ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

গাঁজা মহলে একদিন

সিয়াম সারোয়ার জামিল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৮, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গাঁজা মহলে একদিন

সিয়াম সারোয়ার জামিল : ‘গাঁজা মহলে যাবি?’ নাস্তার টেবিলে ধ্রুব’র কথা শুনে চমকে গেলাম! পাল্টা প্রশ্ন করলাম- ‘গাঁজা মহল?’

‘হ্যাঁ। গাঁজার গোলাও বলে লোকে।’

‘বলিস কী! সবাই এখানে গাঁজা খায়?’ এই অধমের বোকা প্রশ্ন শুনে হেসে ফেললো ও।

‘আরে না, চাষ হতো একসময়। বেশি দূরে না। পাশেই। চল, ঘুরে আসি।’

 



জ্যামনগরী ঢাকা থেকে মুক্তি পেতে রাতের গাড়িতে উঠে ভোরে নেমেছি নওগাঁ। কয়েকদিন নওগাঁর প্রাণ-প্রকৃতির সঙ্গে থাকবো, এমন পরিকল্পনায় আসা। দেখবো নওগাঁর ঐতিহাসিক জায়গাগুলো। তবে শুরুতেই গাঁজা মহলে যাব- এমনটা ভাবিনি। ধ্রুব’র বাইক নিয়ে বের হলাম। খানিক পথ এগোতেই যমুনার কোল ঘেঁষে থাকা গাঁজা মহলে ঢুকে পড়লাম। সুনসান, নীরব। যেন রাজ্যের নীরবতা। ধ্রুব’র কাছে জানলাম, প্রাচীনকালে এটাই ছিল গাঁজার গুদামঘর। সেই ঘর ‘গাঁজা মহল’ নামে এলাকায় পরিচিত। চোখে পড়লো ভারতের রাইটার্স বিল্ডিংয়ের আদলে নির্মিত লাল রঙের মহল। গোলা থাকলেও গাঁজা নেই। আছে গাঁজার ভুসি পোড়ানো চুল্লি। বয়সের ভারে এতটাই সঙিন অবস্থা, যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে চুল্লিটা।

মানুষের সমাগম খুব বেশি না হলেও স্থানীয়রা যাতায়াত করতে পারেন। এখন সরকারি কিছু কাজে গাঁজার গোলার কয়েকটি ঘর ব্যবহৃত হয়। মহল এলাকায় আছে সবুজের সমারোহ। চোখ বন্ধ করলেই অন্যরকম অনুভূতি মেলে। যেন মুহূর্তেই চলে গেছি শতবর্ষ পেছনের ব্যস্ত কোলাহলে। ঘুরতে আর গল্প করতে করতে কখন যে দুটো ঘণ্টা কেটে গেছে খেয়াল হয়নি। ধ্রুব’র মায়ের ফোনে টনক নড়লো। তাড়া দিলো ও। পেট চোঁ চোঁ করছে। বাসায় একগাদা খাবার রেঁধে খালাম্মা অপেক্ষা করছেন আমাদের জন্য। বাইকে বাড়ির পথে ছুটলাম দুজন।

 



গাঁজা মহলের ইতিহাস: ব্রিটিশ প্রশাসনের সিদ্ধান্তে ১৯০৫ সালে গড়ে তোলা হয় গাঁজা মহল। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বাণিজ্যিকভাবে গাঁজা চাষ শুরু হয় নওগাঁয়। ১৯২১ সালে তৎকালীন বাংলা সরকারের মন্ত্রী সৈয়দ নবাব আলী চৌধুরী এই গুদামটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। সেই সময় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমি ছিল গাঁজা চাষের আওতাভুক্ত। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন প্রায় ৭ হাজার চাষী। ১৯১৭ সালে গাঁজা চাষীদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে গড়ে তোলা হয় গাঁজা উৎপাদনকারী পুনর্বাসন সমবায় সমিতি লিমিটেড। সে সময় ১০ টাকায় একটি করে শেয়ার সার্টিফিকেট কিনতে হয়েছে চাষীদের। সব মিলিয়ে গাঁজা সোসাইটির অধীনে আছে ২৭টি বাড়ি, ৯টি জলাশয়, ১০টি মার্কেট ও ১টি হিমাগারসহ প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ। সম্পদগুলোর বেশকিছু এখন বেদখল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও ছিল গাঁজা মহলের কার্যক্রম। তবে জেনেভা কনভেনশনে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকার গাঁজা উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণন বন্ধ রাখার চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ফলে ১৯৮৭ সাল থেকে বন্ধ হয়ে যায় নওগাঁর গাঁজা চাষ।

যেখানে থাকবেন: নওগাঁতে সরকারি ডাক বাংলো আছে। সেখানে থাকা যেতে পারে। ভাড়া খুবই অল্প। এছাড়াও শহরে বেশ কয়েকটি হোটেল আছে। সেখানেও অবস্থান নিরাপদ। তবে সেগুলোর ভাড়া ডাক বাংলোর চেয়ে বেশি।

 



যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে নওগাঁর বাসে উঠবেন। ৬-৭ ঘণ্টায় পৌছে যাবেন নওগাঁ। ভাড়া পরিবহন ভেদে সাড়ে চারশ থেকে ছয়শ টাকা। নওগাঁর ঢাকা বাসস্ট্যান্ড থেকে ১৫-২০ টাকা রিকশা ভাড়ায় পৌঁছে যাবেন গাঁজার গোলায়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়