ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ডগ ফাদার

রাশিদা নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৫৬, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ডগ ফাদার

রাকেশ শুক্লা

রাশিদা নূর : সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। আর সেরা হওয়ার প্রধান কারণ মানুষ জন্মগতভাবেই মানবিক। শুধু মানুষের বেলায় নয়, যেকোনো প্রাণী কষ্টে থাকলে সেটা অনুভব করতে পারে মানুষ। বিবেকের তাড়নায় তার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়, সহানুভূতি দেখায়। দুনিয়াজুড়ে এর অনেক উদাহরণ রয়েছে।

এমন একজন ব্যক্তি রাকেশ শুক্লা। ভারতের বেঙ্গালুরু রাজ্যের অত্যন্ত মেধাবী একজন সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার তিনি। তার রয়েছে একটি স্বনামধন্য টেলিকমিউনিকেশন আউট সোর্সিং কোম্পানি, যার নাম ‘রাইটার্স ব্লক’। এই কোম্পানির সঙ্গে কাজ করে মাইক্রোসফট, ইনটেল এবং ওরাকলের মতো বিশ্ব বিখ্যাত টেক কোম্পানিগুলো। ৪৫ বছর বয়সি রাকেশ শুক্লা এই কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)।

রাকেশ বেঙ্গালুরু-ভিত্তিক এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে। প্রতিষ্ঠার মাত্র ১০ বছরের মাথায় বেশ সুনাম অর্জন করে তার কোম্পানি। উপার্জন করেন বিশাল অঙ্কের টাকা। কেনেন দামি গাড়ি। আয়েশী জীবন কাটাতে দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ান তিনি। কিন্তু এসবের কোনো কিছুতেই সুখ খুঁজে পাননি রাকেশ। সুখ পেয়েছেন রাস্তার কুকুরের মাঝে। এটি ছিল ২০০৯ সালে, যখন সোনালি বর্ণের একটি কুকুর তার জীবনে আসে। একদিন বেঙ্গালুরুর রাস্তায় কুকুরটি পান তিনি। কুকুরটির মায়াবী চাহনির প্রেমে পড়েন রাকেশ। কুকুরটি তিনি বাড়িতে নিয়ে আসেন। আদর করে নাম দেন কাভিয়া।

কাভিয়া সম্পর্কে রাকেশ বলেন, ‘আমি যখন ওকে বাড়িতে আনলাম, ও খুব ভয় পাচ্ছিল। ছেড়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘরের এক কোনায় গিয়ে বসে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে লাগল। আমি ওর চোখে আমার প্রতি বিশ্বাস দেখতে পেলাম। ওর চাহনিতে আমার মাঝে অন্য রকম একটা অনুভূতি কাজ করতে লাগল। চুলগুলো শিহরিত হয়ে উঠল। ওর প্রতি উষ্ণ ভালোবাসা অনুভব করতে লাগলাম। যেন ওর মাঝে জীবনের অর্থ খুঁজে পেলাম।’

কাভিয়াকে পাওয়ার তিন মাসের মাথায় রাস্তায় আরেকটি কুকুর পান রাকেশ। এর শরীর ছিল পানিতে ভেজা। দেখতে অত্যন্ত জীর্ণ ছিল এটি। পরিত্যাজ্য কুকুরটির নাম ছিল লাকি। এটিকেও বাড়িতে আনেন রাকেশ।

এভাবে অল্প কিছুদিনের মধ্যে তার বাড়ি কুকুরে ভরে যায়। এতগুলো কুকুর তার স্ত্রীর একার পক্ষে দেখাশোনা করা সম্ভব নয় বলে সেগুলোকে তিনি তার অফিসের ছাদে নিয়ে যান। সেখানে গড়ে তোলেন একটি কুকুর আশ্রয় কেন্দ্র। লোক দিয়ে সেগুলোর পরিচর্যার ব্যবস্থা করেন।

এরপর ২০১১ সালে বেঙ্গালুরু শহরের পরিত্যাজ্য, বেওয়ারিশ কুকুর সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘দ্য ভয়েস অব স্ট্রে ডগস’ নামের একটি সংস্থা, যা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সিটি-ভিত্তিক কুকুর রেসকিউ (উদ্ধার) সংস্থা হিসেবে বিবেচিত।

২০১২ সালে পার্শ্ববর্তী দোদবাল্লাপুর নামক শহরে তিনি জমি কিনে কুকুরগুলোর জন্য একটি আধুনিক আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলেন। বর্তমানে তার আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে ৭৩৫টি কুকুর। বেশ কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে তিনি নিজেও এগুলোর দেখাশোনা করেন।

রাকেশ পেশায় সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার হলেও স্থানীয় মানুষ তাকে ডাকেন ‘দ্য ডগ ফাদার’। কুকুরের প্রতি অগাধ ভালোবাসার জন্য সেখানে তিনি এই নামেই বেশি পরিচিত।



রাইজিংবিডি/৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭/মারুফ/এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়