ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘বাংলা সাহিত্য অনুবাদ করে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চাই’

সাইফ বরকতুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘বাংলা সাহিত্য অনুবাদ করে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চাই’

রাইজিংবিডির স্টলে রূমানা চৌধুরী (ছবি : সাইফ রাজু)

রূমানা চৌধুরী সাহিত্যিক, অনুবাদক, দোভাষী, উপস্থাপক। ইংরেজি-বাংলা দুই ভাষাতেই ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ লিখে চলেছেন অনরবত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮১ সালে এমএসএস (লোক প্রশাসন) ডিগ্রি নিয়ে ১৯৮২ সালে কানাডায় পাড়ি জমান। বর্তমানে তিনি কানাডা সরকারের অধীনে অনুবাদক হিসেবে কর্মরত। মাইকেল মধুসূদর একাডেমি (কলকাতা) এর সহসভাপতি। বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭-তে আসেন বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রাইজিংবিডি ডটকমের স্টলে। এ সময় অনুবাদ, সাহিত্য ও বইমেলা নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাইফ বরকতুল্লাহ।

সাইফ বরকতুল্লাহ : আপনি তো দীর্ঘদিন ধরে কানাডায় থাকছেন। প্রতি বছর অমর একুশে বইমেলায় আসা হয়?
রূমানা চৌধুরী :
আমি মূলত কানাডায় থাকি ৩৫ বছর ধরে। প্রতি বছর বইমেলার সময় বাংলাদেশে আসি।

সাইফ বরকতুল্লাহ : টরেন্টো বইমেলায় নিশ্চয়ই গিয়েছেন, সেখানকার বইমেলা আর অমর একুশে বইমেলার মধ্যে কোনো পার্থক্য খুঁজে পান?
রূমানা চৌধুরী :
  আমার কাছে প্রথম পার্থক্য হচ্ছে যে এটা আমার নিজের দেশ। আমার জন্ম স্থান। এখানে টানটা একটু বেশি। আর চারদিকে বাংলা বই এটা হচ্ছে বৈশিষ্ট্য। নিউ ইয়র্কে মুক্তধারা কুড়ি বছরের বেশি সময় ধরে বইমেলা করছে। সেখানেও ভালো। বাংলাদেশ থেকে পাবলিশাররা যায়, লেখকরা যায়, আমরা কানাডা থেকে যাই। কানাডাতেও প্রতি বছর বইমেলা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে এত পাবলিশার, এত প্রকাশক, এক লেখক এক সঙ্গে যেটা হয়, ওখানেও হয় কিন্তু সংখ্যায় এত না।

সাইফ বরকতুল্লাহ : আপনার এবার কী কী বই এসেছে?
রূমানা চৌধুরী :
এবার আমার তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে। কবিতা সমগ্র, নির্বাচিত ছোট গল্প আর নির্বাচিত প্রবাস গল্প। এগুলো যথাক্রমে আমার প্রকাশিত ২৬, ২৭ এবং ২৮ নম্বর বই।

সাইফ বরকতুল্লাহ : ইদানিং একটা অভিযোগ শোনা যায় যে সম্পাদনা ছাড়াই বই বের হচ্ছে, বইয়ের মান কেমন- তবে এর মাঝেই কিন্তু অনেক লেখক বের হয়ে আসছেন। অনেক নবীন লেখক ভালো লিখছেন। এ নিয়ে আপনার ভাবনা?
রূমানা চৌধুরী :
এটা নিয়ে আমার খুব কড়াকড়ি একটা ভাবনা আছে। সম্পাদনা যেকোনো বইয়ের জন্য অপরিহার্য। অনেকেই লিখছেন, পয়সা দিয়ে বই বের করছেন। কিন্তু ব্যাকরণগত দিক দিয়ে, শব্দের দিক দিয়ে, তথ্যের দিক দিয়ে ছোটগল্পের একটা ফরমেট থাকে, কবিতার একটা ফরমেট থাকে, উপন্যাসের একটা ফরমেট থাকে এগুলো অনেকেই মানছে না। কিন্তু এই ফরমেট ছাড়া, সম্পাদনা ছাড়া বই যদি বের করে, তাহলে যেকোনো মানুষের হাতে গেলে ছোট হোক বড় হোক, ওদের একটা ভুল শিক্ষা দেওয়া হয়। এজন্য যেকোনো বই সম্পাদনা করে বের করা উচিত।

সাইফ বরকতুল্লাহ :  প্রত্যেক বছরই মেলায় প্রায় কয়েক হাজার বই বের হয়। সমালোচনা থাকলেও এর মাঝেই কিন্তু অনেক লেখক তৈরি হচ্ছে- এ নিয়ে আপনার ভাবনা?
রূমানা চৌধুরী :
আমরা হয়তো কোয়ালিটি পাচ্ছি না, কিন্তু কোয়ানটিটি পাচ্ছি। আর অপটিমেসটিক, যারা ভালো চিন্তা করতে ভালোবাসে, আমি তাদের মধ্যে একজন। ধরেন একশ জন খারাপ লেখক হলে তার মধ্যে তো একজন দুজন ভালো লেখক হবেই। তবে এটা ঠিক আছে সংখ্যা বেশি হলেও মান অত ভালো না হলেও আমাদের একটা ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা তো আছে। তবে মান বেশি খারাপ হলে নতুন প্রজন্ম ভুল শিখবে। আমি সম্পাদনা এবং নিয়ন্ত্রণের পক্ষে।

