ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

রাজশাহীর ইতিহাসে যারা আজও নিখোঁজ

তানজিমুল হক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:২২, ২৫ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রাজশাহীর ইতিহাসে যারা আজও নিখোঁজ

২৫ মার্চ -৭১ একই পরিবারের পাঁচজন নিখোঁজ হন। এরা হলেন যথাক্রমে আবু সেলিম শহিদুজ্জামান, ওয়াসিমুজ্জামান, হাসানুজ্জামান খোকা, সাইদুর রহমান মিনা ও নজমুল হক সরকার (এমএলএ)

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী : অপারেশন সার্চ লাইটের নামে ভয়ঙ্কর গণহত্যা চালানো হয়েছিল রাজশাহীতেও। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বর্বর জওয়ানরা রাজশাহী শহরে ১২ ব্যক্তিকে হত্যা করে।

একইভাবে একাত্তরের ২৫ মার্চ রাত থেকে রাজশাহী শহরের ১১ ব্যক্তি আজও নিখোঁজ রয়েছেন। ওই নিখোঁজের ১১ ব্যক্তির মধ্যে ৫ জনই এক পরিবারের। আর ওই পরিবারটি হলো মরহুম আব্দুস সালামের পরিবার। ৪৬ বছর পেরিয়ে গেলেও ওরা কেউ ফিরে আসেননি। হয়তোবা এখন মৃত, তবু তারা নিখোঁজ হিসেবেই ইতিহাস হয়ে আছেন।

পঁচিশ মার্চ রাত ১২টা বাজার সাথে সাথে রাজশাহীর উপশহরস্থ ক্যান্টনমেন্ট থেকে পাকিস্তানি আর্মি কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে রাজশাহী শহরে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। তাদের তালিকাভুক্ত বিশিষ্ট লোকদের বাড়িতে হানা দিয়ে অনেককে ধরে নিয়ে যায়। তারা আর কেউ ফিরে আসেননি।

সেদিন পাকিস্তানি আর্মির সাথে ছিলো বোরখাধারী লোক, যারা পাকসেনাদের তালিকাভুক্ত বাঙালিদের শনাক্ত করতে সহযোগিতা করে। বোরখাধারীদের মধ্যে ছিলো পাকিস্তানিদের দালাল গুটি কয়েক বাঙালি এবং স্থানীয় অবাঙালি বিহারি সম্প্রদায়ের লোক।

অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম ছিলেন রাজশাহীর একজন প্রতিষ্ঠিত আয়কর আইনজীবী। আওয়ামী বুদ্ধিজীবী হিসেবে রাজশাহী শহরে ব্যাপক পরিচিতি ছিল তার । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু । পাকিস্তানি সেনারা রাত সাড়ে ৩টায় সেপাইপাড়ায় অ্যাডভোকেট আব্দুস সালামের বাড়িতে হানা দেয়। ওই মুহূর্তে তিনি ঢাকায় ছিলেন। তাকে না পেয়ে তার বড় ছেলে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থবর্ষের ছাত্র শহীদুজ্জামান সেলিম বাবু ও ছোট ছেলে রাজশাহী কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র ওয়াসিমুজ্জামানকে ধরে নিয়ে যায়। তারা আর ফিরে আসেননি।

পাকিস্তানি সেনাদের একটি দল রাত আনুমানিক ৪টায় চড়াও হয় লক্ষ্মীপুর ঝাউতলার তদানিন্তন রাজশাহী নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান এর বাড়িতে। অ্যাডভোকেট আব্দুস সালামের ছোট ভাই তিনি। মনিরুজ্জামানকে না পেয়ে ওই বাড়ি থেকে তার ছোট ভগ্নিপতি পাকিস্তান শিল্প ব্যাংকের রিসার্চ অফিসার সাইদুর রহমান মিনা ও তার ছোট ভাই ঠিকাদার হাসানুজ্জামান খোকাকে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনারা।  তারা আর কেউ ফিরে আসেননি।

ভোর ৫টার দিকে শহরের রাণীবাজার এলাকায় দেওয়ান সিদ্দিক হোসেনের বাড়িতে হানা দেয়। দেওয়ান সাহেব একজন সরকারি রেভেনিউ অফিসার ছিলেন। তাকে ও তার ছোট শ্যালক খন্দকার আলী আফজালকে  ধরে নিয়ে যায়।

১৯৭০ সালে রাজশাহী সদর আসনে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত অ্যাডভোকেট আব্দুল হাদি। ২৫ মার্চ রাতে তাকে না পেয়ে তার মেজো ভাই আব্দুল হককে ধরে নিয়ে যায়। তিনিও আর ফিরে আসেননি।

অ্যাডভোকেট আব্দুস সালামের ভাগ্নি জামাই চারঘাট পুঠিয়া দুর্গাপুর এলাকা থেকে সত্তরে নির্বাচিত এমএনএ আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট নজমুল হক সরকারও একাত্তরের পঁচিশ মার্চ থেকে আজ অবধি নিখোঁজ রয়েছেন।

 

 

রাইজিংবিডি/রাজশাহী/২৫ মার্চ ২০১৭/তানজিমুল হক/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়