ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মাতৃ মমতায় শিশুর পায়ে রশি

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৮, ৩ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মাতৃ মমতায় শিশুর পায়ে রশি

আরিফ সাওন : সন্তানের পায়ে রশি বেঁধে রেখেছেন মা। যখন ঘুমান তখন মা নিজের  সাথে রশির এক মাথা বেঁধে আরেক মাথা দিয়ে সন্তানের পা বেঁধে দেন।

কারণ, মা ঘুমালে অসতর্কতাবশত সন্তান যেন দূরে সরে না যায়। জনসমাগমপূর্ণ একটি জায়গায় প্রাচীরের পাশে এভাবে প্রায়ই শুয়ে থাকতে দেখা যায় এই মা ও তার সন্তানকে। এই জায়গাটিই তাদের সুখের ঘর আর শান্তির বিছানা!

উপরের লেখাটি একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস। ফেসবুকে পোস্ট করা একটি ছবির সাথে এই স্ট্যাটাসটি দেওয়া হয় গত ১৯ এপ্রিল। এই স্ট্যাটাসে কমেন্টে মোহাম্মদ রিয়াজ লিখেছেন, কষ্ট হল ছবিটা দেখে এবং লেখাটি পড়ে। মানবতা এখন বহুদূর!

রিটন মজুমদার লিখেছেন, মানবতা আজকাল অথৈ সাগরের মাঝখানে ভেসে বেড়াচ্ছে। এই জন্মদাত্রী মা আর উনার সন্তানের জন্য রইলো অনেক অনেক শুভ কামনা।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ওমর ফারুক শামীম লিখেছেন, মায়ে আমার কতো কাছে রয়-হঠাৎ পাইলে আঘাত ঘটলে ব্যাঘাত মা শব্দটি মুখে হয়।

তুষার দাস লিখেছেন, যাদের আছে তাদের বস্তা ভরা আছে, আর যাদের নাই তাদের মাথার বালিশ পর্যন্ত নাই। হায়রে মানুষ জাতি!

মো. মাহফুজুর রহমান লিখেছেন, আসলে ভাবলে খুব কষ্ট হয়। আমাদের সমাজের যারা বিত্তবান আছেন তারা যদি এসব অসহায় মানুষের দিকে একটু সুদৃষ্টি দেন তাহলে হয়তো এদের জীবনটাও সুন্দর হতে পারে।

এই মা ও সন্তানকে ৩ মে বুধবার বেলা ৪টার দিকে দেখা যায় সচিবালয়ের পাশে ফুটপাতে। সেখানে শিশুটি খালি গায়ে ঘুমিয়ে আছে। দেখা যাচ্ছে তার শীর্ণ দেহ। অপুষ্টির ছাপ স্পষ্ট। পাশে বসে আছেন মা। তার গায়ে অপরিষ্কার পোশাক। অসহায় চোখে মা পথচারীদের দিকে হাত বাড়িয়ে আছেন। পথচারীরা যে যা পারছেন তার হাতে দিয়ে যাচ্ছেন। মায়ের পাশেই রাখা একটি ছোট ব্যাগ আর সেই ব্যাগের উপরে দেখা গেল একটি রশি।

রাজধানীর পল্টন-প্রেসক্লাব এলাকায় যারা সবসময় চলাচল করেন তারা প্রায়ই দেখে থাকেন এই মা ও শিশুটিকে। এরকমই কয়েকজন বলেছেন, যখন ওই মা জেগে থাকেন তখন সন্তানের পায়ে রশি বাধেন না। যখন মা ফুটপাতে ঘুমান তখনই সন্তানের পায়ে রশি বেঁধে দেন। আর রশির আরেক মাথা বাঁধেন নিজের সাথে।

বুধবার সচিবালয়ের পাশে ফুটপাতে বসে থাকা ওই মায়ের কাছে গিয়ে শিশুটির নাম জানতে চাওয়া হয়। কোথায় বাড়ি, শিশুটির বাবার নাম কি, বাবা কি করেন, কোথায় থাকেন-এসব জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তার মুখ থেকে একটি কথাও উচ্চারিত হয় নি।

এরপর যখন ঘুমন্ত শিশুটির ছবি তুলতে যাওয়া হয়, তখন তিনি শিশুটিকে কোলে তুলে নেন। মাথা নিচু করে উঠে দাঁড়ান আর একইভাবে মাথা নিচু করে ফুটপাত ধরে হাঁটা শুরু করেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ মে ২০১৭/সাওন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়