ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মুশফিকের লড়াইয়ে দর্শক বাকিরা

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০৬, ১৪ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মুশফিকের লড়াইয়ে দর্শক বাকিরা

ইয়াসিন হাসান : ভালো বোলিংয়ের পর হাল ছেড়ে দেওয়া। ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত শুরুর পর নির্বিষ সমাপ্তি। ফলাফল প্রত্যাশিত। নিদাহাস ট্রফি ভারতের কাছে ১৭ রানে হারল বাংলাদেশ। 

শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসে পেয়েছিল বাংলাদেশ। হারতে থাকা দলটি পেয়েছিল প্রাণ। বুক ভরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে চেয়েছিল টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের ব্রান্ড তৈরি করতে। কিন্তু এক ম্যাচ পরই নিজেদের চেনা রূপে বাংলাদেশ। বোলিং-ব্যাটিং দুই বিভাগেই যদি ফ্লপ বলা হয় তাহলেও ভুল হবে না।

আর প্রেমাদাসায় টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ৩ উইকেটে ১৭৬ রান করে ভারত। সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ ১৫৯ রানের বেশি করতে পারেনি।

তামিমের শুরুটা ভালো ছিল। শার্দুল ঠাকুরকে ‍তৃতীয় ওভারে তিন চার ও এক ছক্কায় ১৯ রান তুলেছিলেন। ব্যাটিং ধারাবাহিকতায় রান তুলছিলেন দ্রুত। কিন্তু তাকে সমর্থন করতে পারেননি কেউ। বাংলাদেশ শিবিরে শুরুর ধাক্কাটি দেন ওয়াসিংটন সুন্দর।

প্রথমে লিটন দাস এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে স্ট্যাম্পড হন। সৌম্য সরকার হন সরাসরি বোল্ড। সবথেকে বেশি হতাশ করেন তামিম। ওয়াসিংটনের বলে সরে গিয়ে স্লগ সুইপ করতে বোল্ড হন। ৬ ওভারে ৪৮ রানে বাংলাদেশ হারায় ৩ উইকেট।

 


বাংলাদেশ-ভারতের ম্যাচের একটি মুহূর্ত || (ফাইল ছবি)


সেখানেই ম্যাচ হেরে যায় বাংলাদেশ। এরপর মাহমুদউল্লাহ (১১) ও সাব্বির রহমান (২৭) আউট হলে বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন মুশফিক। ৭২ রানের ইনিংস খেলে পরাজয়ের ব্যবধান কমান গত ম্যাচের নায়ক। ৫৫ বলে ৮ চার ও ১ ছক্কায় ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংসটি খেলেন মুশফিক।  

শেষ ওভারে ২৮ রান দরকার ছিল বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ যোগ করতে পারে মাত্র ১০ রান। ব্যাটিংয়ে মুশফিকের একার লড়াইয়ে বাকিরা ছিলেন দর্শক। একটু পরিকল্পিত ব্যাটিং করতে পারলে বাংলাদেশ আজ ভারতকে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টিতে হারাতেও পারত।  

টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্তের পর শুরুটা মন্দ ছিল না বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর্যন্ত বাংলাদেশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণেই রেখেছিল ম্যাচ। কিন্তু শেষ ৫ ওভারেই শেষ স্বপ্ন। দুই দলের ব্যবধান গড়ে দেয় শেষ ৫ ওভার। বাংলাদেশ যেখানে শেষ ৫ ওভারে ‍তুলে মাত্র ৪৩ রান সেখানে ভারতের সংগ্রহ ৫৯। ১৬ রানের বড় পার্থক্য যে এখানেই। আর পরাজয়ের ব্যবধান মাত্র এক রান বেশি।   

শুরুতে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের হাত খুলে মারতে দেননি বোলাররা। তাসকিনের পরিবর্তে নামা আবু হায়দার রনি প্রথম ওভারে দেন মাত্র ২ রান। দ্বিতীয় ওভারে নাজমুলের শুরুটা হয়েছিল বাজে। দুই বাউন্ডারিতে দেন ৯ রান। তবে পরবর্তীতে ফিরে আসেন দারুণভাবে। তবে মাহমুদউল্লাহর অধিনায়কত্ব নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন! প্রথম পাঁচ ওভার পাঁচ বোলার ব্যবহার করার ব্যাখ্যা কি হতে পারে? 

