ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

উর্ধ্বমুখী বাংলাদেশের ক্রিকেটের সূচক

ইয়াসিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ২ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
উর্ধ্বমুখী বাংলাদেশের ক্রিকেটের সূচক

বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের অবস্থান ও আগামীর সম্ভাবনা, ২০১৬ সালে দুটি স্পষ্ট করেছে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডকে হারানোর সুখস্মৃতি দীর্ঘদিন মনে থাকবে ক্রিকেটপ্রেমীদের। অন্যদিকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ভারতের কাছে ১ রানের হার আজীবন আক্ষেপ হয়ে থাকবে বাংলাদেশের জন্য। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি; দুইয়ের অভিজ্ঞতা হয়েছে বাংলাদেশের। ঘটনাবহুল বছরের বিভিন্ন স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে রাইজিংবিডি’র ক্রীড়া বিভাগ। পাওয়া-না পাওয়ার হিসাব-নিকাশ তুলে ধরেছেন খেলাধুলা বিভাগের নিজস্ব প্রতিবেদক ইয়াসিন হাসান।
ফিরে দেখা ২০১৬ সালের বাংলাদেশ ক্রিকেট

 

জানুয়ারি : বছরের শুরুটা জিম্বাবুয়ে রবি পক্ষে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দিয়ে।১৫, ১৭, ২০ও ২২ জানুয়ারি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চারটি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। খুলনায় অনুষ্ঠেয় সিরিজে ২-২ ব্যবধানে ড্রকরে মাশরাফির দল।জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটারদের ছাড়াই ১২জানুয়ারি থেকে শুরু হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের চতুর্থ আসর। ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টুর্নামেন্টে অংশ নেয় ওয়ালটন সেন্ট্রাল জোনসহ আরও ৩ দল। ২৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় অনূর্ধ্ব-১৯ যুববিশ্বকাপ । ১৬ দলের এ আসরের পর্দা উঠে চট্টগ্রামে বাংলাদেশও ইংল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে । ইংলিশ যুবাদের হারিয়ে বিশ্ব মঞ্চে শুরুটা দারুণ করেছিল মেহেদী হাসান মিরাজরা
 

 

ফেব্রুয়ারি : ভালোবাসা দিবস অর্থ্যাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্দা নামে যুব বিশ্বকাপের। মিরপুরে ফাইনালে মুখোমুখি হয় ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবীয় যুবাদের হাতে উঠে বিশ্বকাপের ট্রফি। তবে পুরো টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৬ ম্যাচে ২৪২ রান ও ১২ উইকেট নিয়ে মিরাজ পান শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। তার হাত ধরেই বাংলাদেশ বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান অর্জন করে। যুব বিশ্বকাপের রেশ কাটতে না কাটতেই টানা তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশে বসে এশিয়া কাপ টুর্নামেন্টের। ওয়ানডে ফরম্যাটের পরিবর্তে এবারের এশিয়া কাপটি হয়েছিল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। ২৪ ফেব্রুয়ারি এশিয়া কাপের পর্দা উঠে। ফাইনাল হয় ৬ মার্চ। স্বাগতিক বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভারতের সঙ্গে পঞ্চম দল হিসেবে এশিয়া কাপে অংশ নেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত। ভারতের কাছে প্রথম ম্যাচ হারের পর শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে বাংলাদেশ। কিন্তু ৬ মার্চ বৃষ্টিবিঘ্নিত ফাইনালে ভারতের কাছে বড় ব্যবধানে হারতে হয় বাংলাদেশকে।

 

 

মার্চ : এশিয়া কাপের মিশন শেষ হতে হতেই বাংলাদেশ উড়াল দেয় ভারতে। সেখানে বিশ্বকাপের প্রথম পর্বের (বাছাই পর্ব) লড়াই শেষে বাংলাদেশ মূল পর্বে জায়গা করে নেয়। ৯ মার্চ বাংলাদেশের বিশ্বকাপের মিশন শুরু হয়। ২৬ মার্চ ইডেনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াইয়ে ‘ব্যর্থ’ মিশন শেষ হয় বাংলাদেশের। মাঠের লড়াইয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশকে লড়াই করতে হয় মাঠের বাইরেও। ধর্মশালায় হল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানীর বিরুদ্ধে ওঠে সন্দেহজনক বোলিং অ্যাকশনের অভিযোগ। চেন্নাইয়ে দুজনকে বিশ্বকাপ চলাকালিন সময়ে পরীক্ষা দেওয়ানো হয়। দুজনের বোলিংই অবৈধ ঘোষণা করে আইসিসি।  মূল পর্বে পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হয় টাইগাররা। কোনো ম্যাচেই জিততে পারেনি বাংলাদেশ।

 

