ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

ম্যাজিকে কানাডা কাঁপাচ্ছেন চট্টগ্রামের ফারহানুল

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৯, ২০ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ম্যাজিকে কানাডা কাঁপাচ্ছেন চট্টগ্রামের ফারহানুল

রেজাউল করিম, চট্টগ্রাম : মাত্র ২৫ বছর বয়সী যুবক ফারহানুল ইসলাম। কৈশোর থেকে ম্যাজিকের প্রতি ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা থেকেই বিশ্বপরিমণ্ডলে নিজেকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন চট্টগ্রামের পূর্ব মাদারবাড়ি এলাকার ফারহানুল।

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে কানাডায় আন্ডারওয়াটার এস্কেপ ম্যাজিক এবং হলভর্তি হাজার হাজার দর্শককে মুহূর্তে সম্মোহিত করে সমগ্র কানাডায় ঝড় তুলতে সক্ষম হলেও বাংলাদেশ ও চট্টগ্রামে এই যুবক যেন অপরিচিত। দেশের এই জাদুশিল্পী আন্তর্জাতিকভাবে সুনাম অর্জন করলেও বাংলাদেশে তার তেমন পরিচিতি ঘটেনি। অথচ প্রায় ৭ বছর ধরে ফারহানুল কানাডার কুইবেক, মন্ট্রিয়েলসহ বিভিন্ন রাজ্যে ম্যাজিক শো করছেন।

কানাডায় ফারহানের শো-মানেই হাজার হাজার দর্শক। টিকেট নিয়ে হাহাকার। ইউরোপ আমেরিকার বড় বড় জাদুশিল্পীর সঙ্গে পারফর্ম করে একজন বাংলাদেশি হিসেবে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। এ ছাড়া ফারহান কানাডীয় টেলিভিশনে ম্যাজিক শো করে সুনাম অর্জন করেছেন। বাংলাদেশে কেউ তার নাম না জানলেও কানাডায় তিনি একজন সেলিব্রেটি জাদুশিল্পী। ফারহান যেখানেই যান সেখানে তাকে ঘিরে ধরে অটোগ্রাফ শিকারীরা।

ফারহানুল ইসলাম জন্মেছেন চট্টগ্রাম মহানগরীর সদরঘাট থানার আওতাধীন পূর্ব মাদারবাড়ি এলাকায়। পড়ালেখা শুরু হয় চট্টগ্রাম গ্রামার স্কুলে। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন সব কিছু নিয়ে কৌতূহলী, অত্যন্ত মেধাবী এবং ডানপিটে স্বভাবের।

রাইজিংবিডির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে ফারহানুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বয়স যখন ১৪ বছর তখন থেকেই মূলত আমি ম্যাজিকের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ি। বিশেষ করে টেলিভিশনে এএক্সএন চ্যানেলে ডেভিড ব্লেইন এর শো আমাকে মোহবিষ্ট করে রাখতো। ডেভিড ব্লেইন-এর শো দেখতে দেখতেই আমি ম্যাজিকের নানা কৌশল আত্মস্থ করতে থাকি নিজস্ব গবেষণার মাধ্যমেই।’

ফারহানুল ইসলাম বলেন, ‘১৬ বছর বয়সেই আমি চট্টগ্রামের বিভিন্ন শো-তে নিজের কৌশলে জাদু প্রদর্শন করি। একই বছর প্রথম একটি বাংলাদেশি টিভি চ্যানেলে ম্যাজিক শো করার সুযোগ পাই।’

ফারহানুল ইসলাম জানান, পারিবারিক সিদ্ধান্তে ২০১১ সালে ১৯ বছর বয়সে উচ্চ শিক্ষার জন্য কানাডা চলে আসেন তিনি। এর পর ভর্তি হন কানাডার কনকোর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল বিজনেজ বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখার সময় চলতে থাকে জাদু চর্চা। এ পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সহপাঠীদের মাধ্যমে ফারহানের ম্যাজিকে পারদর্শীতা পুরো ক্যাম্পাসে জানাজানি হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০১২ সাথে প্রথম কানাডীয় টিভি চ্যানেল সিইউটিভিতে শো করার সুযোগ পান ফারহানুল ইসলাম। এই শো-তে ইউরোপ আমেরিকার বড় বড় ম্যাজিশিয়ানদের সামনে নিজের ব্যাতিক্রমী শো প্রদর্শন করে আন্তর্জাতিকভাবে সুনাম কুড়াতে সক্ষম হন।



