ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পরিবেশ ভালো নেই

|| রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৫, ৫ জুন ২০১৩   আপডেট: ০৮:৪৫, ১১ আগস্ট ২০২০
পরিবেশ ভালো নেই

শাহ মতিন টিপু
ঢাকা, ৫ জুন : সময়মত বৃষ্টি না হওয়া, প্রচন্ড তাপদাহ, আবার অনাবৃষ্টি, বন্যা-ঘূর্ণিঝড় প্রাকৃতিক এসব অনিয়ম আমাদের কাছে অসহনীয়। বোঝা যাচ্ছে যে আস্তে আস্তে বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে পৃথিবী। প্রকৃতিগত পরিবেশ আজ ভালো নেই।

ভালো নেই পৃথিবী । ভালো নেই মানুষ । বাসযোগ্য পৃথিবী আজো মানুষ গড়ে তুলতে পারেনি । মানুষ-সৃষ্ট কারণেই প্রকৃতি আজ বিরূপ হয়ে উঠছে। ক্রমশ তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পৃথিবী। উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্রীন হাউস এফেক্ট। যার ফলে বায়ুতে কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, মিথেনসহ অন্যান্য গ্যাসের পরিমান বেড়ে যাচ্ছে। যা গত দেড় লক্ষ বছরের চেয়ে বেশি।

আশির দশক থেকে প্রতি বছর দশমিক এক ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতই দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, হিমালয়ের হিমবাহসহ উত্তর মেরুর বরফ গলে যাচ্ছে। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্যা হচ্ছে। কোথাও কোথাও খরা দেখা দিয়েছে। সেখানে ফসল হয় না। গাছ মরে যাচ্ছে।

বর্ষা এলে পাহাড় ধস হয়ে মানুষ মরছে, ঘর-বাড়ি বিনাশ হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, তাপদাহ-শৈত্যপ্রবাহ’র মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় এখন নিয়মিত। নদীতে নদীতে বাঁধ দিয়ে ভারত জলের অসম বন্টন করছে এবং করেছে।

হয়তো অচিরেই নদী মাতৃক এ দেশ, নদীহীন হয়ে পড়বে। বর্ষা এলে হবে জলাশয়। বন্যার মতো মহাদুর্যোগে ভেসে যাবে আমাদের গ্রাম, জনপদ, মানুষ, পশু ও সম্পদ। এসব কথা আমাদের জানা। কেননা, চোখের সামনে একের পর এক পরিবর্তন ঘটছে। জলবায়ুর পরিবর্তন। বিপর্যয় নেমে আসছে ভূগোলের নানা রেখায়।

পরিবেশ দূষণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভারসাম্যপূর্ণ জীববৈচিত্রের ওপর সরাসরি ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। আর প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের সার্বিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদেরকে।

বাংলাদেশে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই আছে। অতি বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানির প্রভাবে সমুদ্রে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়া পাচ্ছে। এতে দেশের উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ গ্রাম-শহরসহ আশেপাশের কৃষি জমি জলমগ্ন হচ্ছে ।

মনে করা হয়, বাংলাদেশে পরিবেশ বিপর্যয়ের সবচেয়ে বড় ধাক্কা ১২ নভেম্বর ১৯৭০-এর প্রলয় । এটি ছিল স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত। এর নাম দেয়া হয় ‘গোর্কি’।

লন্ডভন্ড হয়ে যায় বাংলাদেশের উপকূল। সরকারী হিসাব মতে নিহত হয়েছে  ৫ লাখ মানুষ। বেসরকারী হিসেবে এর সংখ্যা ছিল ১০ লাখের বেশী। রয়টার্স বলেছিল মৃতের সংখ্যা ২২ লাখ ছাড়িয়ে যায়।

গভীর সমুদ্র থেকে উঠে আসা সেই ঘূর্ণিঝড়ের গতি শুরুতে উত্তর-পূর্ব দিকে ছিল। পরে তা দক্ষিণ-পূর্ব কোনে ধেয়ে আসে। এতেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়। সামুদ্রিক জলোচ্ছাস কোন কোন এলাকায় ৩০ ফুট ছাড়িয়ে যায়। সাথে ছিল প্রবল বৃষ্টি এবং প্রচন্ড শীত।

গোর্কির গতি ছিল পাগলা ঘোড়ার মতো। জলোচ্ছাসের তোড়ে ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যায় উপকূল। প্রায় আড়াই হাজার বর্গমাইল এলাকায় আঘাত হানে এই গোর্কি।

ভোলা, পটুয়াখালী,  বরগুনা, বরিশাল, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। উপকূলের বহু দ্বীপে খুব কম মানুষকেই পরের দিন জীবিত পাওয়া গিয়েছিল।

৭০-এর গোর্কির কথা আজো ভোলেনি উপকূলবাসী। সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনো তাড়া করে ফেরে সে সময়ে বেঁচে যাওয়া মানুষগুলোকে। অনেকেই খুঁজেও পাননি প্রিয়জনদের লাশ। এটি ছিল বাংলাদেশে পরিবেশ বিপর্যয়ের সবচেয়ে বড় আঘাত।

গবেষকদের মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে ডুবে যাবে বাংলাদেশ। এর একটি সারণী এভাবে ধারণা করে প্রকাশ করা হয়েছে। যদি পৃথিবীর ভূভাগের তাপমাত্রা ১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ে, তাহলে সমুদ্রপৃষ্ঠ ০.২৩ মিটার বেড়ে যাবে। যদি ২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ে, তাহলে সমুদ্রপৃষ্ঠ ০.৫২ মিটার বেড়ে যাবে।

বিজ্ঞানিদের মতে জ্বালানী তেলের বিকল্প সন্ধান করতে হবে, জীবনযাত্রা পরিবর্তন করতে হবে। নইলে পৃথিবীর ভূভাগের তাপমাত্রা মারাত্মক বেড়ে যাবে। হয়তো তা ৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে।

যা আগামী একশ বছরে সমুদ্রপৃষ্ঠ ২ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। এতে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ প্রায় ১০০০ বর্গকিলোমিটার কৃষিজমি পানির নিচে চলে যাবে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে। উদ্বাস্তুর সংখ্যা বেড়ে যাবে। পরিবেশ উদ্বাস্তু।

ইতোমধ্যে মালদ্বীপ রাষ্ট্রটি তলিয়ে যাবার আশংকায় অন্য দেশে জমি কেনার মতো ভাবনাও তৈরি হয়েছে। এ ধরনের দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

ইতোমধ্যে কক্সবাজার-টেকনাফসহ সমুদ্র উপকূলবর্তী কিছু এলাকা সাগর গর্ভে চলে গেছে। এদিকে সুনামী হবার আশংকা রয়ে গেছে।

এতে সমুদ্র উচ্চতা বেড়ে যাবে। নিঃসন্দেহে এর ফলাফলও হবে ভয়াবহ। তাই এখন থেকেই সতর্ক হতে হবে আমাদের।


রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়