ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

গোয়েন্দা গল্পের ব্যতিক্রম স্রষ্টা

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৩০ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গোয়েন্দা গল্পের ব্যতিক্রম স্রষ্টা

শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়

শাহ মতিন টিপু : গোয়েন্দা গল্পের বইতে আগ্রহ যাদের, তারা ব্যোমকেশকে জানেন। আর ব্যোমকেশকে যারা জানেন, তারা শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামটি জানেন। কারণ, ব্যোমকেশের স্রষ্টাই হচ্ছেন এই শরদিন্দু ।

তিনি ছিলেন গোয়েন্দা গল্পের ব্যতিক্রম স্রষ্টা।ব্যোমকেশ দৈহিক শক্তিপ্রয়োগ, গুলিগোলা-- এসব পছন্দ করে না। যে সব ব্যাপারে প্রাণসংশয় হতে পারে সে সবও তার পছন্দ নয়, অবশ্য সবসময়ে সেটা তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে না। এ প্রসঙ্গে শরদিন্দু বলেন, "আমার মেজাজের সঙ্গে গুলিগোলা খাপ খায় না। তাছাড়া গোয়েন্দা কাহিনীকে আমি ইনটেলেকচুয়াল লেভেলে রেখে দিতে চাই।" আর এই দৃষ্টিকোন থেকেই শরদিন্দু ব্যোমকেশকে নিয়ে এসেছিলেন।

গোয়েন্দা গল্পে তিনি অবাক রকমের সাফল্য পেয়েছিলেন।এই ভারতীয় বাঙালি লেখক বাংলাদেশেও পাঠক তৈরি করতে সমর্থ হয়েছিলেন। বাংলাদেশ নিয়ে তারমধ্যে ভিন্ন আগ্রহ দেখা না গেলেও বাংলাদেশি পাঠকরা তার লেখা সম্পর্কে অবগত। তার অনেক বই-ই এদেশের পাঠকের অতি চেনা। ব্যোমকেশ বক্সি শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় সৃষ্ট সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র। এই ব্যোমকেশ একজন ডিটেকটিভ। নিজেকে তিনি সত্যান্বেষী বলে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। ব্যোমকেশের আত্মপ্রকাশ ১৯৩২ সালে 'পথের কাঁটা' উপন্যাসে।

বাঙালির প্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র ব্যোমকেশ বক্সির এই স্রষ্টার জন্মদিন আজ। তিনি ১৮৯৯ সালের ৩০ মার্চ উত্তরপ্রদেশের জৌনপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বড় হয়েছেন মুঙ্গেরে আর পাটনায়। বংশে ওকালতি করার চল ছিলো। প্রথম কবিতা লেখেন চোদ্দো বছর বয়সে। প্রথম গল্প লেখেন ষোলো বছর বয়সে।

তার প্রথম গল্পের বই ‘জাতিস্মর’, প্রকাশ ১৯৩২এ। ১৯২৯ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত গল্প লিখেছেন। ১৯৩৮ সালে মুম্বাই যান বোম্বে টকিজে চিত্রনাট্য লেখার চাকরি নিয়ে, সেখানে রইলেন ১৯৪১ পর্যন্ত। তারপর  সিনেমার জগত ছেড়ে পুরোপুরি সাহিত্যচর্চায় ফিরে আসেন ১৯৫২ সালে। মুম্বাই থেকে চলে যান পুণেতে। জীবনের শেষ পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন। ১৯৭০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তিনি প্রয়াত হন।

শরদিন্দুর জীবনে সিনেমার, বিশেষ করে বোম্বের সিনেমার, খুব বড় ভূমিকা ছিল। তিনি যে ছবিগুলিতে চিত্রনাট্যকারের কাজ করেছেন সেগুলি হল- দূর্গা (১৯৩৯), কঙ্গন(১৯৩৯), নবজীবন(১৯৩৯) ও আজাদ(১৯৪০)।

তার লেখা থেকেও সিনেমা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- ‘চিড়িয়াখানা’ নির্দেশক সত্যজিত রায়, ‘ঝিন্দের বন্দী’ নির্দেশক তপন সিংহ, ‘বিষের ধোঁয়া’, ‘দাদার কীর্তি’  নির্দেশক তরুণ মজুমদার। তার ঐতিহাসিক ছোটগল্প 'মরু ও সঙ্ঘ'র চিত্ররুপ 'তিশগ্নি' হিন্দি ছবি হিসাবে পুরস্কার অর্জন করে। তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার (উপন্যাস 'তুঙ্গভদ্রার তীর'), কিশোর সাহিত্যের জন্য ভারত সরকারের দেওয়া পুরস্কার, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরৎস্মৃতি পুরস্কার, মতিলাল পুরস্কার প্রভৃতি পুরস্কারও লাভ করেন।

১৯৩২ সালে প্রথম প্রকাশ থেকে ১৯৭০ সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত শরদিন্দুর তেষট্টিটি মৌলিক বইয়ের হিসেব পাওয়া যায়, এ ছাড়া সঙ্কলন ও রূপান্তর আছে বেশ কয়েকটি। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, কিশোর সাহিত্য, অনুবাদ সাহিত্যের সব ক্ষেত্রে রয়েছে তার বিচরণ। তার মধ্যে আছে । ছোটো গল্পই সবচেয়ে বেশি- দুশো বাইশ, উপন্যাস তেরোটি, নাটক ও চিত্রনাট্য তেরোটি, কিশোরপাঠ্য কাহিনী আটাশটি।

শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য বইগুলো হচ্ছে- ‘ব্যোমকেশের ডায়েরি’, ‘ব্যোমকেশের কাহিনী’, ‘ব্যোমকেশের গল্প’, ‘দুর্গরহস্য’, ‘চিড়িয়াখানা’, ‘আদিম রিপু’, ‘বহ্নি-পতঙ্গ’, ‘সসেমিরা’, ‘কহেন কবি কালিদাস’, ‘ব্যোমকেশের ত্রিনয়ন’, ‘মগ্নমৈনাক’, ‘শজারুর কাঁটা’, ‘বেণীসংহার’, ‘শরদিন্দু অমনিবাস’: প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ড, ‘কালের মন্দিরা’, ‘গৌড়মল্লার’, ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘ’, ‘কুমারসম্ভবের কবি’, ‘তুঙ্গভদ্রার তীরে’ ইত্যাদি।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ মার্চ ২০১৭/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়