ব্যাঙ্গালুরুতে আফসোস বাড়ায় বাংলাদেশ। ভারতের মাটিতে ভারতকে হাতের মুঠোয় পেয়েও জয় নামক সোনার হরিণটি পাওয়া হয়নি বাংলাদেশের। মাত্র ১ রানের জন্য ইতিহাস গড়ার সূবর্ণ সুযোগ পেয়েও জয় পায়নি লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। জাতীয় দল যখন বিদেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টি খেলতে ব্যস্ত তখন দেশের মাটিতে বিসিএলের শিরোপার লড়াইয়ে মুখোমুখি চার দল। ১৭ মার্চ বিসিএলের শেষ রাউন্ডের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। নর্থ জোনের বিপক্ষে ড্র করে দ্বিতীয়বারের মত বিসিএলের শিরোপা ঘরে তুলে ওয়ালটন সেন্ট্রাল জোন। ৬ ম্যাচে ১ জয় ও ৫ ড্র’র সঙ্গে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে শিরোপার স্বাদ পায় ওয়ালটন।

 

 

এপ্রিল : বিশ্বকাপের মিশন শেষে দেশে ফিরে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে ছিলেন। শুধু জাতীয় দল না ঘরোয়া ক্রিকেটেও বিশ্রামে ছিল। ২২ এপ্রিল থেকে শুরু হয় জমজমাট ওয়ালটন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। দেশের ১২টি ক্লাব শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে মাঠে নামে। এর আগে প্লেয়ার বাই চয়েজ পদ্ধতিতে ক্রিকেটারদের দলে ভেড়ায় ক্লাবগুলো।

 

মে : এপ্রিলেশুরু হওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ মে মাসেও অনুষ্ঠিত হয়।

 

 

জুন : ওয়ালটন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের পর্দা নামে ২২ জুন। চার বছর ও তিন মৌসুম পর ঢাকা লিগের শিরোপা জিতে আবাহনী লিমিটেড। আকাশী-নীল শিবির সর্বশেষ লিগ জিতেছিল ২০১০-১১ মৌসুমে। তিন মৌসুমের শিরোপা খরা কাটিয়ে এবারের লিগের শিরোপা শোকেসে তোলে আবাহনী। এ সময়ে আলোচনায় ছিল তামিম ইকবালের আম্পায়ারের প্রতি অসদাচরণ।

 

 

বিকেএসপিতে আবাহনী ও প্রাইম দোলেশ্বরের ম্যাচে আম্পায়ারের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেন তামিম ইকবাল। অসদাচরণের দায়ে তামিম ইকবালকে এক লাখ টাকা জরিমানা ও এক ম্যাচের জন্য বহিষ্কার করা হয়। নাসির হোসেনকে জরিমানা করা হয় ২০ হাজার টাকা। এ মাসেই বিসিবি জাতীয় দলের খেলোয়াড় নির্বাচন প্রক্রিয়ার নতুন নিয়মকে অনুমোদন দেয়। নতুন নির্বাচক পদে আসেন মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হয় অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান, দলের ম্যানেজার ও প্রধান কোচকে।

 

 

জুলাই : ওয়ালটন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ শেষ হওয়ার পর লম্বা ছুটিতে যান ক্রিকেটাররা। এরই মধ্যে ঘরোয়া ক্রিকেটের সেরা পারফর্মারদের নিয়ে বিসিবি কন্ডিশনিং ক্যাম্পের আয়োজন করে। ২০ জুলাই দেশ সেরা ৩০ ক্রিকেটারকে নিয়ে শুরু হয় কন্ডিশনিং ক্যাম্প। ক্যাম্পে ছিলেন না মুস্তাফিজুর রহমান। মুস্তাফিজ উড়াল দেন সাসেক্সের হয়ে কাউন্টি ক্রিকেট মাতাতে। মাতাতে শুরু করেছিলেন ঠিকই। কিন্তু এক ম্যাচ পরই কাঁধে চোট পান বাঁহাতি এ পেসার। পরবর্তীতে ছুরি-কাঁচির নিচে যেতে হয় কাটার মাস্টারকে।

 

 

আগস্ট : ১১ আগস্ট মুস্তাফিজুর রহমানের কাঁধের অস্ত্রোপচার করানো হয়। লন্ডনের ক্রমওয়েল হাসপাতালে ৭০ মিনিটের মতো লাগে বাংলাদেশের তরুণ এই পেসারের বাঁ কাঁধের সমস্যা সারাতে। অন্যদিকে দেশের মাটিতে ২০ আগস্ট থেকে স্কিল অনুশীলন শুরু করে বাংলাদেশ। পাশাপাশি একাধিক প্রস্তুতি ম্যাচও খেলে টাইগাররা।

 

 

