ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘অ’ তেই অস্তিত্ব

শাহেদ হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৪৭, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘অ’ তেই অস্তিত্ব

শাহেদ হোসেন : স্বরবর্ণের প্রথম বর্ণ ‘অ’ এর প্রতি বরিশালের লোকদের প্রীতিটা অনেক বেশি। বিপদ-আপদে কিংবা বিস্মিত হলে তারা প্রায়ই ‘অ মোর খোদা’ বলে থাকেন। তবে কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত ‘অ’ এর সঙ্গে সম্পর্কটা কেবল বরিশালবাসীরই নয় বরং প্রতিটি ব্যঞ্জনধ্বনিরই বেশি। কারণ ব্রাহ্মী লিপি পরিবারের অন্তর্গত পূর্ব নাগরী লিপির এই ধ্বনিটির সঙ্গে যুক্ত না হলে কোনো ব্যঞ্জনধ্বনিই পূর্ণরূপে উচ্চারিত হয় না। উদহারণ চান? যেমন ধরুন ক্+অ = ক, খ্+অ= খ, গ্+অ=গ ইত্যাদি।

বরিশালবাসীতো সম্বোধনসূচকে ‘অ’ এর ব্যবহার শেষ করে দিলেন। কিন্তু সংস্কৃত ব্যাকরণ এবং তদনুসারী অন্যান্য ভাষার ব্যাকারণে ‘অ’ ও ‘অন’ নঞ্ অব্যয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন- অল্পতা, অপ্রশস্ততা। মধ্য বাংলায় ‘অ’ পূর্ণতা অর্থেও ব্যবহৃত হতো যেমন: অকুমারী = পূর্ণ যৌবনপ্রাপ্ত কুমারী। পাণিনি সংবৃত-বিবৃতভেদে দুই প্রকার  অ-কারের উল্লেখ করেছেন। সংবৃত অ-কার উচ্চারণে গলনালীর সঙ্কোচ। অতি, বই, রবি ইত্যাদি (এখানে অ- ধ্বনির উচ্চারণ ও-এর মতো হয়)। বিবৃত অ-কারের উচ্চারণে গলনালীর বিবার অর্থাৎ প্রসারণ করতে হয়। যেমন অন্ন, সহাস্য, সজীব, জল, ইত্যাদি।

সীতানাথ বসাক তার আদর্শ লিপিতে ‘অ’ দিয়ে লিখেছেন- অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করো। আর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর অ-তে লিখেছেন অজগর। মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনে কিন্তু ‘অ’ তার সরব উপস্থিতিই জানান দিয়েছিল। সেই ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত রাজনৈতিক অন্তর্কোন্দল (এখানেও সেই অ) যে কতোবার হয়েছে তার কোনো ইয়াত্তা নেই। অবাধ [ন=অ (নাই) বাধা যাহার] বাণিজ্যের এই যুগে নয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার দেশকে একঘরে করতে চাইলে সরব (স+অ) হয়ে উঠেছে চীন। তবে যুক্তরাষ্ট্র তার শত্রুদের ওপর অবরোধকে [অব-রুধ্ (আবরণকরা) + অ (ঘ্ঞ্-ভাবে)] শক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে প্রয়োগ করে এখনো।

‘অ’ ছাড়াতো দর্শণের অজ্ঞেয়বাদ চিন্তাই করা যায় না। তত্ব কথা বাদ দিয়ে এবার মানব-মানবীর সম্পর্কের কথায় আসি। অংগিলা (রংগিলা) মন ছাড়াতো আর আপনি প্রেম করতে পারছেন না। প্রেমের চূড়ান্ত পরিণতিতে বিয়ে করতে যাবেন? সেখানেও সগর্বে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে ‘অ’। হরিপদ ভৌমিক তার বিয়ের শব্দকোষে অকুলীন পাত্র (কুলীন বংশাজাত নয় এমন পাত্র/পাত্রী) থেকে অষ্টমঙ্গল (বিয়ের অষ্টম দিনে কনের বাড়িতে বিয়ের আসর তৈরি করে অষ্টমঙ্গলা লোকাচার অনুষ্ঠান) পর্যন্ত ১৬টি  ‘অ’ যুক্ত শব্দের বর্ণনা দিয়েছেন।

যে কোনো কাজের শুরুতে শুভ-অশুভ যাচাই এখনো করে বাঙালি। সে জন্য খনা তো বহু আগেই বলে গেছেন, ‘অশুভ বার্তা যে জন ভনে। তাহার মুখে যে জন শুনে। তিথি বার করে এক। সাথে হরি পরিমায়ু দেখ। এক তিন থাকে বান। যম-ঘর হৈতে টেনে আন। দুই চারি থাকে ছয়। অবশ্য তার মৃত্যু হয়।’

এখন চলছে ভাষার মাস। সামনে আসছে স্বাধীনতা দিবস। শত নির্যাতন-নিপীড়নেও বাঙালিকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি পাকিস্তানিরা। ‘৭১ এ’ অচতে অচতে বংগোবনদু ছেখ মুজিব লইরা পাকিচতানিগো বুঝায়া দিচে বানগালিগো দাবায়া রাখন যাইব না।’

তথ্যসূত্র :

 

ব্যবহারিক বাংলা অভিধান : বাংলা একাডেমি  

বাঙ্গালা ভাষার অভিধান : শ্রীজ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস কর্তৃক সঙ্কলিত ও সম্পাদিত

বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান : বাংলা একাডেমি

বঙ্গীয় শব্দকোষ: শ্রী হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

ঢাকাইয়া কুট্টি ভাষার অভিধান : সংকলন ও সম্পাদনা : মোশাররফ হোসেন ভূঞা।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ ফ্রেব্রুয়ারি ২০১৭/শাহেদ/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়