ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ঢাকার বাইরের সাহিত্য চর্চা নিয়ে রাইজিংবিডির বৈঠক

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৮, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঢাকার বাইরের সাহিত্য চর্চা নিয়ে রাইজিংবিডির বৈঠক

আরিফ সাওন ও আবু বকর ইয়ামিন : ঢাকার বাইরে সাহিত্য চর্চার সমকালীন বাস্তবতা কী- এ বিষয়ে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় গোলটেবিল বৈঠক করল অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকম।

আলোচকরা একটি বিষয়ে একমত হয়েছেন, সবকিছু ঢাকায় কেন্দ্রীভূত হওয়ায় মফস্বলে ভালো লেখক থাকলেও তারা জাতীয় পর্যায়ে পৌঁছাতে পারছেন না। এ বাধা কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন তারা।

রাইজিংবিডির নির্বাহী সম্পাদক তাপস রায়ের সঞ্চালনায় শুক্রবার সন্ধ্যায় অমর একুশে গ্রন্ধমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রাইজিংবিডির স্টলে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে আলোচক ছিলেন খুলনার লেখক, সাংবাদিক ও গবেষক গৌরাঙ্গ নন্দী, সিলেটের কবি ও লেখক হেনা নুরজাহান, রাজশাহীর কবি ও সাময়িকী অ্যালবাম-এর সম্পাদক মঞ্জু রহমান, কালি ও কলম পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি শামীম হোসেন, কথাসাহিত্যিক ও সাময়িকী গল্পকথা-এর সম্পাদক চন্দন আনোয়ার, চট্টগ্রামের কথাসাহিত্যিক আরমানউজ্জামান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাইজিংবিডির সহকারী বার্তা সম্পাদক রাসেল পারভেজ ও সহ সম্পাদক সাইফ বরকতুল্লাহ।

প্রসঙ্গ উত্থাপনে সঞ্চালক তাপস রায় বলেন, ‘ঢাকার বাইরে যারা সাহিত্য চর্চা করেন তাদের অভিযোগ ঢাকায় পৌঁছাতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। আবার ঢাকায় যারা প্রকাশনার সঙ্গে জড়িত তাদের অভিযোগটা অন্য রকম।  তারা বলেন, সাহিত্য সাময়িকী ও লিটলম্যাগে ঢাকার বাইরের লেখকদের উপস্থিতি কম থাকে।’ এ বিষয়ে তিনি আলোচকদের মতামত জানতে চান।

গৌরাঙ্গ নন্দী বলেন, ‘মানসম্পন্ন লেখা না হওয়া, আবার অনেকে লিখছেন লিখছেন না, রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ কম থাকায় ঢাকার বাইরের লেখকরা রাজধানীর মূলধারার সঙ্গে কেন্দ্রীভূত হতে পারছেন না। ঢাকায় যেমন প্রচুর পরিমাণে পত্রপত্রিকা রয়েছে, প্রকাশের সুযোগ রয়েছে, ঢাকার বাইরে ততটা নেই- এটি আমাদের সবার জানা আছে। কিন্তু কেন্দ্রীভূত ধারায় সবাইকে আনতে পারলে দেশে আরো অনেক নতুন লেখক বেরিয়ে আসতো। এ ছাড়া মফস্বলে আরো কিছু সীমাবন্ধতাও রয়েছে। যেকোন বিষয়ে সহজে কাজ করার সুযোগ রয়েছে রাজধানীতে, যা গ্রাম পর্যায়ে নেই। সব কিছু ঢাকা কেন্দ্রীক হওয়ায় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অবস্থান করছেন রাজধানীতে। সেখানে রয়েছে নানা শ্রেণির পাঠকও, মফস্বলে নেই। আর যেটি সবচেয়ে বেশি উল্লেখ করব, তা হলো রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার খুবই অভাব।

তিনি আরো বলেন, ‘ধরে নিচ্ছি সবাই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে লিখছেন। কিন্তু সব সময়েই যে দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে লেখা হচ্ছে এমনটিও নয়। আশা করি, দায়বোধের জায়গা থেকে লিখলে নতুন কিছু সৃষ্টি হবে।’

