ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সূর্যপুরুষ

রুহুল আমিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২২ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সূর্যপুরুষ

রুহুল আমিন : সূর্য সেন।ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যে নামটি এখনো সূর্যের মতই প্রোজ্জ্বল। এই মহান বিপ্লবীর জন্মদিন আজ।

ডাক নাম কালু। যিনি মাস্টারদা নামে অধিক পরিচিত। উপমহাদেশের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন তিনি। ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে জীবন উতসর্গ করেন এই বাঙালি বিপ্লবী।

মাস্টারদা ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।  তার বাবার নাম রাজমনি সেন এবং মায়ের নাম শশী বালা সেন।

শৈশবেই বাবা-মাকে হারান সূর্য সেন।কাকা গৌরমনি সেনের কাছে মানুষ হন সূর্য সেন। দয়াময়ী উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল তার প্রথম বিদ্যালয়। ১৯১২ সালে চট্টগ্রামের নন্দনকাননে অবস্থিত হরিশদত্তের ন্যাশনাল স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন তিনি। পরে চট্টগ্রাম কলেজে এফ এ-তে ভর্তি হন। তখনকার আই এ বা বর্তমানের এইচএসসি পরীক্ষার পরিবর্তে ফার্স্ট আর্টস বা এফ এ পরীক্ষার নিয়ম ছিল। এফ এ পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে পাস করে তিনি একই কলেজে বিএ-তে ভর্তি হয়েছিলেন। যদিও তিনি এই কলেজ থেকে বিএ শেষ করতে পারেননি। পরে বহররমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে ১৯১৮ সালে তিনি বিএ পাস করেন। এরপর তিনি চট্টগ্রামে ফিরে এসে ব্রাহ্ম সমাজের প্রধান আচার্য্য হরিশ দত্তের জাতীয় স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন।

অসহযোগ আন্দোলনের সময় বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যায়। পরে তিনি দেওয়ানবাজারে উমাতারা উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে অংকের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। আর এ সময়ই বিপ্লবী দলের সঙ্গে তার সম্পর্ক গভীরতর হয়। শিক্ষকতা করার কারণে তিনি ‘মাস্টারদা’ হিসেবে পরিচিতি পান।

এক সময় তিনি বিয়ে বিরোধী ছিলেন। কিন্তু পরিবারের চাপে ১৯১৯ সালে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর কানুনগোপাড়ার নগেন্দ্রনাথ দত্তের ষোল বছরের মেয়ে পুষ্প দত্তকে বিয়ে করেন। বিয়ে করলেও মাস্টারদার মনে এ ধারণা বলবৎ ছিল যে, বিবাহিত জীবন তাকে কর্তব্যভ্রষ্ট করবে, আদর্শচ্যুত করবে। তাই ফুলশয্যার রাতেই তিনি গ্রামের বাড়ি ছেড়ে শহরে চলে আসেন। এরপর স্ত্রীর সঙ্গে আর কোনোদিন দেখা করেননি।

১৯১৬ সালে বহররমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের ছাত্র থাকাকালীন সময়েই সূর্য সেন সরাসরি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিপ্লবীদের গোপন ঘাঁটি এই কলেজ়ে তিনি অধ্যাপক সতীশচন্দ্র চক্রবর্তীর সান্নিধ্যে আসেন। সতীশ বিপ্লবী সংগঠন যুগান্তরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সূর্য সেনকে তিনি বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষা দেন।

শিক্ষাজীবন শেষ করে চট্টগ্রামে এসে শিক্ষকতার পাশাপাশি গোপনে বিপ্লবী কাজকর্ম করতে থাকেন। ৪৯নং বেঙ্গল রেজিমেন্টের নগেন্দ্রনাথ সেন ১৯১৮ সালে চট্টগ্রামে এসে সূর্য সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী ও চারুবিকাশ দত্তের সঙ্গে দেখা করেন। সূর্য সেন ও অম্বিকা চক্রবর্তী ছোটবেলা থেকেই পরস্পরের পরিচিত ছিলেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে বিপ্লবী নেতা সূর্য সেন এবং অম্বিকা চক্রবর্তী চট্টগ্রাম শহরের দেওয়ানবাজার দেওয়ানজী পুকুরপাড়ে 'সাম্য আশ্রম' প্রতিষ্ঠা করে ওখানে থাকতে শুরু করেন। সেখানে গোপনে বিপ্লবীরা জমায়েত হতো।