 



সাইফ বরকতুল্লাহ : এখন ফেসবুক কিংবা সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই সাহিত্যচর্চা করছেন। এখানেও কিন্তু বাংলা সাহিত্যের একটা উন্মেষ হচ্ছে। এ নিয়ে কী ভাবছেন?
রূমানা চৌধুরী :
বাংলায় লিখছেন, ইংরেজিতেও লেখা হচ্ছে। তবে সেই লেখাগুলো নিজের চিন্তাধারাকে ভিত্তি করে একজন মানুষ লিখছে। সে কবি না হয়েও কবিতা লিখছে, লেখক না হয়েও গল্প লিখছে। কিন্তু এর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, সম্পাদনা নেই। তবে একটা মুক্তচিন্তার প্রকাশ আমরা পাচ্ছি। এদিক দিয়ে আমি বলব ভালো। অনেকেই যারা লিখত না, সংবাদপত্রে লেখা পাঠাত না, তারা নিজের ইচ্ছে মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখছে। এতে হয়তো কোনো এক সময় গিয়ে তাদের লেখার মান ভালো হবে। নিরব কবি বা নিরব লেখক থাকার চাইতে সরব কবি বা সরব লেখক থাকা ভালো। হয়তো কোনদিন আমরা এখান থেকেও ভালো লেখক পেয়ে যাব।

সাইফ বরকতুল্লাহ : এবার বইমেলায় আপনার কবিতা সমগ্র বের হয়েছে- এ নিয়ে যদি কিছু বলেন?
রূমানা চৌধুরী :
আসলে আমি লিখছি ৪০ বছর ধরে। ৩৫ বছর বাংলাদেশে নেই। বাংলাদেশে থাকাকালীন ইংরেজি পত্রিকাগুলোতে লিখতাম। বাংলাদেশ অবজার্ভার, মর্নিং নিউজে নিয়মিত লিখতাম ইউনিভার্সিটি থাকা পর্যন্ত।  বিদেশে যাওয়ার পর আমি ইংরেজি ছেড়ে বাংলায় লেখা শুরু করলাম। আমি বাঙালি, বাংলাদেশি, বাংলাটাই বেশি ভালো  লাগে। আর আমি নিজের কাজগুলো বাংলায় লিখে ইংরেজিতে অনুবাদ করছি। ইংরেজি লিখে বাংলায় অনুবাদ করছি। কারণ বাংলা ভাষাভাষি ছাড়াও বিদেশিরা আমাদের শিল্পসাহিত্য সম্পর্কে জানতে পারবে।

সাইফ বরকতুল্লাহ : অনুবাদ, একটি ভালো বিষয় বলছেন আপনি। বাংলাদেশে কিন্তু ধীরে ধীরে অনুবাদ সাহিত্য জনপ্রিয় হচ্ছে। আমরা বিদেশি অনেক জনপ্রিয় লেখকের বই বাংলাদেশে পাচ্ছি। আমাদের বাংলা ভাষাও কিন্তু ব্যাপকভাবে বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া দরকার। এক্ষেত্রে অনুবাদের একটা ভূমিকা আছে। এ নিয়ে কোনো কাজ করছেন কি না?
রূমানা চৌধুরী :
আমি কানাডায় কানাডা সরকারের অধীনে অনুবাদক হিসেবে ২৬ বছর ধরে কাজ করছি। আমার কাজ হচ্ছে ক্রিমিনাল কোর্ট, ইমিগ্রেশন কোর্ট-এ বাংলা থেকে ইংরেজি, ইংরেজি থেকে বাংলা করা। আমি বলব, আমাদের বাংলাদেশর বইগুলো যেগুলো ইংরেজিতে অনুবাদ হয়ে বিদেশে যাচ্ছে- এগুলোর ইংরেজি মানটা অতটা ভালো না। যে কারণে বিদেশি লোকরা ইংরেজি বইগুলো বেশি কিনতে চায় না বা পছন্দ করে না। এজন্য অনুবাদের ভূমিকা প্রবল এবং বাংলাদেশে কিছু সংগঠন করা উচিত। যারা বাংলাদেশের বড় বড় কবি, লেখকদের কাজগুলো অনুবাদ করে বিদেশের দরবারে যাতে পাঠাতে পারে। আমি নিজের লেখা অনুবাদ করি। আমার পরবর্তী গবেষণা কাজ হচ্ছে বাংলাদেশর নারী : বাংলাদেশর কবিতা। বাংলাদেশর শ্রেষ্ঠ মহিলা কবিদের কাজগুলো অনুবাদ করে বিদেশে ছাপাচ্ছি। বাংলা সাহিত্য অনুবাদ করে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চাই।

সাইফ বরকতুল্লাহ : লেখালেখি নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ?
রূমানা চৌধুরী :
আমার আমেরিকা থেকে কবিতা সংকলন এবং ছোট গল্প সংকলন, উপন্যাস বের হয়েছে। ভবিষ্যতে আমি ইংরেজি ছোট গল্প কানাডা থেকে বের করব। একই সঙ্গে ওটার বাংলা অনুবাদ করে বাংলাদেশর বইমেলায় দেব।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/সাইফ/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়