ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

গাছ থেকে গাছে লাফিয়ে প্রাণ রক্ষা

ফাতিমা রুনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৩৮, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গাছ থেকে গাছে লাফিয়ে প্রাণ রক্ষা

ফাতিমা রুনা : বন্দিদশায় নির্যাতন থেকে পালিয়ে বাঁচতে নানা রকম পথ বের করেন কয়েদি বা বন্দিরা। কেউ সফল হয়, কেউ বা জীবন দিয়ে তার মূল্য দেয়।

নরওয়ের এক স্পাই তার জীবন রক্ষায় ২০০ মাইল পাড়ি দিয়েছিলেন। যার মধ্যে কিছু পথ তিনি গাছ থেকে গাছে লাফিয়ে পাড়ি দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানদের বন্দিদশা থেকে বাঁচতেই এমন ঝুঁকি নিয়েছিলেন এই কয়েদি। ‘অ্যানাদার ম্যান’স সু’ শিরোনামের একটি বইয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।

গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ভেন সোমে নামের এই ব্যক্তি হিটলারের কুখ্যাত নাৎসি বাহিনীর হাতে আটক হন। ঘাতকেরা পিছু নিয়ে যাতে তার পায়ের ছাপ খুঁজে না পায় সে জন্যই এই পন্থা অবলম্বন করেছিলেন তিনি।

মধ্যবয়সী ভেন সোমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগে ফিশারী কর্মকর্তা হিসেবে নরওয়েতে কাজ করতেন। ভেন সোমে ও তার ভাই ইয়াকুব মিলে জার্মান নাৎসি বাহিনীর দখলদারিত্বের হাত থেকে জন্মভূমিকে রক্ষা করতে সাধ্যমতো চেষ্টা করেন। দুর্ভাগ্যবশত, ইয়াকুব সোমে ধরা পড়েন এবং জার্মান বাহিনীর গেস্টাপো তাকে ১৯৪৩ সালে হত্যা করে। পাশাপাশি নাৎসি বাহিনী টের পেয়ে যায় ভেন সোমের অস্তিত্ব এবং তাকে ধরার জন্য ওয়ারেন্ট ইস্যু করেন।

তারপরও গোপনে ভেন তার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন। নাৎসিদের ইউ বোট-ফেসিলিটি যেখানে সাবমেরিন বা ডুবো জাহাজ ও অন্যান্য সরঞ্জাম রাখা হতো, ১৯৪৪ সালে সেখানকার ছবি তোলার দায়িত্ব পান তিনি। লুকিয়ে ছবি তুলে তা মিত্র বাহিনীর কাছে পাঠিয়ে দিয়ে তিনি তার অর্পিত দায়িত্ব ভালোভাবেই পালন করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ওটেরয় দ্বীপে লুকিয়ে ছবি তুলতে গেলে সূর্যের আলো ক্যামেরায় পড়ে। সূর্যের প্রতিফলিত আলো শত্রু সেনার চোখে পড়ে। তারপর সৈন্যরা তাকে আটক করে।

এরপর গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়। ভেন বুঝতে পারছিলেন তার দিন ঘনিয়ে এসেছে। এরপর তাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে জাহাজে করে মূল দ্বীপে  নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। যাত্রা পথে ঘুমিয়ে পড়া গার্ডের চোখ ফাঁকি দিয়ে পানিতে ঝাঁপ দেয় ভেন। তারপর হাতের হাতকড়া ভেঙে পথের উল্টো দিকে সাধারণ সিভিলিয়ানের বেশ ধরে তীরে থাকা নাৎসি বাহিনীর অন্য গার্ডদের বোকা বানিয়ে পালিয়ে যান তিনি।

ভেন পালিয়ে গেছেন, এ খবর চাউর হওয়ার পর তাকে খুঁজে বের করতে ৯০০ সৈন্যসহ কুকুর নিয়োগ করা হয়। পরবর্তী দুমাস ভেন নাৎসিদের হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে ২০০ মাইল পথ পাড়ি দেন। এক পর্যায়ে তিনি পাইন গাছে উঠেন। গাছ থেকে গাছে লাফিয়ে চলেন। যাতে মাটিতে তার পায়ের ছাপ অনুসরণ করে তাকে খুঁজে না পায়।

এছাড়া পথ চলতে গিয়ে তাকে কখনো কখনো জলপ্রপাত এবং গভীর তুষারের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। পুরো পথ চলতে পরিবার থেকে পাওয়া একজোড়া বুট জুতা তাকে বাঁচিয়ে দেয়। কারণ এই জুতা না থাকলে তুষার মাড়িয়ে কোনোদিনই ওই পথ পাড়ি দিতে পারতেন না।

শত্রু এলাকা পেরিয়েও তাকে সেফ হাউসে পাঁচ সপ্তাহ লুকিয়ে থাকতে হয়েছিল, যতক্ষণ নকল পরিচয়পত্র হাতে পাননি। এরপর সেখান থেকে সুইডেন হয়ে ব্রিটেনে চলে যান তিনি। পরবর্তীতে স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে ভেন ইংল্যান্ডে বসবাস শুরু করেন। যুদ্ধ শেষে ভেন সোমে পরিবার নিয়ে নরওয়েতে ফিরেছিলেন।১৯৬১ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

ভেনের স্ত্রী প্রাইমরোজের মৃত্যুর পর তাদের সন্তানরা পারিবারিক পুরোনো জিনিসপত্র ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের স্মৃতিবহুল অনেক কিছুই খুঁজে পান। সেখানে ভেনের জুতো জোড়াও পাওয়া যায়।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়