ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

প্রসঙ্গ সোনাইলের বনে, কারখানার বাঁশি

হামিম কামাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৭, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রসঙ্গ সোনাইলের বনে, কারখানার বাঁশি

হামিম কামাল : সোনাইলের বনে প্রসঙ্গ, মানুষ আমি সামান্য হতে পারি। কিন্তু আমার কিছু ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ বিশ্বাস অবিশ্বাস প্রকৃতির নিয়মেই তৈরি হয়েছে। তাকে আমি এড়াতে পারি না।  যেমন, আমি প্রকৃতি ঘেঁষে ভাবতে ভালোবাসি। এবং এও কখনো ভুলে যাই না যে আমরা স্বয়ং প্রকৃতির অংশ। সুতরাং নিয়তির কাছে আমরা পুরোপুরি বাঁধা নই, নিয়তিও আমাদের কাছে বাঁধা।

আমি বিশ্বাস করি এ বিশ্বের প্রতিটি বস্তু অবস্তু প্রাণি অপ্রাণি নিজেদের মতো করে জীব। এ বিশ্বাসের জন্যে আমি আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর কাছে ঋণী। আমার  ধারণা এরা পরস্পরের সঙ্গে প্রেমের বাঁধনে আবদ্ধ।

সেই প্রেম কখনো প্রত্যক্ষ, কখনো পরোক্ষ। মানুষ যখন হত্যা করে, আমি দেখেছি, তখনো প্রেম কার্যকর।

আমি বিশ্বাস করি, মহাবিশ্বের প্রতিটি প্রাণ বা অপ্রাণ-কণার কোনো একজন ঈশ্বর নেই। বরং প্রত্যেকে প্রত্যেকের ঈশ্বর। অর্থাৎ জগৎময় একটা সামষ্টিক ঐশ্বরিকতা বিরাজ করছে। এ বিশ্বাসের জন্যে আমি দার্শনিক বারুখ স্পিনোজার কাছে ঋণী। সোনাইলের বনে আমার এমন সব বিশ্বাসের দলিল। এমন সব বোঝাপড়ার স্মারক। যথাযতন উপস্থাপন।

লোকে যাদের পাগল বলে, সোনাইলের বনের লেখাগুলো সেই পাগলদের ভালো লাগতেও পারে।

বইটির প্রচ্ছদ করেছেন মোস্তাফিজ কারিগর। দাম দুই শতাধিক। প্রকাশক কাগজ প্রকাশন। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় স্টল নম্বর ৩৭৩-৭৪।

কারখানার বাঁশি প্রসঙ্গ
আমার খুব শ্রমিক হতে ইচ্ছে করত। আমি ঢাকার এক প্রান্তিক শহরে বড় হতে হতে অনেক শ্রমিক দেখেছি। যখন শহর ক্রমশ বড় হচ্ছে, আমি প্রচুর অর্ধনগ্ন নারী-পুরুষকে দেখতে পেতাম; তাদের পোশাক ভীষণ মলিন কিন্তু শরীর যেন স্বর্গীয়। পেশল এবং আশ্চর্য সুন্দর। মেটেল শ্রমিকরা যখন মাটিতে কোদাল ফেলত আর তাদের তলপেট থেকে বুক হয়ে একটা নিয়ন্ত্রিত হুফ হুফ শব্দ বেরিয়ে আসত। আমি মুগ্ধ হয়ে শুনতাম।

হুফ! হুফ! হুফ!
শব্দ হচ্ছে আর কোদাল পড়ছে। আমি প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম।

আমি দেখতাম, ধোঁয়া ওঠা বিরাট সব কারখানা, তার ভারী সব লোহার ফটক; শুনতাম কারখানার দীর্ঘ বাঁশির শব্দ, চাকার ঘড়ঘড়। আমার আশ্চর্য বোধ হতো, কিভাবে এসব মহাদানব মানুষের আঙুল-হেলানে, পেশির সঞ্চালনে ঘুরছে! এই মানুষগুলো আমার কাছে নায়ক হয়ে থাকত।

প্রথম কৈশোরে আমি অনেক অসুখে ভুগেছি। তখন জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখতাম বিকালে হনহন করে পোশাক শ্রমিকরা বাড়ি ফিরছেন। তাদের মুখে পরিতোষের স্পষ্ট ছাপ।

তাদেরই ভিড়ে এক কিশোরী ছিল ভীষণ সুশ্রী। চোখে কাজল পরত। অন্যদের সঙ্গে সমান বেগেই সে হাঁটত। কিন্তু আমার চোখের সামনে আমার প্রেমীক মস্তিষ্কের কল্যাণে সে যেন ধী-রে হেঁটে যেত। তার সঙ্গে গতি কমে যেত সবার। আমি দূর কৈশোরে প্রেমেও পড়েছিলাম এক শ্রমিক নারীর।

পরবর্তী জীবনে অল্প সময়ের জন্যে হলেও সত্যিকার শ্রমিক জীবন কাটানোর সুযোগ আমার হয়েছে। আমি সামান্য হলেও, যা ঘটে তা যেন ঘটতে পারে তার পেছনকার প্রকৃতির যে বিরাট আয়োজন; কখনো তা বিকট; বিকট হলেও সুন্দর, তা প্রত্যক্ষ করেছি।

মানুষের সংঘাত প্রতিহিংসাও যে সুন্দর হতে পারে তা আমি আমার ছোট্ট শ্রমিক জীবনে অনুভব করেছি। কারখানার বাঁশি আমার স্বপ্নের সুরবঙ্গের মাটিতে সেই অনুভবের গল্প। এতো শ্রমিক হতে চাওয়া এই আমি কিন্তু মোটেও দক্ষ শ্রমিক ছিলাম না। আমি দেখেছি, দক্ষতা কেনার যথেষ্ট বিনিময় সব শ্রমিক জমাতে পারে না। আবার তালিকা থেকে বাদ পড়তেও ওরা চায় না। পেটে লাথি পড়বে বলে নয়। তারচেয়ে যেন বুকে আঘাত পাওয়ার ভয়টাই ওদের বড়।

সেই সমস্ত উদ্ভট অদক্ষ শ্রমিকদের কাছে কারখানার বাঁশি মন্দ নাও লাগতে পারে।

কারখানার বাঁশির প্রচ্ছদ করেছেন কাব্য কারিম। মূল্য তিন শতাধিক। প্রকাশ করেছে অনিন্দ্য প্রকাশ। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্যাভিলিয়ন ৩।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়