ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ঈ-ঈর্ষাতেই সর্বনাশ

শাহেদ হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২১, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঈ-ঈর্ষাতেই সর্বনাশ

শাহেদ হোসেন : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তার বর্ণ পরিচয়-এ দীর্ঘ ‘ঈ’ তে লিখেছেন ঈগল। তবে বাঙালি শিশুকে সেই ঈগল দেখাতে হলে চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাওয়া ছাড়া গতি নেই। ঠিক তেমনি বাংলা ভাষায় এখন দীর্ঘ ‘ঈ’ দিয়ে লেখা শব্দ কয়টি আছে তার খোঁজ নিতে গেলে অভিধান খুলে দেখা ছাড়া উপায় নেই। বাংলা একাডেমির ব্যবহারিক অভিধানে দীর্ঘ ‘ঈ’ দিয়ে লেখা শব্দ রয়েছে প্রায় ২০টি।

অন্যান্য বাংলা লিপির মত ব্রাহ্মীলিপি থেকেই এসেছে স্বরবর্ণের চতুর্থ বর্ণ 'ঈ'। ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত হয়ে  ী ' (দীর্ঘ-ঈকার) চিহ্ন হিসাবে বসে। যেমন : ক্+ঈ = কী।

খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর প্রথম দিকে ‘ঈ’ বোঝাতো চারটি বিন্দুকে। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতাব্দিতে এই বিন্দুগুলো ইংরেজি 'ইউ' বর্ণের রূপ পায়। ইউ-এর মতো বর্ণটি পরবর্তী সময়ে নানা রকমের পরিবর্তিত হয়ে খ্রিষ্টীয় দশম শতাব্দিতে ভিন্ন রূপ লাভ করে এবং ১৭শ শতাব্দিতে এসে বর্তমান ‘ঈ’ এর কাছাকাছি রূপ পায়।

উচ্চারণগতভাবে ‘ই’ আর ‘ঈ’ এর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। ‘এমন ঘটেছে বাঙলা ভাষার জন্মকাল থেকেই। চর্যাপদ-এ হ্রস্ব ও দীর্ঘ স্বরের কোনো পার্থক্য ছিলো না; পার্থক্য ছিলো না ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’-এ এমনকি পরে। চর্যাপদে পাওয়া যায় ‘সবরী’ ও ‘শবরি’, ‘জোই’ ও ‘জোঈ’, ‘লুই’ ও ‘লূয়ি’ প্রভৃতি শব্দ।’

বানান বিভ্রান্তির কারণেই ১৯৩৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় একটি কমিটি গঠন করে। ‘কমিটি কিছু তদ্ভব শব্দে হ্রস্ব ই-কার ও কিছু শব্দে দীর্ঘ ঈ-কার দেওয়ার বিধান দিয়েছিল। কালে কালে পানি অনেক দূর গড়িয়েছে। বর্তমানে বাংলা একাডেমি শুধু সংস্কৃত ছাড়া আর সব শব্দেই ‘ঈ’ ব্যবহার বাতিল করে দিয়েছে। এমনকি যে সব সংস্কৃত শব্দের বানানে ঈ বা ই হয় সেখানে শুধু ‘ই’ ব্যবহার করতে বলেছে।

সংস্কৃত ইন্‌-প্রত্যয়ান্ত শব্দগুলি কর্তৃ কারকের একবচনে দীর্ঘ ঈ-কারান্ত হয় । যেমন -অধিকারী, অধিবাসী, অভিমুখী, আততায়ী, সহকারী ইত্যাদি । সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী সমাসবদ্ধ কিংবা প্রত্যয়যুক্ত হলে এইসব শব্দের দীর্ঘ ঈ-কার আবার হ্রস্ব ই-কারে ফিরে যায়। যেমন, গুণিজন, মন্ত্রিসভা ইত্যাদি।

তৎসম শব্দ যদি বিশেষণ হয় তাহলে বানানের অন্তে ঈ-কার হবে।  যেমন  আগামী, যুদ্ধাপরাধী, আইনজীবী, কর্মচারী ইত্যাদি।

‘ঈয়’ প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ঈ-কার হবে। যেমন স্মরণীয়, করণীয়, আত্মীয় ইত্যাদি।

ব্যক্তির 'কারী'তে ঈ-কার হবে। যেমন সহকারী, আবেদনকারী, ছিনতাইকারী, পথচারী, কর্মচারী ইত্যাদি। ব্যক্তির 'কারী' নয়, এমন শব্দে ই-কার হবে। যেমন সরকারি, দরকারি ইত্যাদি। বিশেষণসূচক এবং স্ত্রীবাচক ঈ-প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ঈ-কার হয়। যেমন অষ্টমী, দশমী, চতুর্দশী, একাদশী ইত্যাদি।

ব্যক্তি কিংবা পুরুষ নির্দেশ করতে তৎসম শব্দে ঈ-কার হয়। যেমন জ্ঞানী, মিত্যব্যয়ী, গুণী, যাত্রী, জ্যোতিষী, মেধাবী, সন্ন্যাসী, মায়াবী, ধনী ইত্যাদি।

শব্দের শেষে ‘করণ’, ‘ভবন, ‘কৃত, ‘ভূত’ ইত্যাদি যুক্ত হলে ওইসব শব্দে ঈ-কার বসে। যেমন আধুনিকীকরণ, সমীভবন, স্তূপীকরণ ইত্যাদি।

 

স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন,

 

‘বহুরূপে সম্মুখে তোমার;

ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর?

জীবে প্রেম করে যেই জন,

সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।’

জীবে প্রেম করতে গেলে প্রথমেই দূর করতে হবে ঈর্ষা। সেই সঙ্গে মেজাজের পারদ যেন ঈষৎ (সামান্য) পরিমাণেও না চড়ে সেই ‘ঈহাটুকুনও (ইচ্ছা/স্পৃহা)’ পোষণ করতে হবে মনে।

তথ্যসূত্র :

প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম : বাংলা একাডেমি

ব্যবহারিক বাংলা অভিধান : বাংলা একাডেমি 

কতো নদী সরোবর বা বাঙলা ভাষার জীবনী : হুমায়ুন আজাদ।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/শাহেদ /শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়