ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বাঙালি ১২ ভূত

গোবিন্দ তরফদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৩৮, ২৭ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাঙালি ১২ ভূত

প্রতীকী ছবি

গোবিন্দ তরফদার : ভূত নিয়ে বাংলা সাহিত্যে প্রচুর গল্প, উপন্যাস লেখা হয়েছে। সিনেমাও হয়েছে কম নয়। তবে বাঙালি ছেলেমেয়েদের ভূতের সঙ্গে পরিচয় শিশুকাল থেকেই নানি-দাদির কাছ থেকে ভূতের গল্প শুনে। সে এক অনন্য অনুভূতি।

 

ছোটবেলায় এসব ভূতের গল্প আমাদের মনে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি করত। মনে জাগত অনেক প্রশ্ন। বলাবাহুল্য সে সব প্রশ্নের উত্তর অধিকাংশ সময় জানা হতো না। এর একটি কারণ ছিল ভয়। সেই ভয় কাটিয়ে আমরা এখন বড় হয়েছি। চলুন আজ নেই, ১২ রকম ভূতের কথা।  

 

রাক্ষস : এরা বিশ্রি সব রোগে আক্রান্ত থাকে, এদের বিষ দাঁত থাকে। আঙুলগুলোতে লম্বা লম্বা নখ থাকে। মানুষের মাংস এদের প্রধান খাদ্য। লোককথা থেকে জানা যায়, এরা নাকি মানুষের গন্ধ পেলেই চিৎকার করে উঠত। ওই যে মনে পড়ে ‘হাউ মাউ খাউ, মানুষের গন্ধ পাউ’। এরাই হলো রাক্ষস।

 

খোক্ষস : এরা রাক্ষসের ছোট রূপ। তবে এরা রাক্ষসের চেয়েও অনেক ভয়ঙ্কর এবং ক্ষতিকারক। আসলে ছোট বলেই তারা অনেক দুষ্ট। আর হ্যাঁ, এদের রাক্ষসের ছোট ভাইও বলা হয়।

 

পেত্নী : এরা অবিবাহিত নারী। ধারণা করা হয় অতৃপ্ত বাসনা নিয়ে যে তরুণী মারা যায় তারাই পেত্নী হয়। তারা যে কোনো রূপ ধারণ করতে পারে এবং শেওড়া গাছে বাস করে। শেওড়া গাছকে অনেকে সংক্ষেপে বলে শড়া গাছ। শড়া গাছে পেত্নী থাকে, এই বিশ্বাসের কারণে গাছটির একটি আঞ্চলিক নাম পেত্নীশড়া গাছ।

 

শাকচুন্নী : এরা বিবাহিতা নারী। এদের সাদা অথবা লাল শাড়িতে দেখা যেত, হাতে শাঁখা এবং পলা থাকত। এরা পুকুর পাড়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। কোনো সুন্দরী বড়লোক ঘরের বউকে পেলে শাকচুন্নী ঝাঁপিয়ে পড়ে তার ওপর। মানে হলো তার দেহে ভর করে। যাতে সে তার বৈবাহিক জীবন আবার শুরু করতে পারে।

 

মামদো ভূত : লোককথা থেকে জানা যায় যে, এই মামদো ভূত থাকে পুরাতন কবরস্থানের আশেপাশে। এরা খুবই দুষ্ট স্বভাবের। অপমৃত্যুর ফলে এই ভূতের জন্ম হয়।

 

স্কন্ধকাটা : মাথা কেটে যাওয়ায় যাদের মৃত্যূ ঘটে তারাই পরবর্তীতে স্কন্ধকাটা ভূতে পরিণত হয়। মুরুব্বীদের কাছ থেকে জানা যায়, এরা সাধারণত নিজেদের মাথা খুঁজে বেড়ায় সারাক্ষণ। তারা একা একা হেঁটে যাওয়া পথিকের সাহায্য চায়। তাদের মাথা খুঁজে দেবার জন্যে। এমনকি তারা পথিকদের অনেক সময় হিপনোটাইস করে যেন তারা তাকে সাহায্য করে তার হারিয়ে যাওয়া মাথা খুঁজে দেয়।  

