ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

জিএসভিসি’র চূড়ান্ত পর্বে বাংলাদেশের ‘ব্লাই-আই’ টিম

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১৩ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জিএসভিসি’র চূড়ান্ত পর্বে বাংলাদেশের ‘ব্লাই-আই’ টিম

বাঁ দিকের ছবিতে হুমায়ুন কবির ও রাব্বি। ডানের ছবিতে- রাজু মিয়া

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : কেউ আইডিয়া শেয়ার করেছে বৈদ্যুতিক নাকের, যাতে নিঃশ্বাসের সঙ্গে ধুলাবালি প্রবেশ না করে। কারো আইডিয়া ছিল শরণার্থীদের জীবন জীবিকার জন্য ব্যবসা, কারো ছিল অনলাইন স্কুলের প্ল্যাটফর্ম, আবার ছিল দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পথচলা সহজ করতে নতুন ডিভাইস।

থাইল্যান্ডে গ্লোবাল সোশ্যাল ভেঞ্চার কম্পিটিশনে (জিএসভিসি) সামাজিক সমস্যা চিহ্নিত করে এমন সব অভিনব আইডিয়া শেয়ার করেছে বিভিন্ন দেশের মেধাবী তরুণেরা। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশের তরুণদের ‘ব্ল্যাই আই’ টিম।

বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাওয়া ‘ব্লাই-আই’ নামে তিন সদস্যের দলটি এরই মধ্যে বাজিমাত করেছে আঞ্চলিক পর্বে বিজয়ী হয়ে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের দলকে হারিয়ে তারা বিজয়ী হিসেবে পেয়েছে প্রায় নয় লাখ টাকার ‘প্রাইজমানি’। দলটির তিন সদস্য হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী হুমায়ুন কবির ও ফিন্যান্স বিভাগের ফজলে রাব্বী এবং সিলেট মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের রাজু মিয়া।

গ্লোবাল সোশ্যাল ভেঞ্চার কম্পিটিশন প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রতিযোগিতা। এখানে সারা বিশ্বের তরুণ উদ্যেক্তারা, যারা সামাজিক সমস্যাগুলোকে ব্যবসায়িক পরিকল্পনার মাধ্যমে সমাধান করে, তারাই অংশগ্রহণ করে। এই গ্লোবাল কম্পিটিশন আয়োজন করে আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া। প্রথমে রিজিওনাল পর্যায়ের প্রতিযোগিতা হওয়ার পর হয় গ্লোবাল প্রতিযোগিতা।

এ বছর সাউথ ইস্ট এশিয়ার রিজিওনাল পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ও সিলেট মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটির সম্মিলিত ‘ব্লাই-আই’ দল।

ব্লাই আই মূলত অন্ধদের জন্য একটি ডিভাইস যার মাধ্যমে তারা সহজে চলাফেরা করতে পারবে। এটি উদ্ভাবন করেন সিলেট মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটির রাজু মিয়া। তারপর এটি থাইল্যান্ডে উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের হুমায়ুন কবির ও ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্টের মো. ফজলে এলাহি। প্রথমে অনলাইনে প্রতিযোগিতা করে রিজিওনাল ফাইনালে উঠে দলটি। থাইল্যান্ডের মিলেনিয়াম হিল্টন হোটেলে ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি দুই দফা ব্যবসায় পরিকল্পনা উপস্থাপন করে রিজিওনাল চ্যাম্পিয়ন হয় দলটি।

এ সম্পর্কে ‘ব্লাই আই’ টিমের অন্যতম সদস্য মো. ফজলে এলাহি রাইজিংবিডিকে বলেন, আমাদের দেশে অন্ধদের চলাফেরার জন্য ছড়ি ছাড়া তেমন কোনো ভালো ডিভাইস নাই। অন্ধদের এই সমস্যাটি সমাধানের জন্য আমরা অনেক দিন ধরেই কাজ কাজ করছি। ইতিমধ্যে নমুনা পণ্য বানিয়েছি ও আরো রিসার্চ করছি। আশা করছি খুব দ্রুত সকল পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষ করে এই পণ্যটি বাজারে আনতে পারবো।

গ্লোবাল ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে আগামি ৬-৭ এপ্রিল আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার হাস স্কুল অব বিজনেস এ।

যেভাবে সাফল্য পেল তারা

প্রথম পর্যায়ে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে অনলাইনে তাদের প্রজেক্টের ৩ পৃষ্ঠার পেজের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিতে হয়েছে। সাউথ ইস্ট এশিয়া থেকে ১০০টিরও বেশি আবেদন জমা পড়ে। সেখান থেকে সেরা ১২টি দলকে রিজিওনাল ফাইনালে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। ২৩-২৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে অনুষ্ঠিত হয় রিজিওনাল ফাইনাল।

প্রথম দিনে সবার জন্য ১ মিনিটের প্রেজেন্টেশন (এলিভেটর স্পিচ) অনুষ্ঠিত হয় যার পুরস্কার ছিল ১,০০০ ডলার। ১২টি দল থেকে একজন করে সদস্য ১ মিনিটের এলিভিটর স্পিচ প্রদান করেন। ব্লাই আই দলের পক্ষে এলিভিটর স্পিচ দেন মো. ফজলে এলাহি। এখানে ‘ব্লাই আই’ দল এলিভিটর স্পিচে জয়ী হয়ে শুভ সূচনা করে।

২৪ তারিখ শুরু হয় মূল পর্ব। ১২টি দলকে ৩টি গ্রুপে ভাগ করা হয়। ১০ মিনিটের প্রেজেন্টেশন ও বিচারকদের প্রশ্ন-উত্তর পর্বের ওপর ভিত্তি করে প্রতি গ্রুপের সেরা একটি করে দল সেরা তিনে পৌঁছে যায়। ব্লাই আই প্রথম পর্যায়ে হারায় ভারত, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার তিনটি দলকে।

২৫ তারিখ শুরু হয় রিজিওনাল পর্বে চ্যাম্পিয়ন হবার লড়াই। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার তিনটি দল চ্যাম্পিয়ন হবার জন্য লড়াই করে। শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয় ব্লাই আই এবং জিতে ১০,০০০ ডলার। মোট ১১ হাজার ডলার।

গ্লোবাল ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে এপ্রিলের ৬-৭ তারিখ, ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটিতে। সারা বিশ্ব থেকে ১৮টি দল সেখানে অংশ নেবে গ্লোবাল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াইয়ে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ মার্চ ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়