ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

উপকূলের তিন সবুজ যোদ্ধা

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৮, ৭ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
উপকূলের তিন সবুজ যোদ্ধা

মো. রিয়াজ, চৈতি রায়, জুনাইদ আল হাবিব

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : পরিবেশ সুরক্ষায় সবুজ বনায়নের বিকল্প নেই। যতই দিন যাচ্ছে নতুন বনায়ন তো করা হচ্ছে না, উল্টো বনাঞ্চল উজাড় করা হচ্ছে।

সবুজ বনায়ন ক্ষতিগ্রস্ত হলে পরিবেশের ওপর নেমে আসে বিপর্যয়। প্রকৃতির ওপর দায়বোধ, সচেতনতা অভাবে মানুষ পরিবেশ ধ্বংস করে হয়তো নিজের অজান্তে। পরিবেশ রক্ষায় তথা পৃথিবীর সুরক্ষায় আজ প্রয়োজন সচেতন উদ্যোগের। সবুজ সুরক্ষায় কাজ করছে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই। উপকূলের তেমনি তিনজন ক্ষুদে সবুজ যোদ্ধার গল্প তুলে ধরা হলো।

উপকূল রক্ষা করতে বেশি বেশি গাছ লাগাতে হবে

‘রাস্তার ধারে, বাড়ির আঙ্গিনায় কিংবা বিদ্যালয় মাঠে যেখানেই সুযোগ পাই সেখানেই গাছ লাগাই। কেননা বৃক্ষ সমৃদ্ধ উপকূলের এই সবুজ বেষ্টনি বিলিন হয়ে গেলে প্রাণীকুলের অস্তিত্বও বিলিন হয়ে যাবে। তাই উপকূলের সবুজ বেষ্টনি রক্ষা করতে হলে আরো বেশি বেশি গাছ লাগাতে হবে।’- এমনটাই বললেন বরগুনার বেতাগী উপজেলার চান্দখালী কদভানু বালিকা মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী চৈতি রায় (১৫)।



২০১৬ সালে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক সবুজ উপকূল কর্মসূচির মাধ্যমে চৈতি জানতে পারে সবুজ উপকূলের গুরুত্ব। তাদের স্কুলেই অনুষ্ঠিত হয় লেখালেখি ও সবুজ উপকূলের গুরুত্ব নিয়ে দুই দিনের কর্মশালা। কর্মশালায় সবুজ উপকূলের গুরুত্বসহ তুলে ধরা হয় সবুজ উপকূলের প্রয়োজনীয়তা। সেই সঙ্গে জলবায়ুর বিরুপ প্রভাবে ক্রমাগত সবুজ উপকূল ধ্বংস হওয়ার কারণও ব্যাখ্যা করা হয় কর্মশালায়। এরপর থেকেই চৈতি নিরবে নিভৃতে নিজের মতো করে উপকূলের সবুজ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন।

স্থানীয় উন্নয়ন কর্মী খায়রুল বাশার সেতু বলেন, এভাবে উপকূলের সব শিশুরা যদি বৃক্ষ রোপনে উদ্বুদ্ধ হয় তবে জলবায়ু পরিবর্তনের যে বিরুপ প্রভাব উপকূলের ওপর পড়ছে তা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

সবুজ বাঁচাই, সবুজে বাঁচি

ভোলা জেলা সদরের নাজিউর রহমান ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র মো. রিয়াজের (১৭) মনে গেঁথে আছে ‘সবুজ বাঁচাই, সবুজে বাঁচি’ স্লোগান।

উপকূলের সবুজ বাঁচানোর যুদ্ধে রিয়াজ যুক্ত হয় ২০১৪ সালের গোড়ার দিকে। নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টবগী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বের হয়েছিল ব্যতিক্রমী ধারার দেয়াল পত্রিকা বেলাভূমি। অন্যদের সঙ্গে রিয়াজও এই পত্রিকার একজন খুদে লেখক। সে লিখে পরিবেশ নিয়ে। সেই থেকেই তার যাত্রা সবুজের সঙ্গে। পরে আর সেটা লেখালেখির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। যে দেয়াল পত্রিকায় নিজে লিখেছে, সেই দেয়াল পত্রিকা এখন বিভিন্ন স্কুলে বের হচ্ছে তার নেতৃত্বে।