১৯২০ সালে গান্ধীজী- কর্তৃক অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে অনেক বিপ্লবী এই আন্দোলনে যোগ দেন। গান্ধীজীর অনুরোধে বিপ্লবীরা তাদের কর্মসূচি এক বছরের জন্য বন্ধ রাখেন। সূর্য সেন অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। মহাত্মা গান্ধী ১৯২২ সালে অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করলে বিপ্লবী দলগুলো আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। তখন চট্টগ্রাম কোর্টের ট্রেজারি থেকে পাহাড়তলীতে অবস্থিত আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কারখানার শ্রমিক ও কর্মচারীদের বেতন নিয়ে যাওয়া হতো। বিপ্লবীরা সক্রিয় হওয়ার প্রায় এক বছরের মধ্যে ১৯২৩-এর ১৩ ডিসেম্বর টাইগার পাস  মোড়ে সূর্য সেনের গুপ্ত সমিতির সদস্যরা প্রকাশ্য দিবালোকে বেতন বাবদ নিয়ে যাওয়া ১৭,০০০ টাকার বস্তা ছিনতাই করে। ছিনতাইয়ের প্রায় দুই সপ্তাহ পর বিপ্লবীদের আস্তানায় হানা দিলে পুলিশের সঙ্গে বিপ্লবীদের খণ্ড যুদ্ধ হয় যা ‘নাগরখানা পাহাড় খণ্ডযুদ্ধ’ নামে পরিচিত।

যুদ্ধের পর গ্রেপ্তার হন সূর্য সেন এবং অম্বিকা চক্রবর্তী। রেলওয়ে ডাকাতি মামলা দেওয়া হয় তাদের নামে। কলকাতা হাইকোর্টের ব্যারিস্টার দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত এই মামলায় আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন। পরে সূর্য সেন ও অম্বিকা মামলা থেকে ছাড়া পান। গ্রেপ্তারের পর বিপ্লবীদের ওপর নির্যাতনের প্রতিশোধ হিসেবে কলকাতা পুলিশ কমিশনার টেগার্টকে হত্যার পরিকল্পনা করে বিপ্লবীরা। কিন্তু পুলিশ ব্যাপারটি জেনে যায়। এর ধারাবাহিকতায় ১৯২৬ সালের ৮ অক্টোবর সূর্য সেন কলকাতার ওয়েলিংটন স্ট্রিটে গ্রেপ্তার হন। পরে ১৯২৮ সালের শেষভাগে সূর্য সেন জেল থেকে ছাড়া পান।

বিপ্লবী সংগঠনে মেয়েদের সদস্য করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ছিল। বিপ্লবীদের প্রতি মা, নিজের বোন এবং অন্যান্য নিকট আত্মীয় ছাড়া অন্য মেয়েদের সঙ্গে মেলামেশা না করার নির্দেশ ছিলো মাস্টারদা সূর্য সেনের। পরে তিনি এই নির্দেশ শিথিল করেন। এতে পরবর্তীতে কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার বিপ্লবী সংগঠনে যোগ দেন।

১৯২৮ সালে কলকাতার পার্ক সার্কাসে নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির বার্ষিক অধিবেশন হয। আর ১৯২৯ সালে মহিমচন্দ্র দাশগুপ্ত এবং বিপ্লবী সূর্য সেন যথাক্রমে চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসের সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ সময় বিপ্লবী নেতাদের ওপর পুলিশের নজরদারি আরো জোরদার করা হয়। ১১ জন গোয়েন্দা ও ২৪জন পুলিশ নিয়োগ করা হয় ছয়জন বিপ্লবী নেতার জন্য। সূর্য সেন এ সময় আইরিশ রিপাবলিকান আর্মির বিপ্লবের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেদের দলের নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি, চিটাগাং ব্রাঞ্চ’।

