ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

দেয়াল জুড়ে ঐতিহ্যের ঘ্রাণ

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৮, ১৩ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দেয়াল জুড়ে ঐতিহ্যের ঘ্রাণ

ছবি : লেখক

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর : ‘নোটন নোটন পায়রাগুলো ঝোটন বেঁধেছে, দুই ধারে দুই রুই-কাতলা ভেসে উঠেছে, কে দেখেছে কে দেখেছে দাদা দেখেছে, দাদার হাতে কলম ছিল ছুড়ে মেরেছে, ওহ! বড্ড লেগেছে।’

- না, এখানে আজ দাদা কলম ছুড়ে মারেননি। তবে নদীতে যখন রুই কাতলা ভেসে উঠেছে, তখন ঠিকই লোভ সামলাতে না পেরে নদীতে ঝাপ দিয়েছেন বাঘমামা...। আর এভাবেই এক একটি কাহিনিকে কেন্দ্র করে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে একেকটি চিত্র। চারুকলা অনুষদের পুরো দেয়াল জুড়ে আঁকা হচ্ছে দেয়াল চিত্র।

গায়ের বধূ, পালকি, মেঠোপথ, নদী, পাখি.. কি নেই এখানে। মঙ্গল শোভাযাত্রাকে আরো মঙ্গলময় করতে, পথের চারপাশটাকে আরো রঙিন এবং সুন্দর করে তুলতে দেয়াল জুড়ে আঁকা হচ্ছে অসংখ্য দেয়াল চিত্র। লাল নীল সবুজ হলুদ রঙে তুলি ডুবিয়ে নিজ মনে দেয়ালের গায়ে এঁকে চলেছেন চারুকলার শিল্পীরা। যেন নিজেদের মনের সবটুকু রঙ তুলিতে লাগিয়ে ছবি আঁকছেন তারা।



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার ছাত্র শরীফুল ইসলাম জানান, পয়লা বৈশাখ এবং মঙ্গলশোভাযাত্রা উপলক্ষে চারুকলাসহ আশেপাশের প্রায় সব দেয়ালগুলোতেই আঁকা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের নকশা। এই নকশাগুলোর মাধ্যমে সাধারণত বাংলার ঐতিহ্যগুলোকেই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।

এক হাতে রঙের কৌটা আর একহাতে তুলি নিয়ে দেয়াল আঁকছিলেন নীলিমা হাসান। বললেন, নতুন বছরটাকে রঙিন করে তুলতেই এতো রঙের আয়োজন। চোখের সামনে রঙিন কিছু থাকলেও মনটাকে রঙিন মনে হয়। আর এখানে তো সবটুকুই আমাদের ঐতিহ্য, তবে তা কেন আমাদের মনকে রাঙাবে না বলুন!

বাংলাপিডিয়ার তথ্যমতে, বাংলার চিত্রকলার সর্বপ্রাচীন প্রামাণিক নিদর্শন পাল আমলের তালপাতার পুথিতে এবং কাঠের প্রচ্ছদে অঙ্কিত বৌদ্ধ ধর্মের অনুচিত্রগুলো। যা ভারতশিল্পের ইতিহাসে ‘পালচিত্র’ নামে পরিচিত। এ চিত্রগুলো পুথির লেখার সঙ্গে চিত্রায়িত হলেও বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল না। এখানে বুদ্ধ এবং অন্যান্য বৌদ্ধ দেবদেবীর প্রতিমূর্তিগুলো মূলত পুথিকে দৈবগুণসম্পন্ন করার প্রয়োজনে অঙ্কিত হয়েছিল। তবে এই বৈশাখে আমাদের দেয়ালচিত্রগুলো অবশ্য ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত।



পয়লা বৈশাখ সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে এই দেয়ালচিত্র। মঙ্গলশোভাযাত্রা উপলক্ষে এই দেয়াল চিত্র অঙ্কনে অংশগ্রহণ করেছেন প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী। দেয়াল জুড়ে শিশুদের মতো রঙ তুলিতে আকিবুকি আঁকছেন তারা। গোটা বাঙালি দেখবে এই আকিবুকি, দেখবে সমগ্র বিশ্ব। ঐতিহ্যকে লালন করে এই রঙের ঘ্রাণ নিয়ে নতুন বছরকে শুভেচ্ছা জানাবে হাজারো বাঙালি।

পালকি আঁকা শেষ করলেন নীলিমা হাসান। বললেন, ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে ধারণ করেই তো আমাদের সকল লোকজ উৎসব। তা যত পুরোনো হবে, তার ঘ্রাণ তো ততই বাড়বে। পাশ থেকে শরিফুল ইসলাম বললেন, ভালো বলেছেন নীলিমা। আর তাইতো আমরা এখন দেয়াল জুড়ে আমাদের ঐতিহ্য আঁকতে ব্যস্ত।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ এপ্রিল ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়