হেনা নুরজাহান বলেন, ‘আমরা যারা ঢাকার বাইরে থাকি, খুব অনুভব করি বাংলা একাডেমির গ্রন্থমেলায় যাব, দেখব। কিন্তু সেটা সবসময় হয়ে ওঠে না।’ তিনি বলেন, ‘একজন লেখেক যখন লেখেন, তখন তার সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে লেখা উচিত। লেখা শুধু নিজের জন্য নয় । সমাজের কথা চিন্তা করে লিখতে হবে। ’

তিনি আরো বলেন, ‘মফস্বলে থেকে সাহিত্য চর্চা করা কঠিন। কখনো লেখক আছে তো প্রকাশের পর্যাপ্ত সুযোগ নেই। আবার জনপ্রিয় লেখক, প্রকাশক ও সম্পাদকদের নিয়েও বিড়াম্বনায় পড়তে হয়। যখন নুতন কেউ সম্পাদনা করতে যান তখন বড় সাহিত্যিকেরা লেখা দিতে চান না। আবার নতুনদের লেখাও প্রতিষ্ঠিত সম্পাদকরা প্রকাশ করতে চান না। চেনা-জনা থাকলে লেখা যাই হোক ছাপা হয়ে যায়।’

মঞ্জু রহমান বলেন, ‘এক সময় মফস্বল শহরকেন্দ্রীক সাহিত্য চর্চা ছিল না। এগুলো ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রীক, যার নিয়ন্ত্রণ ছিল শিক্ষার্থীদের হাতে। এখন তা চলে গেছে শিক্ষকদের হাতে।’ তিনি আরো বলেন, ‘মফস্বল বা কেন্দ্র যা-ই হোক- কোনো সাহিত্যই রাজনীতিসহ কোনো নির্দিষ্ট প্লাটফর্মে বিকাশ লাভ করতে পারে না।’



তিনি বলেন, ‘মফস্বলের ছোট কাগজ নতুন লেখক তৈরি করে। এই চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে। ছোট হলেও সাহিত্য ও বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্র বিকাশে এর প্রভাব অনেক। লিটলম্যাগ হারিয়ে যাওয়া লেখককে ধাক্কা দিয়ে ফিরিয়ে আনে।’

কবিতার বইয়ের প্রাচুর্যতা নিয়ে কবি শামীম হোসেন বলেন, ‘সংখ্যা কোন বিষয় না। কত শত বই আসছে সেটিও বিষর নয়। কবিতার নিজস্ব পাঠক আছে। ভাল কবিতার তো আছেই। আর কবিতা বিচারের দায়িত্ব পাঠকের, প্রকাশকের নয়। বই যাই হোক কেন, তা ছাপাতে প্রকাশকের বাধা দেওয়া উচিত নয়।’

চন্দন আনোয়ার বলেন,  ‘মৌলিক সাহিত্য সব সময় যে জাতীয় কাগজের মাধ্যমে রেবিয়ে আসছে, বিষয়টি তা নয়। আমি মনে করি লিটলম্যাগের মাধ্যমেই মৌলিক সাহিত্য রেবিয়ে আসছে। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন লেখক। ফলে লিটলম্যাগ বাঁচিয়ে রাখতে পৃষ্ঠাপোষকতা প্রয়োজন।’

আরমানুজ্জামান বলেন, ‘ঢাকার বড় কাগজের সঙ্গে মফস্বলের লেখকদের যোগাযোগ বাড়ানো খুবই জরুরি। এর দায় ঢাকার কাগজকেই নিতে হবে। তারা উদ্যোগ নিলে আঞ্চলিক পর্যায় থেকে ভালো ভালো লেখক বেরিয়ে আসা সম্ভব। কারণ হচ্ছে, মফস্বল থেকে যখন কোনো লেখক সাহিত্য পাতায় লেখা প্রকাশের জন্য লেখা পাঠায়, তখন পরিচিতি না থাকায় তার লেখায় আগ্রহ দেখানো হয় না। যে কারণে মফস্বল থেকে নতুন লেখক বেরিয়ে আসা খুবই কঠিন।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/সাওন/ইয়ামিন/রাসেল পারভেজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়