ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘ওজন বুঝে চলতে হয়’

শাহেদ হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪০, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘ওজন বুঝে চলতে হয়’

শাহেদ হোসেন : ওবদেয্যানুসাসেয্য অসব্ ভা চ নিবারয়ে/ সতং হি সো পিয়ো হোতি অসতং হোতি অপ্পিয়ো। (ধম্মপদ)

অর্থাৎ, পণ্ডিত ব্যক্তি তিরস্কার করবেন, শাসন করবেন, অন্যায়াচরণ থেকে নিবৃত্ত করবেন। এরূপ ব্যক্তি নিশ্চিত সৎলোকের প্রিয়পাত্র হবেন এবং অসৎ লোকের অপ্রিয় হবেন। তবে আজকাল এই পণ্ডিত লোকদের বড় অভাব। ‘ওঁচা’ লোকের সংখ্যাটাই বেশি। সমাজের প্রতিটি স্তরেই একই চিত্র।

বাংলা স্বরবর্ণের দশম বর্ণ ‘ও’। আটটি মৌলিক স্বরধ্বনির একটি ‘ও’ ।এর উচ্চারণ স্থান ওষ্ঠ ও কণ্ঠ। এই ধ্বনিটি উচ্চারণের সময়  ঠোঁট গোলাকৃতি ধারণ করে। ব্রাহ্মীলিপি থেকে উদ্ভূত ও বর্ণটি তিনটি সরল রেখার সমন্বয়ে তৈরি হয়েছিল। খ্রিষ্টীয় প্রথম দশকের শেষে এই বর্ণটি ত্রিভুজের আকার পায়। দ্বাদশ শতাব্দীতে এসে আজকের ও-এর চেহারা পাওয়া যায়। সংস্কৃতে এটি দীর্ঘস্বর রূপে থাকলেও আধুনিক বাংলায় এর হ্রস্ব উচ্চারণই সাধারণ । ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে ও যুক্ত হয়ে  ো '(ও-কার) চিহ্ন হিসাবে বসে। যেমন : খ্ +ও = খো।

‘ও’ এর ব্যবহার বহুবিধ। সংযোজক অব্যয় হিসেবে ‘ও’ (তুমি ও আমি) এর উপস্থিতি আবশ্যক। সর্বনাম হিসেবে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তু সম্পর্কে জানতে চাইলে ‘ও’  এর কাছে যেতে হবে ( ও কে?) । বিস্ময় প্রকাশ করতে গেলেও অব্যয় হিসেবে ‘ও’ দরকার, যেমন ধরুন- ‘ও মা গো!’  সম্বোধনেও ‘ও’ কে চাই-, যেমন- ওরে নীল দরিয়া। হঠাৎ মনে পড়েছে? সেখানেও ‘ও’ কে চাই। উদহারণ- ও তাইতো! ও হো ভুলেই গিয়েছিলাম ইত্যাদি। মনস্তাপ,দুঃখ, ক্রোধ, বিরক্তিতেও অব্যয় হিসেবে ‘ও’ কে চাই। যেমন : ওঃ যা এখান থেকে।

প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুযায়ী, অ-ধ্বনির উচ্চারণ বহু ক্ষেত্রে ও-এর মতো হয়। শব্দ শেষের এসব অ-ধ্বনি ও-কার দিয়ে লেখা যেতে পারে। যেমন-কালো, এগারো, কুড়ানো, করো, চড়ো, হতো, হলো ইত্যাদি।

ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞায় শব্দের আদিতেও ও-কার লেখা যেতে পারে। যেমন: কোরো, বোলো, বোসো।

হিন্দুধর্মের পবিত্রতম ও সর্বজনীন প্রতীক হচ্ছে ওঁ বা ওঁ-কার (অ + উ +ম্)। বুৎপত্তি অনুযায়ী ওঁ-কার এমন এক শক্তি যা সর্বজ্ঞ, সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের শাসনকর্তা, অমঙ্গল থেকে রক্ষাকর্তা, ভক্তবাঞ্ছাপূর্ণকারী, অজ্ঞাননাশক ও জ্ঞানপ্রদাতা। হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রতিটি সম্প্রদায় ও উপসম্প্রদায়ের কাছেই এটি পবিত্র হিসেবে গণ্য।

কথাবার্তায় বাংলা প্রবাদ-প্রবচনের ব্যবহার অনেক কমেছে। তবে এখনো ‘ওজন’ বুঝে চলা, ‘ওঠ’ ছুঁড়ি তোর বিয়ে, ‘ওষুধ’ ধরেছে কিংবা ‘ওস্তাদের’ মাইর শেষ রাইতে- এই প্রবাদ-প্রবচনগুলো প্রতিদিনের কথায় এখনো বেশ ব্যবহৃত হয়।

আগে বাঙালি নারী স্বামীর নাম মুখে না এনে বলতেন ‘ও নারে’। সংসারে ‘ওফাই’ {শান্তি (কুমিল্লা)} ছিল বেশ। কয়েক দশক আগে সংস্কার সরে প্রেমে গদগদ হওয়ায় সেই সুর বদলে হলো ‘ওগো শুনছো?’ এখন সেই পারদ আরো চড়েছে। দুজন দুজনকেই বলছে ‘তোর কী?’।

যুগের হাওয়ায় সমাজে এককালের ‘ওদ্ ন্যা মদ্ ন্যারা’ {পাবনা (যেমন তেমন লোক)} নেতা হয়ে যাচ্ছে। খারাপের ভীড়ে ‘ওউগা’ {একটি বা একজন (পুরান ঢাকা)} ভালো লোকও রাজনীতিতে পাওয়া মুশকিল।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/শাহেদ/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়