সিইউটিভির ম্যাজিক শো রিলিজ হওয়ার পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি ফারহানুল ইসলামকে। একের পর এক ডাক পেতে থাকেন কানাডার বিভিন্ন শোতে। ফারহানুল ইসলাম মোটা স্টিলের শেকলে নিজের হাত পা বেঁধে পানির নিচে ‘আন্ডার ওয়াটার স্কেইপ’ ম্যাজিক প্রদর্শন করে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সমগ্র কানাডায় আলোড়ন সৃষ্টি করেন। এ ছাড়া তিনি ভিন্নধর্মী ম্যাজিক প্রদর্শনে সমগ্র কানাডায় আলোচিত। বিশেষ করে ফারহানুল মুহূর্তের মধ্যে হলভর্তি হাজার হাজার দর্শককে হাইপোনোসিস ম্যাজিকের মাধ্যমে সম্মোহিত করে ফেলতে পারেন। তাই এই সম্মোহন কৌশলের কারণে কানাডায় ফারহানুল ইসলামের শো মানেই হল ভর্তি দর্শক। টিকেট কেনার প্রতিযোগিতা।

ফারহান যে ধরনের ম্যাজিক প্রদর্শন করেন তার মধ্যে রয়েছে ক্লোজ আপ (স্ট্রিট ম্যাজিক), মেন্টালিজম (মাইন্ড রিডিং) ম্যাজিক, আন্ডার ওয়াটার এস্কেপ, সম্মোহনি ম্যাজিক।

ম্যাজিক এতো জনপ্রিয় হওয়ার কারণ সম্পর্কে ফারহানুল ইসলাম জানান, কানাডার মানুষ সব সময় নতুন কিছু চায়। তারা আশা করে ম্যাজিকের মাধ্যমে সাময়িক সময়ের মধ্যে সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন করে মোহবিষ্ট করে ফেলা। ঠিক সেই কাজটি করতে পারেন তিনি। হলভর্তি মানুষের মাইন্ড রিড করতে পারেন এবং মুহূর্তেই তার জাদু কৌশলে সবাইকে সম্মোহিত করতে পারেন। এর ফলে ফারহানের ম্যাজিক শো দেখতে ভিড় করে হাজার হাজার মানুষ।

ম্যাজিক শেখা এবং ভবিষ্যত স্বপ্ন সম্পর্কে ফারহান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আগামীতে আমার ভেগাস আন্তর্জাতিক ম্যাজিক শোতে অংশ নেওয়ার স্বপ্ন রয়েছে। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ম্যাজিশিয়ানরা এই শো-তে অংশ নিয়ে থাকে। একজন বাংলাদেশি হিসেবে সেই শো-তে যাওয়া আমার স্বপ্ন।’

ম্যাজিক শেখা প্রসঙ্গে ফারহান বলেন, ‘আমি কারো কাছ থেকে ম্যাজিকের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করিনি। নিজস্ব গবেষণার মাধ্যমে আমি প্রতিদিনই শিখি। নিজের মেধা ও গবেষণা কার্যক্রমে আমি নিজেই ম্যাজিকের নানা কলাকৌশল আবিষ্কার করি এবং শো-তো প্রদর্শন করি।’

ব্যক্তিগত জীবনের অবিবাহিত ফারহানুল ইসলাম কানাডায় মার্কেটিং অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসে পড়ালেখা শেষ করে একটি টিউটোরিয়াল ফার্ম চালু করেছেন। এই ফার্ম থেকে বাংলাদেশিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ছাত্র/ছাত্রীদের কনসালটেন্সি সার্ভিসসহ অন্যান শিক্ষা বিষয়ক সেবা প্রদান করা হয়।

ফারহানের বাবা চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, মা শিরিন আকতার গৃহিনী। তিন ভাই বোনের মধ্যে ফারহান সবার বড়। তার ছোট ভাই কানাডায় বিজনেস বিষয়ে অধ্যায়নরত। একমাত্র বোন বাংলাদেশে মেডিসিন বিষয়ে পড়ালেখা করছে।




রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/২০ অক্টোবর ২০১৭/রেজাউল/রুহুল/উজ্জল

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়