ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

হাওরের পাখি সংঘবদ্ধ চক্রের নিশানায়

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হাওরের পাখি সংঘবদ্ধ চক্রের নিশানায়

বিক্রির পর জবাই করে রাখা কয়েকটি পাখি

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ : হাওর আর পাহাড় অধ্যুষিত জেলা হবিগঞ্জ। খাবার ও আশ্রয়ের সুবিধা থাকায় পাখির কলতানে মুখর এখানের প্রকৃতি। আর সে সুযোগটি নিয়েই পাখিনিধনে এখানে সংঘবদ্ধ চক্র তৎপর।

এখানের বিশাল হাওর বিল নদীনালাজুড়ে নানা প্রজাতির মাছ, অন্যদিকে পাহাড়ে রয়েছে নানা ফলফলাদির গাছ। দিনে হাওরে খেয়ে রাতে পাহাড়ি গাছে আশ্রয় নেয় পাখির দল। এ সময়ই পাখিদের আশ্রয়স্থলে হানা দেয় সংঘবদ্ধ চক্র।

এসব পাখি নিধনে পরিবেশ হুমকির মধ্যে পড়ছে। কিন্তু নিধনকারীরা এসব মানতে রাজি নয়। তারা সময় ও সুযোগ বুঝে পাখি শিকার করে আকর্ষণীয় মূল্যে বিক্রি করছে। এদিকে পাখি রক্ষায় তেমন কেউ এগিয়েও আসছেন না। বরং একশ্রেণির  লোকজন উৎসাহের সঙ্গেই পাখি ক্রয় করছে।

হবিগঞ্জের হাওরে ১২ মাসই পাখিদের দেখা মেলে। তবে শীতকালেই পাখির বিচরণ বৃদ্ধি পায়। জেলার বিভিন্ন লেক ও বিল অতিথি পাখির কলরবে মুখর থাকে। শীত ফুরিয়ে এলেও হবিগঞ্জের হাওর-বাঁওড়ে অতিথি পাখিদের অবস্থান রয়েছে এখনো। যে দিকেই চোখ যায়, পাখিদের ওড়াউড়ি-ছোটাছুটি। আর সে সুযোগটিই লুফে নিচ্ছে শিকারিরা। বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ, বিষটোপ, নেশাজাতীয় ট্যাবলেট ব্যবহার এবং এয়ারগান দিয়ে অবাধে শিকার করছে অসহায় পাখিদের। বলা যায়, জেলাজুড়ে হাওর আর বন-বাদাড়ে, যেখানেই পাখিদের আনাগোনা, সেখানেই অব্যাহত রয়েছে শিকারিদের হানা।

এমনকি দেশীয় বলে পরিচিত সাদা বক, হলদে কুটুম, খয়েরি ঘুঘু, বাঁশঘুঘু, ফোড়েল ঘুঘু, কুলি, ঝুটকুলি, মাছরাঙা, তোতাসহ সব ধরনের পাখিই এখন শিকারিদের টার্গেটে পরিণত হয়েছে।

পাখি বিক্রির পর জবাই করা হচ্ছে

এ জেলার দিনাপুর এলাকায় গিয়ে জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে প্রতিদিন পাখি শিকারিদের দেখা যায়। তারা জোড়ায় জোড়ায় পাখিদের পায়ে রশি বেঁধে চলন্ত গাড়ি দেখলেই সামনে ওড়াতে থাকে। আর এভাবেই ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে পাখিদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিকারি বলেন, ‘পাখির মাংসের স্বাদই আলাদা। তাই লোকজন দ্বিগুণ মূল্যেও পাখি কিনে নেয়।’

তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যা থেকে গভীর রাতে পাখি শিকার করলে কোনো ঝামেলায় পড়তে হয় না। দিনে করলে লোকজনকে ভাগ দিতে হয়। আমরা পাখি শিকার করে, অপরাধ করছি। এ পাখি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কতিপয় নেতার বাসায় নিয়ে যেতে হয়। তারা খেলে কি অপরাধ হয় না?’

এ ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ইসহাক মিয়া বলেন, ‘পাখি পরিবেশের বন্ধু। এ বন্ধুকে রক্ষা করা সবার দায়িত্ব।’

মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ বন্য প্রাণী প্রকৃৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা মিহির কুমার দো বলেন, ‘পাখি মারা দণ্ডনীয় অপরাধ। কারো বিরুদ্ধে পাখি শিকারের অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’




রাইজিংবিডি/হবিগঞ্জ/২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/মামুন চৌধুরী/টিপু/এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়