ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বিচ্ছেদ জাদুঘর

রাশিদা নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১০, ৪ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিচ্ছেদ জাদুঘর

রাশিদা নূর : পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই জাদুঘর রয়েছে। নিজস্ব জাতি, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের নানা স্মৃতি সংরক্ষণ করতে এটি বহু প্রাচীন একটি পদ্ধতি। কিন্তু গতানুগতিক এই জাদুঘরের বাইরেও এক ধরনের জাদুঘর আছে, যেখানে সংরক্ষণ করা হয় প্রেম, ভালোবাসা ও বিয়ে বিচ্ছেদের পর একত্রে থাকাকালীন রোমান্টিক নানা স্মৃতি। আর এই জাদুঘর আছে পৃথিবীর মাত্র দুটি দেশে। একটি ক্রোয়েশিয়াতে, অন্যটি যুক্তরাষ্ট্রে।

২০০৬ সালে ক্রোয়েশিয়ার জাগরেব শহরে এটি প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশটির দুই চারুশিল্পী অলিনকি ভিসটিকা ও ড্রাজেন গ্রুবিসকি এর উদ্ভাবক। যখন তাদের চার বছরের প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যায় তখন তারা চিন্তায় পড়ে যান তাদের রোমান্টিক মুহূর্তের স্মৃতিগুলো কী করবেন।

একদিন তারা একে অপরকে ঠাট্টা করে একটি জাদুঘর তৈরি করে সেখানে স্মৃতিগুলো সংরক্ষণের কথা বলছিলেন। বিষয়টি নিয়ে তারা ততটা সিরিয়াসও ছিলেন না। এর তিন বছর পর ভিসটিকা গ্রুবিসকির সাথে যোগাযোগ করেন এবং তাদের এই চিন্তার প্রতিফলন ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেন।

এরপর তারা দুজন তাদের বন্ধুদের অনুরোধ করেন সম্পর্ক বিচ্ছেদের পর কাছে থাকা স্মৃতিগুলো সংরক্ষণের জন্য তাদের কাছে জমা দিতে। মাত্র অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই তাদের কাছে আসতে থাকে নানা ধরনের স্মৃতি। কেউ নিয়ে আসেন হুইস্কির খালি বোতল, কেউ কৃত্রিম এক জোড়া স্তন, কেউবা আবার ছেঁড়া ব্লু জিন্সের প্যান্ট। এভাবেই জড়ো হতে থাকে নানা ধরনের স্মৃতি।

এসব স্মৃতি নিয়েই ২০০৬ সালে ক্রোয়েশিয়ার জাগরেব শহরে একটি অস্থায়ী জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করে সেখানে এগুলো প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন ভিসটিকা ও গ্রুবিসকি।

এর কয়েক বছর পর তারা সম্পর্ক বিচ্ছেদের নানা স্মৃতি সংগ্রহে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একটি অভিযান পরিচালনা করেন। আর্জেন্টিনা থেকে ফিলিপাইন, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে যুক্তরাজ্যসহ ২০টি দেশ ভ্রমণ করে বিভিন্ন ধরনের স্মৃতি সংগ্রহ করেন তারা। চার বছর পর ২০১০ সালে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয় এই জাদুঘর।

এরপর ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে আরেকটি শাখা প্রতিষ্ঠা করেন তারা।

এই জাদুঘরে বিচ্ছেদের স্মৃতি হিসেবে বেশকিছু উদ্ভট বস্তু রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- একটি কুঠার, যা জমা দিয়েছেন একজন নারী। এই কুঠার দিয়ে তিনি তার সাবেক প্রেমিকের বাড়ির সব আসবাবপত্র ভেঙে টুকরো টুকরো করেছিলেন।

আরেকজন নারী জমা দিয়েছেন এক জোড়া গোলাপী বর্ণের কৃত্রিম স্তন, যা তার সাবেক প্রেমিক যৌনমিলনের আগে তাকে পরাতেন।

একজন পুরুষ জমা দিয়েছেন, তার সাবেক প্রেমিকার জমানো বেশ কিছু প্লে-বয় ম্যাগাজিন, যেগুলো বিচ্ছেদের পর তিনি নিতে ভুলে গেছেন।

অন্য একজন নারী জমা দিয়েছেন, একজোড়া সিলিকনের স্তন, যা তার প্রেমিক তাকে ব্যবহার করতে বাধ্য করেছিলেন। বিচ্ছেদের পর তিনি তা খুলে ফেলেন।

এরকম হাজারো স্মৃতি সংরক্ষণ করা হয়েছে এই জাদুঘরে।

মজার বিষয় হচ্ছে, এসব স্মৃতির সাথে প্রেমিক-প্রেমিকার নানা ধরনের উক্তিও শোভা পাচ্ছে জাদুঘরে। এসব উক্তি থেকে দর্শনার্থীরা ধারণা নিতে পারেন তাদের জীবনের চাল-চলন। তবে এসব উক্তিতে কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ মার্চ ২০১৭/মারুফ/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়