ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মারাত্মক পাঁচ আগ্নেয়গিরি

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৩২, ২৪ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মারাত্মক পাঁচ আগ্নেয়গিরি

প্রতীকী ছবি

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর : আগ্নেয়গিরির মারাত্মক অগ্ন্যুৎপাতের ফলে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা কম নয়।

১৬০০ সাল থেকে হিসাব করলে দেখা যাবে, ২ লাখ ৭৮ হাজার ৮৮০ জন আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তায় কারণে নিহত হয়েছে।

এ বছরের ১৬ মার্চে ইতালির এটনা পাহাড়ের অবস্থিত আগ্নেয়গিরিটির বিস্ফোরণের দৃশ্য ধারণ করেছিল বিবিসি নিউজের একদল ক্যামেরাম্যান।

 

 

আগ্নেয়গিরি সক্রিয়তা মানুষ এবং সমাজের ওপর কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তা জাহির করার জন্য বিস্ময়কর ও লক্ষ্যণীয় ফুটেজ ছিল এটি।

১৯৮০ সাল থেকে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সঙ্গে মৃত্যুর ঘটনা যদিও অনেক কমে এসেছে, তবে তা শুধু ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কারণে নয়, আগ্নেয়গিরির কম সক্রিয়তার কারণেও।

আগ্নেয়গিরির মধ্যেও রয়েছে ভিন্নতা। কোনোটা বেশি বিপজ্জনক, কোনোটা কম। এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হল, বিপজ্জনক ৫টি আগ্নেয়গিরির তথ্য, যেগুলো জীবনযাপনে বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।

ভিসুভিয়াস, ইতালি

মাউন্ট ভিসুভিয়াস ইতালির নেপলস উপসাগরীয় অঞ্চলের একটি আগ্নেয়গিরি। নেপলস থেকে ৯ কিলোমিটার পূর্বে সমুদ্র উপকূলের খুব কাছে এর অবস্থান। এটি ইউরোপের মূল ভূখন্ডের মধ্যে অবস্থিত একমাত্র আগ্নেয়গিরি যাতে বিগত কয়েক শতাব্দীর মধ্যে অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে।

নেপলস, বর্তমানে যেখানে প্রায় তিন মিলিয়ন মানুষের বসবাস, সেখানকার মানুষের জন্য ভিসুভিয়াস এখানো একটি বড় বিপত্তির নাম। কেননা এই ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির কারণেই খ্রিষ্টপূর্ব ৭৯ শতকে ধ্বংস হয়েছিল পম্পেই এবং হারকুলিনিয়াম নামের দুইটি শহর।

এছাড়া এই আগ্নেয়গিরিটি তীব্র অগ্ন্যুৎপাতের জন্য একটু বেশি ঝুঁকিপূণ হিসেবেই পরিচিত। এর তলদেশ পূর্ণ রয়েছে বিভিন্ন গ্যাস, পাথর এবং ছাই দ্বারা। ফলে এটি ফাটলে তার গ্যাস, বড় বড় পাথর এবং ছাই ছড়িয়ে পড়বে আকাশে বিমান ওড়ার শেষ সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত।

আগ্নেয়গিরির শিলায় অতিরিক্ত চাপের ফলে অগ্ন্যুৎপাত হলে ওই অঞ্চলের আশপাশ পুরোপুরিই বিলীন হয়ে যাবে। তার আসন্ন পদ্ধতির পরিণতি হিসেবে সৃষ্টি হবে ভূমিকম্প এবং এরপরেই মাটির নিচ থেকেই বেরিয়ে আসা লাভা ডুবিয়ে দিবে সমস্ত শহরকে। আর এই সবগুলো ঝুঁকি নেপলসকে ইতোমধ্যেই সম্ভাব্য পম্পেই নগরীর পরিচিতি দিয়েছে।

নাইরাগঙ্গ, কঙ্গো

আফ্রিকার কেন্দ্রীয় এই আগ্নেয়গিরিটি গত কয়েক দশকে বেশ কয়েকবার অগ্ন্যুৎপাত ঘটিয়েছে। এটি যখন বিস্ফোরিত হয়, তখন এটি মূলত ছাই এর পরিবর্তে এক ধরনের আঠালো লাভা বের করে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এটি যদি একবার বিস্ফোরিত হয়, তবে তা সাবধানবাণী ব্যতীতই তার আশেপাশের বৃহৎ একটি অঞ্চলকে প্লাবিত করতে পারে।

২০০২ সালে এটি সর্বশেষ লাভা উদগিরণ করে। এ সময় লাভার স্রোতের গতি ছিল ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার এবং তার গভীরতা ছিল ২ মিটার পর্যন্ত, যা কঙ্গোর নিকটবর্তী শহরগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছিল।

সৌভাগ্যবশত আগ্নেয়গিরির অস্থিরতা দেখে সে সময় তীব্র সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছিল। এর ফলে বিপদজ্জনক স্থান থেকে প্রায় ৩০ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছিল।

তবে এ ঘটনা যে আবারো ঘটবে না, তা নয়। তাই কর্তৃপক্ষের উচিত অবশ্যই প্রস্তুত থাকা। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিতিশীল এলাকায় এটি পড়ে আছে গম্ভীরভাবে নাজুক অবস্থায়।

