ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

দুখু মিয়ার পায়ের লেখা

রেজওয়ান রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৫৪, ২৭ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দুখু মিয়ার পায়ের লেখা

রেজওয়ান রহমান : রাজধানীতে চলতে ফিরতে অনেক ঘটনা চোখে পড়ে। কিছু ঘটনা মানুষ এড়িয়ে যায়। আবার কিছু ঘটনা মানুষকে চমকে দেয়। তেমনি একটি ঘটনা চোখে পড়ে রাজধানীর ব্যস্ততম মোড় সায়েন্স ল্যাবে। মাত্র ৭ বছরের ছোট্ট এক শিশু লিখছে অবিরাম। ভাবছেন এ আর এমন কি! অথচ শিশুটির লেখা থমকে দিচ্ছে রাজধানীর ব্যস্ত পথচারীদের। কেউ পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় থামছেন, দাঁড়িয়ে দেখছেন, কেউ উঁকি দিচ্ছেন, কেউ আবার শিশুটির সামনে রাখা সাহায্যের পাত্রে রেখে যাচ্ছেন দুই টাকা পাঁচ টাকার নোট। 

তেমনি এক পথচারী নাহিদ পারভিন। তিনি ইডেন কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি শিশুটির লেখা দেখে অবাক হয়েছেন। কারণ শিশুটি হাত দিয়ে নয়, লিখছে পা দিয়ে। নাহিদ বলেন, পা দিয়ে লিখতে পারে এমন মানুষের কথা শুনেছি কিন্তু এত চমৎকার লেখা আমি খুব কমই দেখেছি।  আরেক পথচারী নুসরাত রহমান। তিনি বলেন, ফুটপাথে চলতে গিয়ে শিশুটিকে দেখে থমকে গেছি। ওর প্রতিভা আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়। মানুষ চাইলেই পারে- প্রতিবন্ধী এই ছেলেটি তার উদাহরণ।

বলছিলাম, ছোট্ট শিশু দুখু মিয়ার কথা। জন্মগতভাবে দুখু মিয়ার দুই হাত ও দুই পা অক্ষম। দরিদ্র পরিবারের প্রথম সন্তানের শারীরিক এই অক্ষমতার জন্য দাদী নাম রাখেন ‘দুখু মিয়া’। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, সে পায়ের সাহায্যে হাঁটতে না পারলেও, ডান পা দিয়ে নিখুঁতভাবে লিখতে সক্ষম।


দুখু মিয়ার গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারি থানার বকবান্ধা গ্রামে। বাবা রিকশাচালক মো. আলমাস আলী। দুখু মিয়া বকবান্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণীর শিক্ষার্থী। আর্থিক টানাপোড়েনের মঝেও দুখু মিয়ার পড়ালেখার খরচ চালিয়ে যাচ্ছিল তার পরিবার। সম্প্রতি কুড়িগ্রামে তাদের ভিটা বন্যাকবলিত হওয়ায় পরিবারটি চরম বিপাকে পরে। দুমুঠো খাবারের খোঁজে তারা সপরিবারে পাড়ি জমিয়েছে রাজধানীতে। দুখু মিয়া সাহায্যের জন্য হাত পেতে বসেছে পথের ধারে।

তার মা গোলেনূর বেগম জানান, তারা গত একমাস ঢাকা এসেছেন। এলাকায় সব কিছু পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বর্তমানে তাদের কোনো কাজ নেই। শুধুমাত্র পেটের তাগিদেই তাদের ঢাকায় আসার সিদ্ধান্ত। চার সন্তানের পরিবার নিয়ে সে এখন দিশেহারা। দুখু মিয়া সম্পর্কে তিনি জানান, ছেলে প্রতিবন্ধী হওয়ায় তার পরিচর্যায় কম রাখেননি তিনি। দুখু ডান পা দিয়েই খেলাধুলা করত। এক পর্যায়ে সে ডান পা দিয়ে মাটিতে আঁকতে শুরু করে। এক সময় সে লিখতে সক্ষম হয়। আর এখন তার পায়ের লেখা দেখে অনেকেই প্রশংসা করে।  

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ জুলাই ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