 

ব্রহ্মদৈত্য : এরা ব্রাহ্মণের আত্মা থেকে জন্মায়। তাদের গায়ে পৈতা জরানো থাকে এবং তারা বিভিন্ন ধরনের মন্ত্র উচ্চারণ করে। তবে অনেকের মাঝে দ্বিমত পাওয়া যায়। কেউ বলেন তারা উপকারি আবার কেউ বলেন তারা ভয়ঙ্কর মাত্রায় খারাপ।

 

যক্ষ : এরা হলেন লুকায়িত সম্পদের রক্ষক। এদের সম্পদের দিকে নজর দিলেই এরা হিংস্র হয়ে যায়। ড্রাগনের সোনার ডিম পাহারা দেবার মতো ঘটনা তাদের কারণেই শোনা যায়। যক্ষের ধন-কথাটির উৎপত্তিও তাদের কারণে। জ্ঞানীরা বলেন, যারা লোভে পড়ে নিজেদের সারা জীবন ধন সম্পত্তি আগলে রেখে চলে তারাই মরার পরে যক্ষতে পরিণত হয়। তারা এই পৃথিবীতে আটকা পড়ে থাকে এবং আজীবন এই সম্পত্তি পাহারা দিয়েই যায়।

 

পিশাচ : যখন গভীর রাত নেমে আসে, তখন এরা শ্মশান, কবরস্থানে ঘুরে বেড়ায় খাবারের সন্ধানে। এরা গলাপঁচা মৃতদেহ খায়। তারা মানুষের হবহু নকল করতে পারে এবং মানুষের মনকে কলুষিত করে নানা অঘটন ঘটায়।

 

নিশি : এরা প্রতিহিংসাপরায়ণ আত্মা। গভীর রাতে এরা মানুষকে তাদের প্রিয় আপনজনের কণ্ঠে ডেকে বেড়ায়। এটা ‘নিশির ডাক’ হিসেবে পরিচিত। তারা মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে ক্ষতি করে। লোকমুখে জানা যায়, নিশির ডাক মঙ্গলবার বিকেলে এবং শনিবার সন্ধ্যার পরে বেশি শোনা যায়।

 

আলেয়া : এলাকার মুরুব্বীদের মতে, যেসব জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে মারা যায় তারা আলেয়াতে পরিণত হয়। এটা এক ধরনের আলোর মতো, এদের জলাভূমিতে দেখতে পাওয়া যায়। এরা সাধারণত অন্য জেলেদের মৃত্যু ঘটায়। আবার অনেকে বলে, আলেয়া হারিয়ে যাওয়া পথিকদের আলো দেখিয়ে সঠিক পথে নিয়ে যায়।

 

মেছো ভূত : এরা মাছ খেতে ভালোবাসে। এরা বাড়ির আশপাশে ঘুরোঘুরি করে এবং মাছের গন্ধ পেলে ছুটে যায়। তবে এরা তাদের আঘাত করে যারা তাকে তার লুটের মালামালের ভাগ দিতে অস্বীকৃতি জানায়।

 

এই ছিল বারো ভূতের গল্প। এখনকার ছেলেমেয়েরা হয়তো এসব বিশ্বাসই করবে না। না করলেও ক্ষতি নেই। কারণ ভূত সত্যি আছে কি নেই এই প্রশ্নের উত্তর তো আজও মেলেনি। ওই যে, কথায় বলে তর্কে বহুদূর। এ নিয়ে তর্ক এখনও চলছেই। তবে এ কথা ঠিক, ভূতের গল্পেও আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। তারপরও এসব ভূতেদের গল্পের মধ্যে আলাদা রকম এক মজা ছিল, আছে এবং থাকবে।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ নভেম্বর ২০১৬/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়