পপো, মেক্সিকো

বিশ্বের বৃহত্তম শহরগুলোর অন্যতম হল মেক্সিকো সিটি, যেখানে প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষের বসবাস। আর এর মাত্র ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমেই অবস্থিত অন্যতম ক্ষমতাধর আগ্নেয়গিরি পপো। এই আগ্নেয়গিরিটি প্রায় নিয়মিতভাবেই সক্রিয় থাকে। সর্বশেষ ২০১৬ সালে এটি প্রায় পাঁচ কিলোমিটার জুড়ে তার ছাই উদগিরণ করে।

এই আগ্নেয়গিরির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, বিস্ফোরণের অধিকাংশ সময়ে এটি লাভার পরিবর্তে ছাই বের করে। আর এই ছাই যদি পানিতে মিশে, তবে তা পুরু কাদায় পরিণত হয়ে দ্রুতগতির সঙ্গে বহুদূর পর্যন্ত প্রবাহিত হতে পারে।

যেমন ১৯৮৫ সালে ‘দেল রুইজ’ নামে কলম্বিয়ায় এ ধরনের একটি দুর্ঘটনায় প্রায় ২৬ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। এ সময় এর বিস্তৃতি ছিল প্রায় ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত এবং এগুলো অত্যন্ত মারাত্মক হতে পারে।

ক্রাকাটোয়া, ইন্দোনেশিয়া

ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে জনবহুল দুটি দ্বীপ জাভা এবং সুমাত্রার মাঝামাঝি পর্যায়ে অবস্থিত পৃথিবীর অন্যতম ভয়ংকর আগ্নেয়গিরি ক্রাকাটোয়া। দূর থেকে যা দেখলে একটি সমাধিক্ষেত্র ছাড়া আর অন্যকিছুই মনে হয় না।

১৮৮৬ সালে অগ্ন্যুৎপাতের মাধ্যমে প্রায় ৩৬ হাজার মানুষের প্রাণ নিয়ে কুখ্যাত হয় ক্রাকাটোয়া আগ্নেয়গিরিটি। এই অগ্ন্যুৎপাত ছিল হিরোশিমার পারমাণবিক বোমার থেকেও প্রায় ১৩০০ গুণ বেশি শক্তিশালী, যা একটি মুক্ত আলোড়ন সৃষ্টি করে। অগ্ন্যুৎপাতের ফলে আগ্নেয় দ্বীপটি সে সময় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায় এবং মৃত দ্বীপটি পুনরায় জেগে উঠতে সময় লেগেছে ৫০ বছরেরও বেশি সময়।

নতুন জেগে ওঠা এই দ্বীপটির নাম রাখা হয়েছে ক্রাকাটোয়া চাইল্ড, অর্থাৎ ক্রাকাটোয়ার সন্তান। ১৯২০ সাল থেকে এটি অনিয়মিতভাবে পর্যায়ক্রমে বেড়ে চলেছে এবং এখন এর উচ্চতা প্রায় ৩০০ মিটার। সম্প্রতি উল্লেখযোগ্যভাবে এই আগ্নেয়গিরিটি বিস্ফোরিত হয় ২০০৭ সালে এবং সর্বশেষ ২০১৭ এর মার্চ মাসে।

চ্যাংবাইসান, চীন

চ্যাংবাইসান নামের এই আগ্নেয়গিরিটি এশিয়ার একটি প্রত্যন্ত অংশে অবস্থিত। আগ্নেয়গিরিটির শেষ অগ্ন্যুৎপাত হয় ১৯০৩ সালে। এই আগ্নেয়গিরিটির ভয়ংকর ইতিহাস রয়েছে। খ্রিষ্টপূর্ব ৯৬৯ সালে এটি যে অগ্ন্যুৎপাত ঘটায়, তা দশ হাজার বছরের ইতিহাসে বিরল। এমনকি ১৮৮৬ সালে ক্রাকাটাউ এর থেকেও তিন গুণ বেশি শক্তিশালী ছিল সেটি।

ধারণা করা হয়ে থাকে, এই আগ্নেয়গিরিটির তলদেশ নয়টি লাভার হ্রদের সমন্বয়ে গঠিত। যার একেকটি নয় কিউবিক কিলোমিটার আয়তন সম্পন্ন। সে হিসেবে এটি যদি বিস্ফোরিত হয়, তবে এর পার্শ্ববর্তী এক লাখ মানুষের বসবাস সম্পন্ন জায়গা ধ্বংস হবে।

২০০০ সালের শুরুর দিকে বিজ্ঞানীরা এই আগ্নেয়গিরি নিয়ে একটি পর্যবেক্ষণ শুরু করেন। এবং তারা এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, এর কার্যকলাপ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর যে ম্যাগমা চেম্বার, তার সুপ্তবস্থা ধীরে ধীরে শেষ হয়ে আসছে এবং এর ফলে এই শতকের শেষের দিকে তা একটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।

তবে আরো জটিল বিষয় হচ্ছে, চ্যাংবাইসান এর অবস্থান চীন এবং উত্তর কোরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি অঞ্চলে। ভূ-রাজনৈতিক এই স্পর্শকাতর এলাকায় অবস্থানের ফলে তা বিস্ফোরিত হলে তা মোকাবেলা করা বেশ কঠিন হবে।

তথ্যসূত্র : বিজনেস ইনসাইডার




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ এপ্রিল ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়