ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অনল প্রবাহের কবি

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ১৭ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অনল প্রবাহের কবি

সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী

শাহ মতিন টিপু : তিনি বাংলার মুসলিম জাগরণের অন্যতম অগ্রদূত । তিনি অনল প্রবাহের কবি । তিনি সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী । কিংবদন্তী এই বাগ্মীকবির ৮৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৩১ সালের ১৭ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। জন্ম ১৩  জুলাই, ১৮৮০ সালে ব্রিটিশ ভারতের পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জে ।

আধুনিক বাংলা গদ্য সাহিত্যের প্রথম দিকের মুসলমান সাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম একজন। তার লেখায় ছিল বিদ্রোহ। অন্যায়-অন্যায্য দেখলে লেখায় ও বক্তব্যে আগুন ঝরতো তার। সঙ্গতকারণে, ব্রিটিশদের রোষাণলে পড়ে তাকে বহুবারই দীর্ঘমেয়াদে কারাভোগ করতে হয়।

১৯০০ সালে তিনি তার প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থটিরও নাম রাখেন ‘অনলপ্রবাহ’।  এই ‘অনলপ্রবাহ’ সহ্য হয়নি তৎকালীণ ইংরেজ সরকারের। তাই বইটি বাজেয়াপ্ত করা হয়। তিনি একাধারে ছিলেন একজন কবি, ঔপন্যাসিক ও রাজনীতিবিদ।

তার ‘অনলপ্রবাহ’ প্রসঙ্গে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বলেন, ‘একটি সুপ্ত জাতিকে কলঙ্কলিপ্ত করিতে না দেওয়া এবং ঘুমন্ত জাতিকে জাগাইয়া অতীত গৌরবের মহিমায় উদ্বুদ্ধ করিবার কঠিনতম পথে একাকী তিনি অগ্রসর হইয়াছিলেন। আমাদের তরুণ বয়সে তাঁহার ‘অনল প্রবাহ’ রক্তে রক্তে বিদ্যুতের সঞ্চার করিয়াছিল।’ (৫ মার্চ ১৯৪৬)।

শিক্ষা, অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে বিশেষত বাঙালি সমাজের অগ্রগতি সাধনে তিনি জাগরণমূলক সাহিত্য রচনা, সভা-সমাবেশ, স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা, সমবায় সমিতি গঠন এবং ব্যবসায়-বাণিজ্যে তরুণ ও যুবকদের হাতে-কলমে শিক্ষা ও উত্সাহ দান করেন। আবার অন্তঃপুর থেকে নারীকে শিক্ষাঙ্গনে বের করে এনে মুসলিম নারী মুক্তির অগ্রদূত হয়ে ওঠেন।

পুরুষ শাসিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ উঠে এসেছিল উনিশ বছরের তরুণের কলমে। তার কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছে অন্ধকার অবরোধের প্রাচীরে বন্দী অসহায় নারীর শিক্ষা, স্বাধীনতার কথা। তিনি লিখেছ্নে :

‘স্ত্রী জাতির তরে দাও শিক্ষা দাও

জাতীয় উত্থানে তাদেরো মাতাও

বাল্য পরিণয় উঠাইয়া দাও

সাম্য স্বাধীনতা তাহাদের দাও

উদিবে অচিরে সৌভাগ্য তপন।’

তিনি নির্ভীক কণ্ঠে বলেছেন, ‘যাহারা নারীকে পেছনে রাখিয়া অন্ধ অন্তঃপুরের বেষ্টনে বেষ্টিত রাখিয়া জাতীয় জাগরণের কল্যাণ কামনা করে, আমার বলিতে কুণ্ঠা নাই তাহারা মহামুর্খ!’

মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ সিরাজী প্রসঙ্গে বলেন, ‘সেকালে মুসলিম সমাজে মহিলাদের জন্যে কঠোর পর্দাপ্রথা বা অবরোধপ্রথা চালু ছিল। সিরাজী সাহেব সভাসমিতিতে এ অবরোধ প্রথার সরাসরি প্রতিবাদ করতেন। তিনি কোরআন-হাদীস ও ইসলামের ইতিহাসের সাহায্যে প্রমাণ করেছেন যে, পর্দা ইসলামের একটি অপরিহার্য অঙ্গ কিন্তু বর্তমানে যে পর্দা চালু তা ইসলামের পর্দা নয় বরং তা ইসলামবিরোধী অবরোধ প্রথা। নিজ কন্যা ফেরদৌস মহলকে ইংরেজী স্কুলে ভর্তি করানো এবং কোনো কোনো সভায় কন্যাকে দিয়ে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করাতেন। সিরাজী সাহেব ইসলামে সঙ্গীত হারাম নয় প্রমাণ করার জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।’

১৯২৫ সালেই তিনি বাংলা ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম ও অন্যতম জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠার জোরালো দাবি জানান।

ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা সিরাজী শিক্ষা, অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে বাঙালিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে ছিলেন আলোকবর্তিকাস্বরূপ। তার সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের মূল লক্ষ্যই ছিল জাতীয় পুনর্জাগরণ এবং স্বাধীনতা অর্জন। 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ জুলাই ২০১৭/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়