ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

গল্পকার শিক্ষক নন: এনামুল রেজা

আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৩৯, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গল্পকার শিক্ষক নন: এনামুল রেজা

নিজস্ব প্রতিবেদক : তরুণ কথাসাহিত্যিক এনামুল রেজা বলেছেন, ‘কোনো একটি ঘটনাকে কেউ কেউ ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন। একজন গল্পকারের কাজ হচ্ছে দুই দিকই ফুটিয়ে তোলা।’

‘গল্প লিখতে গিয়ে গল্পকার তার নিজস্ব কোনো মত দেবেন না। তিনি একটি দৃশ্য আঁকবেন গল্পের মধ্য দিয়ে। উভয় অনুভূতি তুলে ধরে গল্পটা লিখবেন। নিজের আরোপিত কিছু থাকবে না সেখানে। এক্ষেত্রে পাঠকই তার মতামত দেবেন, গল্পকার নয়। একজন গল্পকার কখনও শিক্ষক নন।’

বুধবার সন্ধ্যায় অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাজাইজিংবিডি ডটকমের স্টলে ‘সমকালীন সাহিত্য ভাবনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে গল্পকার এনামুল রেজা এ কথা বলেন। এবারের গ্রন্থমেলায় এটি রাইজিংবিডির দ্বিতীয় আয়োজন।

এনামুল রেজা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্পের ক্ষেত্রে একটা প্রচলিত আঙ্গিক দাঁড়িয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের গল্পে সংগ্রামের বিষয়টি থাকবে, যুদ্ধের কিছু বর্ণনা থাকবে, কিছু মানুষ ভুগছে- দীর্ঘদিনে এ রকম একটি আঙ্গিক দাঁড়িয়ে গেছে। আমাদের এ প্রজন্মে আমরা যারা গল্প লিখি আমার মনে হয় যুদ্ধের দিকে একটু অন্যভাবে আমাদের তাকানোর দরকার আছে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যভাবে তাকানো বলতে যুদ্ধের ওই সময়ে সবাই একইভাবে যুদ্ধকে দেখেনি। যেমন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমাদের পাশের গ্রামটাতে যুদ্ধ হয়েছে কিন্তু আমাদের গ্রামে যুদ্ধ হয়নি। এই যে আমাদের গ্রামে যুদ্ধ হয়নি আবার অন্যগ্রামে যুদ্ধ হয়েছে- দুই গ্রামের মানুষের যুদ্ধ সম্পর্কে ভোগার বিষয়টি এক রকম নয়। আসলে কার কাছে ওই সময়ের অনুভূতিটা কেমন- সেটি বের করা দরকার। যেখানে যুদ্ধ হয়েছে আর যেখানে যুদ্ধ হয়নি- সংগ্রামের তীব্রতা নিয়ে দুই এলাকার মধ্যে পার্থক্য আছে। এখানে দুটিা বিষয়ই তুলে ধরার দরকার আছে। একজন সংগ্রামের তীব্রতাটাকে গভীরভাবে নিচ্ছেন না, কেন নিচ্ছে না, সেটি দেখতে হবে এবং আমরা দেখছি যে, এ সময়ে অনেকে যুদ্ধকে বলছে ‘গন্ডগোল’। এটিকে তারা কেন গন্ডগোল বলছে? নতুন গল্পকারদের বিষয়টি গভীরভাবে জানা দরকার আছে।’

 



‘একজন মানুষ দুই ধরনের চিন্তা করতে পারেন। কেউ যুদ্ধ নিয়ে একই চিন্তা করে আসছেন। কিন্তু অন্য একজন লোকের সঙ্গে কথা বলে মানসিকতা পাল্টে গেল। গল্পের একটি অংশে তার আগের চিন্তা ও বর্তমান চিন্তাটা তুলে ধরতে হবে। এক্ষেত্রে গল্পের আঙ্গিক বা গঠন ভাঙা যেতে পারে। আমি যেটা দেখছি, যুদ্ধের যে গল্প- এ অবস্থানটা ভাঙ্গা জরুরি। যুদ্ধ নিয়ে কাজ করতে হলে গভীরভাবে ভাবতে হবে। এবং ওই সময়ে সংগ্রামের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সংযোগ একই রকম ছিল না। এটা আমার পর্যবেক্ষণ। এটি নতুন লেখকরা নতুনভাবে ভাবতে পারেন।’

‘গল্পে কালজয়ী হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আমাদের চিন্তা করার কিছু নেই। সেটি মনের অজান্তেই কালজয়ী হবে। একজন লেখক লিখতে গিয়ে চিন্তায় পড়েন, তিনি কীভাবে লিখবেন। কোন ভাষা দিয়ে লেখা শুরু করবেন। এক্ষেত্রে একজন লেখক সংকোচ অনুভব করে থাকেন। বর্তমানে আরেকটি সমস্যা হচ্ছে- লেখকদের মধ্যে যোগাযোগ অনেক কম। এটা বাড়াতে হবে। মাঝে মাঝেই এ জাতীয় আড্ডার প্রয়োজন। এমন আড্ডার মাধ্যমে লেখকদের একত্রিত করায় রাইজিংবিডিকে ধন্যবাদ।’

রাইজিংবিডির নির্বাহী সম্পাদক তাপস রায়ের সভাপতিত্বে ও সাহিত্যিক মনি হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে অংশ নেন এ সময়ের জনপ্রিয় ছয় কথাসাহিত্যিক। তারা হলেন- মাসউদ আহমাদ, মোজাফফর হোসেন, ম্যারিনা নাসরীন, মাহবুব ময়ূখ রিশাদ, এনামুল রেজা ও শাশ্বত নিপ্পন।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন রাইজিংবিডির সহকারী বার্তা সম্পাদক রাসেল পারভেজ, রাইজিংবিডির সহসম্পাদক সাইফ বরকতুল্লাহ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/ইয়ামিন/রাসেল পারভেজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়