এ সময় নিজেদের জন্য অস্ত্র সংগ্রহ ও বোমা তৈরির কাজ করেন বিল্পবীরা। আর ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল বিদ্রোহের দিন ধার্য করেন। ওইদিন রাত ১০টায় চারটা বাড়ি হতে চার দলে বিভক্ত হয়ে আক্রমণের জন্য বের হয় বিপ্লবীরা। বিপ্লবীরা রেল লাইনের ফিসপ্লেট খুলে রাখে তাই ধুম রেলস্টেশনে একটা মালবহনকারী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে উল্টে যায়। ফলে চট্টগ্রাম সমগ্র বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অন্য একটি দল চট্টগ্রামের নন্দনকাননে টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ অফিস আক্রমণ করে। তারা সব যন্ত্রপাতি ভেঙে দেয় এবং আগুন জ্বালিয়ে দেয়। আরেকটি দল পাহাড়তলীর রেলওয়ে অস্ত্রাগার লুট করে। তবে সেখানে কোনো গুলি পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ পরিকল্পনা অনুযায়ী বিপ্লবীরা দামপাড়ায় পুলিশ রিজার্ভ ব্যারাক দখল করে। এই আক্রমণে অংশ নেওয়া বিপ্পবীরা দামপাড়া পুলিশ লাইনে সমবেত হয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। মিলিটারি কায়দায় কুচকাওয়াজ করে সূর্য সেনকে সংবর্ধনা দেন। সূর্য সেন অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার গঠনের ঘোষণা দেন।

চট্টগ্রাম সম্পূর্ণরুপে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত ছিল চারদিন। কিন্তু এরমধ্যে বিপ্লবীদের খাদ্যসংকট দেখা দেয়। সূর্য সেনসহ অন্যদের কচি আম, তেঁতুল পাতা, কাচা তরমুজ ও তরমুজের খোসা খেয়ে কাটাতে হয়। এ সময় সূর্য সেনসহ ছয় শীর্ষস্থানীয় বিপ্লবীকে ধরার জন্য ইংরেজ সরকার ৫০০০ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে।

১৯৩০ সালের ২২ এপ্রিল বিপ্লবীরা যখন জালালাবাদ পাহাড়ে (চট্টগ্রাম সেনানিবাসের পাহাড়) অবস্থান করছিল সে সময় সশস্ত্র ইংরেজ সেনারা তাদের আক্রমণ করে। দুই ঘণ্টার প্রচণ্ড যুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনীর ৭০ থেকে ১০০ জন এবং বিপ্লবী বাহিনীর ১২ জন নিহত হন।

জালালাবাদ যুদ্ধের পর বিপ্লবী নেতাদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়।বিপ্লবীরা তখন বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে আত্মগোপন করে ছিলো। সূর্য সেন ১৬ জন বিপ্লবীকে নিয়ে ২৪ এপ্রিল রাতে নিজ বাড়িতে আসেন। এ সময় বিপ্লবীদের নামে অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের দুটি মামলা দেওয়া হয়। আর সূর্য সেনকে ধরার জন্য পটিয়া ও গোমদন্ডীতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সরকার ৫০০০ টাকার পরিবর্তে ১০,০০০টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে।

১৯৩২ সালের ১৩ জুন রাত ৯টায় পটিয়ার ধলঘাট গ্রামে সাবিত্রী চক্রবর্তীর বাড়িতে তাকে ধরার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন ক্যামেরনকে গুলি করে সূর্য সেন, প্রীতিলতা ও কল্পনা দত্ত পালিয়ে যান। তবে নির্মল সেন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের দিনই পরিকল্পনা ছিল পাহাড়তলী ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ করার। কিন্তু গুড ফ্রাইডে থাকায় সেদিন ওই ক্লাবে কেউ ছিল না। মাস্টারদা স্থির করেন ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় ক্লাবে প্রীতিলতার নেতৃত্বে হামলা হবে। এ প্রসংগে মাস্টারদা লিখেছেন, ‘বাংলায় বীর যুবকের আজ অভাব নাই। বালেশ্বর থেকে জালালাবাদ, কালারপোল পর্যন্ত এদের দৃপ্ত অভিযানে দেশের মাটি বারে বারে বীর যুবকের রক্তে সিক্ত হয়েছে। কিন্তু বাংলার ঘরে ঘরে মায়ের জাতিও যে শক্তির খেলায় মেতেছে, ইতিহাসে সে অধ্যায় আজও অলিখিত রয়ে গেছে। মেয়েদের আত্মদানে সে অধ্যায় রচিত হোক এই-ই আমি চাই। ইংরেজ জানুক, বিশ্বজগৎ জানুক, এদেশের মেয়েরাও মুক্তিযুদ্ধে পেছনে নেই।’

২৩ সেপ্টেম্বর রাতে প্রীতিলতা ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণ করেন। হামলায় ৫৩ জন ইংরেজ হতাহত হয়। গুলিতে আহত প্রীতিলতা অত্যাচার থেকে বাঁচতে স্বেচ্ছামৃত্যুকে বেছে নেন।