সেপ্টেম্বর : অক্টোবরে ইংল্যান্ড সিরিজ। এর আগে বিসিবি ক্রিকেটারদের ঝালিয়ে নিতে আফগানিস্তান ক্রিকেট দলকে আমন্ত্রণ জানায়। ২৫ ডিসেম্বর দুই দলের লড়াই শুরু হয়। ২০১৬ সালে এটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ। এর আগে ২০০৫ সালের ১১ নভেম্বর আফগানিস্তানের বিপক্ষে সব শেষ ওয়ানডে খেলেছিল বাংলাদেশ। ম্যাচ হারলেও মাশরাফির দল সিরিজ জেতে ২-১ ব্যবধানে। ২৫ সেপ্টেম্বর শুরু হয় ওয়ালটন জাতীয় ক্রিকেট লিগের ২০১৬-১৭ মৌসুমের খেলা। ঘরোয়া ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আসরে আট টি দল চারটি মাঠে অংশ গ্রহণ করে।

 


অক্টোবর : আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডের আগেই ঢাকায় পা রাখে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল। স্মরণকালের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হয় দলটিকে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩টি ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ। হাতের মুঠোয় থাকা প্রথম ম্যাচ হারের পর মিরপুরেই দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। কিন্তু তৃতীয় ম্যাচে সিংহের কাছে হারতে হয় টাইগারদের। ওয়ানডে সিরিজের পর চট্টগ্রামে দুই দল টেস্ট সিরিজে মাঠে নামে। শুরু হয় মেহেদী হাসান মিরাজের পদচারণা। চট্টগ্রামে তার কীর্তিতে (৭ উইকেট) ইংল্যান্ড বধের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ঢাকায় ঠিকই জয় পায় বাংলাদেশ। ১২ উইকেট নিয়ে মিরাজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের আগমণী বার্তা জানিয়ে দেন। মিরাজের হাত ধরেই ইংলিশ সাম্রাজ্য পতন শুরু হয়। দুই ম্যাচে ১৯ উইকেট নিয়ে মিরাজ ১২৯ বছরের রেকর্ড ভেঙে নিজের নাম সবার উপরে উঠান।
 

 

নভেম্বর : নভেম্বর থেকেই শুরু হয় বিপিএল দামামা। ৭ দল নিয়ে বিপিএলের আনুষ্ঠানিক পর্দা উঠে ৪ নভেম্বর। মাঠে খেলা গড়ায় ৮ নভেম্বর থেকে। বিপিএল মানেই বিতর্ক। এটা নতুন কিছু নয়। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। মাঠের বাইরে ‘বড় দোষ’ করায় জরিমানা করা হয় সাব্বির রহমান ও আল-আমিন হোসেনকে।

 

 

ডিসেম্বর : ৯ ডিসেম্বর বিপিএলের চতুর্থ আসরের পর্দা নামে। প্রথমবারের মতো শিরোপার স্বাদ পায় ঢাকা ডায়নামাইটস। তবে ঢাকার ঘরে আসে তৃতীয় শিরোপা। সাকিবের হাতে উঠে বিপিএলের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। খুলনা টাইটান্সের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১৪ ম্যাচে করেছেন ৩৯৬ রান। এছাড়া বল হাতে ১০ উইকেট ও ফিল্ডিংয়ে ৬ ক্যাচ রয়েছে খুলনার অধিনায়কের। তামিম ইকবাল মোস্ট ভেলুয়েবল খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। চিটাগং ভাইকিংসের অধিনায়ক তামিম ইকবাল এবারের বিপিএলে সর্বাধিক রান সংগ্রহ করেছেন। ১৩ ম্যাচে ৪৩.২৭ গড়ে তামিমের রান ৪৭৬। হাঁকিয়েছেন রেকর্ড ৬টি হাফসেঞ্চুরিও। চিটাগংকে অসাধারণ নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি ৪টি ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন দেশসেরা ওপেনার। ফিল্ডিংয়ে নিয়েছেন ৩টি ক্যাচ। বছরের শেষ প্রান্তে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ। জয় দিয়ে বছর শুরু করতে পারলেও শেষটা হয়েছে বিষাদে। তবে বছরের শেষ প্রান্তে সুখবর দিয়েছে আইসিসি। ২০১৬ সালের উদীয়মান ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পারফরম্যান্স বিবেচনায় মুস্তাফিজকে এই পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করা হয়।  এই সময়ে তিন ওয়ানডেতে মুস্তাফিজ নিয়েছেন ৮ উইকেট। আর ১০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নিয়েছেন ১৯ উইকেট।

 

 

বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাফল্যের সূর্য্য আলো ছড়াচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। উর্ধ্বমুখী বাংলাদেশের ক্রিকেটের সূচক। রঙিন জার্সিতেঅনেকটাই আলোকিত। সাদা পোশাকেও সাফল্যের পরশ পেতে শুরু করেছে টাইগাররা।

 

 

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ জানুয়ারি ২০১৭/ইয়াসিন/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়