ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে ব্যর্থ পণ্য (শেষ পর্ব)

সার্জিন শরীফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৮, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে ব্যর্থ পণ্য (শেষ পর্ব)

গুগল লাইভলি, জুজ, দ্য নুক, এইচপি টাচপ্যাড, ফেসবুক হোম, স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট ৭ (ঘড়ির কাটার দিকে)

সার্জিন শরীফ : নতুন পণ্য উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সবসময়ই কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং। পণ্য বাজারজাতকরণের পর তা ভোক্তাদের কাছে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকে নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানগুলোর। এ কারণেই উৎপাদনের আগে এবং পরে ভোক্তাদের মন জয় করার জন্য নিত্য নতুন পণ্যের পাশাপাশি বহুজাতিক জায়ান্ট কোম্পানিগুলো বিভিন্ন বাজারজাতকরণ পদ্ধতিরও আশ্রয় নিয়ে থাকে।

শত জল্পনা-কল্পনা আর ব্যবসায়িক কৌশলের পরেও অনেক সময়ই বড় বড় নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে গুণতে হয় লোকসান। কখনো কখনো লোকসান এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে উৎপাদিত পণ্যটি ভোক্তা সাধারণের মন জয় করতে না পেরে শেষ প্রতিযোগিতার বাজার থেকে হারিয়ে যায় চিরতরে।

পেপসি থেকে নেটফ্লিক্স, মাইক্রোসফট থেকে ম্যাকডোনাল্ড’স এর মতো নামজাদা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকেও তাদের কোনো কোনো পণ্য বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় শিকার হয়েছে এমন বিড়ম্বনার।

বিশ্ব বাজারে সুবিখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন সময়ে উৎপাদিত এমন কিছু ‘দুর্ভাগা’ পণ্য নিয়ে এ প্রতিবেদন। যেগুলো ভোক্তাদের কাছে জনপ্রিয় হওয়া তো দূরে থাক বাজারে আসার পরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় লোকসানী পণ্য হিসেবে স্বীকৃত হয়ে আছে। এ নিয়ে তিন পর্বের প্রতিবেদনের প্রথম পর্বে ৯টি এবং দ্বিতীয় পর্বে ৮টি পণ্যের তথ্য প্রকাশিত করা হয়েছিল। আজ শেষ পর্বে থাকছে আরো ৮টি ‘দুর্ভাগা’ পণ্য।

২০০৭ – জুস্ট : ২০০৭ সালে স্কাইপ আবিষ্কর্তাদের আরো একটি প্রচেষ্টা ছিল অনলাইন টেলিভিশন সার্ভিস ‘জুস্ট’। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, সে বছরই নিউজ কর্পোরেশন এনবিসি এবং ডিজনি’র যৌথ প্রযোজনায় বাজারে আসে ‘হুলু’। ফলশ্রুতিতে অন্ধকারেই থেকে যায় ‘জুস্ট’ প্রজেক্ট।

২০০৮ - গুগল লাইভলি : ২০০৮ সালে এসে গুগল ‘ভার্চুয়াল লাইফ’ বলে খ্যাত ‘দ্য সেকেন্ড লাইফ’ নামক সোশ্যাল গেম এর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার জন্য ‘গুগল লাইভলি’ সার্ভিস চালু করে। কিন্তু এটি জনপ্রিয়তা লাভে সক্ষম হয়নি। ২০০৮ সালের জুন মাসে চালু করার পরে সে বছরেরই নভেম্বরে গুগল বন্ধ করে দেয় এই সার্ভিসটি।

২০০৯ – জুজু : অ্যাপলের আইপ্যাডের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার জন্য ২০০৯ সালে একই দামে অর্থাৎ ৪৯৯ ডলারে বাজারে আসে জুজু যার অন্য নাম ‘ক্র্যাঞ্চপ্যাড’। কিন্তু অ্যাপলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে পরের বছরেই ব্যবসা গুটিয়ে নেয় ‘জুজু’।

