর্জন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। অন্য কেউ এসব অর্জন এনে দিতে পারেননি। কিন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই যুদ্ধকে জয় করেছেন। বিশ্ব ব্যাংককে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে পদ্মা সেতু করছেন। ফোর লেন রাস্তা তৈরি করেছেন। ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য ভাতের ব্যবস্থা করেছেন। এমনকি শরনার্থী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন-আমরা এক বেলা খেয়ে ওদের বাঁচাব। এমন একজন মানুষের পেছনে থাকতে চাই, একটু আড়ালে থাকতে পারলেও নিজেকে ধন্য মনে করব। আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও হাসিনা ছাড়া কিছু বুঝি না। আমি দেখেছি, তাদের মধ্যে সত্য, সুন্দর মানবতা আছে। এ কারণেই এবার নির্বাচন করার জন্য গাজীপুর-৫ আসন থেকে নমিনেশন পেপার সাবমিট করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের আপা মনে করছেন, তোমার জায়গা ওখানে না বরং তোমার জায়গা ঢাকা-১৭। আমি মাথা নত করে সেটা গ্রহণ করেছি। কিন্তু এর পেছনে এত লোক কেন লেগেছে? পদে পদে মানুষ কথা বলছে! মানুষের সমস্যা থাকতেই পারে। ভুল বোঝাবুঝির কারণে ব্যাংকে সমস্যা হয়েছিল, তা সমাধান হয়ে গেছে। আমার ইনকাম ট্যাক্স ক্লিয়ার আছে। আমার সব ঠিক আছে। কেন আমি নির্বাচন করতে পারব না? তার কারণ কী?

রাহাত সাইফুল : আপনাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত যদি দল থেকে নেওয়া হয়, তবে আপনার করণীয় কী বলে মনে করছেন?

আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) : আশা করছি, এমন কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। তার পরও যদি আসে সেটা আল্লাহ বলে দিবেন। এখনই কিছু ভাবছি না।

রাহাত সাইফুল : নির্বাচিত হওয়ার পর আপনার প্রথম কাজ কী হবে?

আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) : যে এলাকা থেকে নির্বাচিত হবো প্রথমে সেই এলাকার প্রধান সমস্যা সমাধানে হাত দিব। এর পর পর্যায়ক্রমে বাকি কাজগুলা করে যাব। আমি আমার নেত্রীকে বলব-এই কাজগুলো আমার করা দরকার। সে জন্য আপনার সহযোগিতা চাই।

রাহাত সাইফুল : নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন দল বিভিন্ন রকম মন্তব্য করছেন। বিশেষ করে বিএনপি সুস্থ নির্বাচন নিয়ে আশংকার কথা বলছেন। এ ক্ষেত্রে আপনার মন্তব্য জানতে চাই।

আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) : বিএনপির কথা বলে লাভ নেই। তারা অনেক কথাই বলবে। বিএনপি কি করেছেন তা দেশের মানুষ জানেন। বিএনপির রাজনীতি ছিল হত্যার রাজনীতি। তারা চায়, যে কোনভাবে ক্ষমতায় আসতে। আর ভাবছে, দুই লাখ মানুষকে হত্যা করলেই সব ঠান্ডা হয়ে যাবে। এই ধরণের মন মানসিকতা যাদের থাকে তাদের বলব-এগুলো পরিহার করুন। রাজনীতিতে হত্যা চলে না। রাজনীতির আরেক নাম ভালোবাসা। ভালোবাসতে শিখুন, ভালোবাসলে যে কোনো কিছুই জয় লাভ করতে পারবেন। আসলে তারা এ ধরণের কথা বলেই থাকেন এবং বলবেন। তাদের গলার ফুলের মালার মধ্যে যে গন্ধ পাওয়া যায়-সে গন্ধ ’৭৫ সালের ১৫ আগস্টের। এ গন্ধে তাদের সম্পৃক্ততা ছিল, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে তারা যুক্ত। কারণ তারা তখন সরকারে ছিল।

শেখ হাসিনা সরকার এ দেশকে সোনার বাংলা বানাতে চায়। যে বাংলাদেশ দেখে মানুষ বলবে-৩০ লাখ মুক্তিযোদ্ধার রক্ত সোনার বাংলায় ছড়িয়ে আছে। এই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতেই হবে। শেখ হাসিনা সরকার বার বার দরকার।

রাহাত সাইফুল : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) : আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ ডিসেম্বর ২০১৮/রাহাত/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়