ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সেদিন ময়ুরপঙ্খীতে যা ঘটেছিল

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ২৩ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সেদিন ময়ুরপঙ্খীতে যা ঘটেছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : ঢাকা থেকে ময়ুরপঙ্খী চট্টগ্রামে উড়াল দেয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই বিমানের ১৭ নম্বর আসনের যাত্রী পলাশ নিজের আসন ছেড়ে সামনের দিকে একটি আসনে গিয়ে বসেন।

বিষয়টি খেয়াল করে দায়িত্বরত একজন কেবিন ক্রু পলাশের কাছে গিয়ে নির্ধারিত আসনে গিয়ে বসার অনুরোধ করেন। এর পর পরই উত্তেজিত হয়ে অস্ত্র বের করেন পলাশ।

ক্রুর মাথায় অস্ত্র তাক করে ককপিটের দরোজা খুলে দিতে চাপ সৃষ্টি করেন। বিষয়টি সাঙ্কেতিক ভাষা ব্যবহার করে ককপিটে থাকা পাইলটকে অবহিত করেন অপরএকজন কেবিন ক্রু।

বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট ময়ুরপঙ্খী ছিনতাই চেষ্টার ঘটনায় তদন্তকারী সংস্থার কাছে সাক্ষ্যে এসব তথ্য জানিয়েছে ওই বিমানের পাইলট ও ক্রুরা।

ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে থাকা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কাছে সাক্ষ্য প্রদান করেন তারা। গত বুধবার এই জবানবন্দি গ্রহণ করা হলেও গণমাধ্যমকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি জানানো হয়নি।

বিমান ছিনতাই চেষ্টা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া জানান, গত বুধবার (২০ মার্চ) ময়ুরপঙ্খী বিমানের পাইলট, ফার্স্ট অফিসার ও চারজন কেবিন ক্রু চট্টগ্রামে এসে তাদের জবানবন্দি দিয়েছেন।

তদন্তের স্বার্থে তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। তাদের কাছ বিমানের ভিতরে কি ঘটেছিলো তার বিস্তারিত চিত্র পাওয়া গেছে।

প্রসঙ্গতঃ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাইগামী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয়। বিমানটি চট্টগ্রাম শাহ আমান্ত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরনের পর সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী পলাশ নিহত এবং বিমানটি জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্ত করা হয়।

এই ঘঁনায় দায়ের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দি প্রদান করেন- পাইলট গোলাম শফী, ফার্স্ট অফিসার মুনতাসির মাহবুব এবং চার কেবিন ক্রু শফিকা নাসিম, হোসনে আরা, শরিফা বেগম ও আব্দুস শুকুর মোজাহিদ।

জবানবন্দিতে তারা জানান, বিমানের যাত্রী পলাশ আহমেদ ১৭-ডি নম্বর আসনে বসা ছিলেন। উড্ডয়নের আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর পলাশ তার নির্ধারিত আসন থেকে উঠে সামনের একটি আসনে গিয়ে বসেন।

সিনিয়র কেবিন ক্রু শফিকা নাসিম বিষয়টি লক্ষ্য করেন। তিনি জুনিয়র ক্রু হোসনে আরাকে নির্দেশ দেন পলাশকে যেন তার নির্ধারিত আসনে বসিয়ে দেওয়া হয়।

হোসনে আরা পলাশের কাছে গিয়ে নির্ধারিত আসনে বসার অনুরোধ করার সঙ্গে সঙ্গেই উত্তেজিত হন পলাশ। ডান হাতে পকেট থেকে পিস্তল বের করে হোসনে আরার মাথায় ধরে বলেন, ককপিটের দরজা খুলতে বলেন। আমি পাইলটের সঙ্গে কথা বলব।

এ সময় পলাশ অস্থিরভাবে পায়চারি শুরু করেন। কেবিন ক্রু শফিকা নাসিম একটি গোপন কোড ব্যবহার করে ককপিটে পাইলট ও ফার্স্ট অফিসারকে বিষয়টি জানান।

পাইলট ও ফার্স্ট অফিসার লাইভ স্ক্রিন অন করে সেখানে পলাশের গতিবিধি দেখতে পান। পলাশের ডান হাতে পিস্তল এবং বাম হাতে বিস্ফোরক সদৃশ বস্তু দেখা যায়। সাথে সাথে এই ঘটনা শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে জানানো হয়।

যাত্রীদের রক্ষায় একই সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিমানবন্দরের নিরাপত্তা টিমসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য পাইলট অনুরোধ করেন ককপিট থেকে।

এর পর পরই চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাবতীয় নিরাপত্তা প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। বিমান অবতরনের পর যাত্রীদের নামিয়ে এনে পরিচালনা করা হয় কমান্ডো অভিযান।

এদিকে এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত সর্বমোট নয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং বিমান ছিনতাইকারী নিহত পলাশের সাবেক স্ত্রী চিত্রনায়িকা শিমলাকেও এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের তদন্ত কর্মকর্তা।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/২৩ মার্চ ২০১৯/রেজাউল/এনএ   

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়