ইংরেজ প্রশাসন সূর্য সেনকে জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় ধরার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখে। সূর্য সেন গৈরলা গ্রামে ক্ষীরোদপ্রভা বিশ্বাসের বাড়িতে আত্মগোপন করে ছিলেন।

১৯৩৩ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি রাতে সেখানে এক বৈঠকে ছিলেন কল্পনা দত্ত, শান্তি চক্রবর্তী, মণি দত্ত, ব্রজেন সেন আর সুশীল দাসগুপ্ত। ব্রজেন সেনের সহোদর নেত্র সেন সূর্য সেনের উপস্থিতির খবর পুলিশকে জানিয়ে দেয়। রাত প্রায় ১০টার দিকে পুলিশ আর সেনাবাহিনী ক্ষীরোদপ্রভা বিশ্বাসের বাড়িটি ঘিরে ফেলে। রাতের অন্ধকারে গুলি বিনিময় করে কল্পনা দত্ত, শান্তি চক্রবর্তী, মণি দত্ত আর সুশীল দাসগুপ্ত পালিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু রাত ২টার দিকে অস্ত্রসহ সূর্য সেন ও ব্রজেন সেন ধরা পড়েন। তারপর ওই বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ সূর্য সেনের নিজের হাতে লেখা অর্ধসমাপ্ত আত্মজীবনীর খাতা উদ্ধার কর। সেই খাতার উপর লেখা ছিল ‘বিজয়া’। বিচারের সময় বিজয়াতে লেখা তার কথাগুলো বিপ্লব ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রমাণ হিসেবে অনেকবার ব্যবহার করা হয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে সূর্য সেন এবং ব্রজেনকে প্রথমে জেলা গোয়েন্দা সদর দপ্তরে, পরে কোর্ট হয়ে চট্টগ্রাম জেলে নেওয়া হয়।

১৯৩৩ সালের মার্চ মাসে বিপ্লবীরা জেল থেকে সূর্য সেনকে মুক্ত করার জ়ন্য কয়েকবার চেষ্টা চালায়। প্রতিবারই তাদের গোপন পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়।          

সূর্য সেন, তারকেশ্বর দস্তিদার ও কল্পনা দত্তকে বিচারের জন্য ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের ১২১/১২১এ ধারা অনুযায়ী স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এই ট্রাইব্যুনালের কমিশনাররা ছিলেন- বাখরগঞ্জের দায়রা জজ ডব্লিউ ম্যাকসার্পি, সিলেটের অতিরিক্ত দায়রা জজ রজনী ঘোষ এবং চট্টগ্রামের দায়রা জজ খোন্দকার আলী তোয়েব।

১৯৩৩ সালের ১৫ জুন শুরু হয় বিচার। আগ্নেয়াস্ত্র বহন করা ছাড়া তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগের প্রত্যক্ষ প্রমাণ উপস্থাপন করা যায়নি। একই বছরের ১৪ আগস্ট মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। পরে তিন বিপ্লবীর পক্ষে কলকাতা হাইকোর্টে আপিলের করা হয়। ১৪ নভেম্বর হাইকোর্ট প্রদত্ত রায়ে স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দণ্ড বহাল রাখে।

১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি মধ্যরাতে সূর্য সেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসি কার্যকর হবার কথা উল্লেখ করা হয়। সূর্য সেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারকে ব্রিটিশ সেনারা নির্মমভাবে অত্যাচার করে। ব্রিটিশরা হাতুড়ি দিয়ে তার দাঁত ও হাড় ভেঙে দেয়। এরপর তারা অজ্ঞান হয়ে যান। নিষ্ঠুরভাবে তাদের অর্ধমৃতদেহ দুটি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ফাঁসির পর লাশ দুটো জেলখানা থেকে ট্রাকে করে ৪ নম্বর স্টিমার ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর লাশ দুটোকে ব্রিটিশ ক্রুজার  ‘The Renown’ এ তুলে বুকে লোহার টুকরা বেঁধে বঙ্গোপসাগর আর ভারত মহাসাগর সংলগ্ন একটা জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়।

কলকাতা মেট্রো সূর্য সেনের স্মরণে বাঁশদ্রোণী মেট্রো স্টেশনটির নামকরণ করেছে ‘মাস্টারদা সূর্য সেন মেট্রো স্টেশন’। এ ছাড়া তার সম্মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি করে আবাসিক হলের নামকরণ করা হয়।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ মার্চ ২০১৭/রুহুল/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়