ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বিষাদময় বিকেলের বিশ বছর!

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:০৪, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিষাদময় বিকেলের বিশ বছর!

ইয়াসিন হাসান : আজকের মতো দিনটি ছিল শুক্রবার। ১৯৯৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। ফুটবলের দাপটের মাঝেও তখন ক্রিকেট ছিল রমরমা।

বিশেষ করে ঢাকা লিগ তখন ছিল এখনকার থেকেও জৌলুসপূর্ণ। তখনও ঢাকা লিগে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা। আর দেশের ওই সময়কার সেরা ক্রিকেটাররা তো ছিলেনই।

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠেয় সেদিনের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল আবাহনী-মোহামেডান। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের লড়াই। স্টেডিয়াম ভরপুর। কিন্তু পড়ন্ত বিকেলে বিষাদের ছায়া গোটা স্টেডিয়ামে। মেহরাব হোসেন অপির এক শটে এলোমেলো পুরো মাঠের পরিবেশ। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শুরু হয় ঢাকা লিগ নিয়ে আলোচনা।
 


আবাহনী হয়ে খেলতে এসেছিলেন ৩৮ বছর বয়সি রমন লাম্বা। ভারতের এ ক্রিকেটার ফিল্ডিং করছিলেন স্কয়ার লেগে। বাঁহাতি স্পিনার সাইফউল্লাহ খান জেম লাম্বাকে বলেন শর্ট লেগে ফিল্ডিংয়ে আসতে। ম্যাচ শেষ দিকে হওয়ায় হেলমেট নিজ থেকেই নিতে চাননি লাম্বা। তাকে সতীর্থরা অনুরোধ করেছিল, ড্রেসিং রুম থেকেও বলা হয়েছিল হেলমেট নিতে। কিন্তু তিন বল বাকি থাকায় হেলমেটের প্রয়োজন অনুভব করেননি লাম্বা। তার ওই এক সিদ্ধান্ত যে কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠবে তা ভাবতেও পারেনি মাঠে উপস্থিত কেউ। 

অপির নেওয়া শট আঘাত করে তার মাথায়। আকরাম খানের পরিবর্তে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা খালেদ মাসুদ পাইলট বল মাটিতে পড়ার আগে নেন ক্যাচ। তাতে জয় পায় আবাহনী। কাছের ফিল্ডাররা তখন উল্লাসে মেতে উঠার অপেক্ষায়। কিন্তু লাম্বা হঠাৎ লুটিয়ে পড়েন মাটিতে।

উঠে দাঁড়িয়ে ফিল্ডার আর ড্রেসিং রুমে থাকা সতীর্থদের সাহায্যে সাজঘরে ফিরেন লাম্বা। ড্রেসিং রুমে ফিরেই বমি করেন। দ্রুতই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় পিজি হাসপাতালে (বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়)। শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখে তাকে দেওয়া হয় লাইফ সাপোর্ট। উন্নতি না করায় করা হয় ব্রেন সার্জারি। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি।
 


তিনদিন পর ১৯৯৮ সালের আজকের দিন অর্থ্যাৎ ২৩ ফেব্রুয়ারি লাম্বা জীবনের ইনিংসে হয়ে যান আউট। তার মৃত্যুর দুই দশক পূর্ণ হল আজ। বাংলাদেশের ঘরোয়া লিগে তখন যে কয়কজন বিদেশি ক্রিকেটার খেলতে আসতেন, রমন লাম্বা ছিলেন তাদের মধ্য অন্যতম। প্রায় ৯ বছর তিনি বাংলাদেশের ঘরোয়া লিগে নিয়মিত খেলেছেন। পছন্দের সেই ঢাকা মাঠেই তার জীবনের পদচারণা থেমে যায়।

ভালোবেসে ব্যাট-বল হাতে নিয়েছিলেন লাম্বা। ভারতের হয়ে ৪ টেস্ট আর ৩২ ওয়ানডে খেলেছেন ডানহাতি এ ব্যাটিং অলরাউন্ডার। কিন্তু মাঠই কেড়ে নিল তার প্রাণ! ক্রিকেটকে উজাড় করে দিয়েছিলেন সবকিছু। হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দিয়েছিলেন। ভালোবাসা ও বিনোদন দেওয়ার কাজটি করতে গিয়েই নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন রমন লাম্বা!



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/ইয়াসিন/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়