ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

স্বেচ্ছায় এইডসের ভাইরাস গ্রহণ!

রাশিদা নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৬, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্বেচ্ছায় এইডসের ভাইরাস গ্রহণ!

রাশিদা নূর : এইডস একটি মরণব্যাধি। এই রোগের ভাইরাস থেকে পরিত্রাণের উপায় বের করতে বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো ফল পাওয়া যায়নি। আর তাই বর্তমান বিশ্বে এই রোগ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত।

ঘাতক এই ব্যাধি থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় সতর্ক থাকা। বিশেষ করে যৌনমিলন ও সিরিঞ্জের মাধ্যমে রক্ত নেয়ার ক্ষেত্রে। এইডস এর ভাইরাস (এইচআইভি) বহন করে এমন কারো সঙ্গে যৌনমিলন থেকে বিরত থাকা কিংবা এই ভাইরাস বহনকারীর ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ব্যবহার না করাই এই ব্যাধি থেকে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়।

আশ্চর্যের বিষয় হল, ঘাতক এই ব্যাধি থেকে বেঁচে থাকতে যখন পুরো বিশ্ব সচেতন, তখন দ্বীপরাষ্ট্র কিউবার একটি সম্প্রদায় স্বেচ্ছায় গ্রহণ করে এর ভাইরাস। মৃত্যুকে স্বাগত জানাতে ‘লস ফ্রিকিস’ নামের ওই সম্প্রদায়ের মানুষ সিরিঞ্জের মাধ্যমে এইচআইভি ভাইরাস গ্রহণ করে। ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর শরীর থেকে রক্ত গ্রহণের মাধ্যমে নিজের শরীরে ভাইরাস গ্রহণ করেন তারা।

অবশ্য এর পেছনে একটি কারণ রয়েছে। সরকারি বাহিনীর অমানবিক ‌নির্যাতন আর হয়রানি থেকে বাঁচতে তারা এভাবে মৃত্যুকে স্বাগত জানায়।

১৯৮০ সালের শেষের দিকে এটি শুরু হয়। যখন কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো দেশটির নেতৃত্ব নিয়ে নেন। দেশটিতে বিপ্লব ঘটে সমাজতন্ত্রের।

‘লস ফ্রিকিস’ মূলত কোনো নির্দিষ্ট ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর নাম নয়। এটি হচ্ছে দেশটির মূলধারার সমাজের বাইরের জনগোষ্ঠীর একটি সমন্বিত নাম। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালে যখন দেশটিতে ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন চলছিল, তখন কিউবায় ইংরেজি বলা কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু দেশটির কয়েকটি সম্প্রদায়ের লোকজন যাদের সংস্কৃতির সঙ্গে আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতির মিল রয়েছে, তারা ওই সময় ইংরেজিতে গান করতো এবং কথা বলতো। তাই তাদের ওপর নেমে আসে ফিদেল কাস্ত্রো বাহিনীর অমানবিক ‌নির্যাতন। তখন তাদের একমাত্র অপরাধ ছিল ইংরেজি বলা।

সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনে সফল হওয়ার পর ফিদেল কাস্ত্রো যখন দেশটির সর্বময় ক্ষমতা গ্রহণ করে তখন এই সম্প্রদায়ের লোকজন একঘরে হয়ে পড়ে। সবাই তাদেরকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। এরপর আবার তাদের ওপর চলতে থাকে সরকারি বাহিনীর অভিযান, কঠোর নি‌র্যাতন ও হয়রানি। আর এসব অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তারা মৃত্যুকে স্বাগত জানাতে স্বেচ্ছায় মরণব্যাধি এইডস এর ভাইরাস গ্রহণ করতে শুরু করে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/মারুফ/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়