‘তারুণ্যে উপকূল’ স্লোগান নিয়ে প্রকাশিত দেয়াল পত্রিকা বেলাভূমি’র মূল লক্ষ্য পড়ুয়াদের পরিবেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা এবং সৃজনশীল মেধার বিকাশ ঘটানো। উপকূল জুড়ে স্কুল-কলেজ পড়ুয়ারা এই দেয়াল পত্রিকায় লিখছে।

দেয়াল পত্রিকার কার্যক্রমে যুক্ত হতে না হতেই রিয়াজ সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় ‘সবুজ উপকূল’ কার্যক্রমে। এখান থেকে সে আরো ধারণা পায়। উদ্বুদ্ধ হয়। এই ধারাবাহিকতায় উপকূলের পড়ুয়াদের জ্ঞান ও সৃজনশীল মেধাবিকাশ সংগঠন ‘আলোকযাত্রা’ দলে যুক্ত হয় রিয়াজ। ভোলায় এই দলের দলনেতা সে। এর ফলে সবুজ নিয়ে তার কাজের মাত্রা আরো কয়েক ধাপ বেড়ে যায়। গাছের চারা রোপণে সহপাঠীদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি নিজেও গাছের চারা লাগাচ্ছেন। একই সঙ্গে গাছের চারা বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগ নিচ্ছেন।

রিয়াজ রাইজিংবিডিকে বলেন, আমি সবুজের যোদ্ধা। সবুজ মানেই আমার কাছে সুন্দর সতেজ পরিবেশ। আমি নতুন প্রজন্মকে গড়তে চাই সবুজের আহবানে। সারাজীবন সবুজ উপকূল গড়ার লক্ষে কাজ করে যেতে চাই।

আমি প্রকৃতির, প্রকৃতি আমার

উপকূলের মেঘনার কূল ঘেঁষা জেলা লক্ষ্মীপুর। উপকূলের সবুজ রক্ষার অন্যতম এক খুদে যোদ্ধা লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী জুনাইদ আল হাবিব (১৭)।



জুনাইদ নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে লেখালেখি শুরু উপকূলীয় শিক্ষার্থীদের দেয়ালপত্রিকা ‘বেলাভূমি’তে। এরপর সে বছরের ১২ সেপ্টেম্বর ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক সবুজ উপকূল-১৫ কর্মসূচিতে সৃজনশীল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কার জিতে জুনাইদ। চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি রাজধানীর বাংলা মটরের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে ‘সবুজ উপকূল-১৬’ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে সবুজ উপকূল গড়তে যুক্তি তুলে ধরে অর্জন করেছে খুদে বক্তা সাফল্য স্মারক।

পরিবেশ নিয়ে জুনাইদ দারুন সচেতন। নিয়মিত গাছ লাগায়, গাছের পরিচর্যা করে, স্কুল কলেজের নিয়মিত ক্যাম্পেইন করে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেয় গাছ লাগাতে।

জুনাইদ রাইজিংবিডিকে বলেন, আমি মনে করি ‘আমি প্রকৃতির, প্রকৃতি আমার।’ মাত্রাধিক দুর্যোগের কবলে ঝুঁকিতে আমাদের উপকূল। এখানে সংকটে রয়েছে সবুজ, এ বিষয়ে এখনো অনেকে অসচেতন। কেবল গুঁটিকয়েক মানুষ সবুজ নিয়ে আন্দোলন করলে উপকূলের সবুজ রক্ষা পাবে না। সরকারি কিংবা বেসরকারি উদ্যোগে উপকূলের প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘সবুজ উপকূল টিম’ গঠনের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে বাড়িতে বাড়িতে ওদের দিয়ে সবুজ সুরক্ষার সচেতনতা মূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে। এর মাধ্যমে আমাদের নতুন প্রজন্ম সবুজ মনস্ক মানুষ হবে। পুরো উপকূল জুড়ে সবুজ বেস্টনি গড়ে তোলা সম্ভব হলে, উপকূলে ঝুঁকির পরিমাণ কিছুটা হলেও কমবে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ জুন ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়