২০০৯ - দ্য নুক : বার্নিস অ্যান্ড নোবেল কোম্পানি ২০০৯ সালে বাজারে আনে ই-বুক রিডার ‘দ্য নুক’। কিন্তু এটির মূল্য ছিল চড়া, ব্যবহার করাও ছিল তুলনামুলক কঠিন এবং যা ডাটা সিঙ্ক্রোনাইজেশনে ছিল একেবারেই অক্ষম। আর তাই ভোক্তারাও এটিকে গ্রহণ করেননি।

২০১১ – কুইকস্টার : ২০১১ সালে নেটফ্লিক্স এর নির্বাহী কর্মকর্তা রিড হেস্টিংস ‘কুইকস্টার’ নামে ডিভিডি সার্ভিস চালু করার ঘোষণা দেন। কিন্তু ব্যাপক সমালোচনার মুখে তিনি মাত্র ২৩ দিনের মাথায়ই এই ঘোষণা থেকে সরে আসতে বাধ্য হন। একইসঙ্গে নেটফ্লিক্স একটি প্লাগ-ইনও প্রস্তুত করে যার কাজ ছিল ভোক্তাদের বাড়িতে অর্ডারমাফিক গেমিং ডিভিডি পৌঁছে দেয়া। এখানেও ব্যর্থ হয় নেটফ্লিক্স। বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যায় ‘কুইকস্টার’।

২০১১ - এইচপি টাচপ্যাড : প্রথমবারের মতো বাজারজাতকরণের মাত্র দেড় মাসের মাথায়ই হিউলেট প্যাকার্ড (এইচপি) তাদের পোর্টেবল ডিভাইস এইচপি টাচপ্যাড আর তার অপারেটিং সিস্টেম ‘ওয়েব ওএস’ এর উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। যদিও এটি সব দিক থেকেই একটি ভালো ডিভাইস ছিল তবুও কোনো নতুনত্ব না থাকায় এটি ভোক্তা সাধারণের চিত্ত আকর্ষণে ব্যর্থ হয়।

২০১৩ - ফেসবুক হোম : বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ব্যবসা সফল ওয়েবসাইট ফেসবুক ২০১৩ সালে স্মার্টফোনের হোমস্ক্রিন হিসেবে ইউজারদের কাছে নিয়ে আসে ‘ফেসবুক হোম’। কিন্তু জাকারবার্গের এই প্রজেক্টটি ইউজারদের মন যোগাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। কারণ যখন আপনার মোবাইলের হোমস্ক্রিন কোনো অ্যাপস এর কারণে আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে, তখন স্বাভাবিকভাবেই আপনি সেটি পছন্দ করবেন না। এছাড়া অ্যাপসটি বেশি মেমোরি এবং ব্যাটারি খরচ করে। এসব কারণেই ব্যবহারকারীরা ধীরে ধীরে এর থেকে বিমুখ হয়ে পড়েন।

২০১৬ - স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট ৭ : ‘বিধ্বংসী’ স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট ৭ এর কথা কে না জানে? এর বিষ্ফোরণে প্যান্টের পকেট, বাসার বৈদ্যুতিক লাইন থেকে শুরু করে গাড়ি পর্যন্ত উড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সামান্য নির্মাণজনিত ত্রুটি থাকার কারণেই ফোনটি বিশ্বজুড়ে তার ব্যবহারকারীদের মাঝে এক বিভীষিকা ছড়ায়। ২০১৬ সালে স্যামসাং ব্র্যান্ডের অন্যতম বড় ফ্ল্যাগশিপ হিসেবে খ্যাত এই ফোনটির ধ্বংসলীলার কারণে গত বছরের শেষ দিকেই এটির উৎপাদন বন্ধ করার ঘোষণা দেয় স্যামসাং।

তথ্যসূত্র : বিজনেস ইনসাইডার

*
 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়