পাওয়ার প্লে’র পরের চার ওভারে দ্রুত রান তুলেন রোহিত শর্মা ও শেখর ধাওয়ান। ৬ ওভারে ভারত পায় ৪৯ রান। সপ্তম ওভারের তৃতীয় বলে উইকেটের স্বাদ পেতেন অপু। ধাওয়ান ডাউন দ্য উইকেটে এসে তুলে মারতে গিয়েছিলেন অপুকে। মিড উইকেটে ফিল্ডিং করা লিটনের হাত ফসকে বেরিয়ে যায় বল, গড়িয়ে যায় বাউন্ডারিতে। 

 

বাংলাদেশ-ভারতের ম্যাচের একটি মুহূর্ত || (ফাইল ছবি)

 

সেই ধাওয়ানকে দশম ওভারে ফেরান রুবেল হোসেন। ১৪৩ কি.মি. ইয়র্কার বলে উপচে যায় ধাওয়ানের মিডল স্ট্যাম্প। ২৭ বলে ৩৫ রান করে ফেরেন ভারতীয় ওপেনার। দশ ওভারে ভারতের রান ১ উইকেটে ৭১। পরের ৫ ওভারেও ধারাবাহিক ব্যাটিং করে যান রোহিত শর্মা ও সুরেশ রায়না। ১৫ ওভারে তাদের রান ছিল ১১৭।

এরপরই পাল্টে যায় ভারতের ব্যাটিং। শেষ ৫ ওভারে তারা তুলে ৫৯ রান। তাতেই পাহাড় সমান পুঁজি পায় ভারত। তবে রুবেলের শেষ ওভার ছিল দুর্দান্ত। সেঞ্চুরির পথে থাকা রোহিতকে সেঞ্চুরি তো পেতে দেননি, বরং মাত্র ৪ রান দেন ওভারে। অর্থাৎ ১৬ থেকে ১৯ ওভারে ৫৫ রান পায় ভারত। ১৬তম ওভারে মাহমুদউল্লাহ খরচ করেন ৯ রান। পরের ওভার থেকে খোলস থেকে বেরিয়ে আসে রায়না-রোহিত।

মুস্তাফিজের ১৭তম ওভার থেকে ১৪ এবং রনির করা ১৮তম ওভার থেকে ২১ রান তুলে ব্যাটসম্যানরা। ১৯তম ওভারে ফিরে মুস্তাফিজ দেন আরও ১১ রান। তাতেই সবশেষ বাংলাদেশের। আগের তিন ওভারে রান রেট যেখানে ১৫ এর ওপরে সেখানে শেষ ওভারে (২০তম) ৪ রান দিয়ে রুবেল নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখেন। প্রথম ও শেষ বলে যথাক্রমে রায়না (৪৭) ও রোহিতকে (৮৯) আউট করেন রুবেল। ৬১ বলে ৫ চার ও ৫ ছক্কায় করেন ৮৯ রান রোহিত। আর সুরেশ রায়না ৩০ বলে করেন ৪৭ রান।

৩টি উইকেটের ২টি রুবেলের পকেটে। ৪ ওভারে ২৭ রান দেন নিজ বোলিংয়ে। ভালো বোলিং করেন অপুও। উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে খরচ করেন ২৭ রান, যার ১২টি বল ছিল ডট। প্রথম ৩ ওভারে ২২ রান দেওয়া রনি শেষ ওভারে ২১ রান দিয়ে বোলিং ফিগার নষ্ট করেন। রান খরচ করেছেন মুস্তাফিজও। ৪ ওভারে দিয়েছেন ৩৮ রান। 

ভারতের বিপক্ষে ছয় টি-টোয়েন্টিতে একটিতেও জয় নেই বাংলাদেশ। আজ ব্যর্থতায় পাতায় যোগ হলো আরেকটি অধ্যায়। নিদাহাস ট্রফির শেষ ম্যাচে শুক্রবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। ফাইনালের টিকেট পেতে হলে শেষ ম্যাচে পেতে হবে জয়। ম্যাচটা ডু অর ডাই। 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ মার্চ ২০১৮/ইয়াসিন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়