ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

ফিলিস্তিনিদের হৃদয়ে তিনি আজো অম্লান

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৭, ২৪ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফিলিস্তিনিদের হৃদয়ে তিনি আজো অম্লান

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ইয়াসির আরাফাত

শাহ মতিন টিপু : মনে পড়ে কি ফিলিস্তিনি মুক্তি সংগ্রামের মহানায়ককে? স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা ইয়াসির আরাফাত  তার জীবন-যৌবন মুক্তির সংগ্রামে উৎসর্গ করেছিলেন ।

প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন পিএলও’র চেয়ারম্যান হিসেবে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বও পালন করেন। এ ছাড়া ধর্মনিরপেক্ষ ফাতাহ দলের নেতৃত্ব দেন। ১৯৫৮-১৯৬০ সালের মধ্যে তিনি এই দলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে ইসরায়েলের অস্তিত্বের সম্পূর্ণ বিরোধী থাকলেও পরে আরাফাত ১৯৮৮ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেন।

ফিলিস্তিনের এই মহান নেতার জন্মদিন আজ। ১৯২৯ সালের ২৪ আগস্ট মিসরের কায়রোতে তার জন্ম। পুরো নাম মুহাম্মদ আবদেল রহমান আবদেল রউফ আরাফাত আল-কুদওয়া আল-হুসেইনী। তার বাবা আবদেল রউফ আল-কুদওয়া আল-হুসেইনী ছিলেন ফিলিস্তিনের গাজার অধিবাসী। মা জোয়া আবুল সাউদ ছিলেন জেরুজালেমের অধিবাসী। আরাফাতের চারবছর বয়সে মা মারা যান।

দল-মত-নির্বিশেষে ফিলিস্তিনী জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ মানুষ আরাফাতকে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ফিলিস্তিনীদের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক হিসাবে সম্মান করে থাকে। ফিলিস্তিনি এই মহান নেতা ২০০৪ সালের ১১ নভেম্বর প্রয়াত হন। ফ্রান্সে চিকিৎসারত অবস্থায় তার মৃত্যুকে এখনো রহস্যজনক মনে করেন ফিলিস্তিনি জনগণ।

বাংলাদেশের সঙ্গেও ইয়াসির আরাফাতের সম্পর্ক ছিল অপরিসীম। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্তম্ভের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আমন্ত্রণে ইয়াসির আরাফাত ১৯৯৭ সালে  ঢাকায় এসেছিলেন । এ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বর্ণবাদবিরোধী বিশ্বনন্দিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট সুলেমান ডেমিরিল। 

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি ইয়াসির আরাফাতকে বাংলাদেশের জনগণ মহান বন্ধুর মর্যাদা দিয়েছে। ১৯৭৪ সালে লাহোরে ওআইসি সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু তাকে সম্ভাষণ জানান। তিনি একাধিকবার রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় এসেছেন, অসংখ্যবার ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রা বিরতি করেছেন।

১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী সমাপনী অনুষ্ঠানে ইয়াসির আরাফাত

জীবনের শেষভাগে আরাফাত ইসরাইলি সরকারের সাথে কয়েক দফায় শান্তি আলোচনা শুরু করেন। ১৯৯১ সালের মাদ্রিদ সম্মেলন, ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তি এবং ২০০০ সালের ক্যাম্প ডেভিড সম্মেলন এর মাধ্যমে আরাফাত ইসরাইলীদের সাথে কয়েক দশকের সংঘাতের অবসান ঘটানোর প্রয়াস নেন।

আরাফাত ১৯৯৪ সালে আইজ্যাক রবিন ও শিমন পেরেজ এর সাথে অসলো শান্তি চুক্তির জন্য একত্রে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। কিন্তু একই সময়ে হামাস ও অন্যান্য জঙ্গীবাদী সংগঠনের উত্থান ঘটে। যারা ফাতাহ ও আরাফাতের ক্ষমতার ভিত্তি দূর্বল করে দিয়ে ফিলিস্তিনের বিভিন্ন এলাকায় রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে নেয়।

২০০২ হতে ২০০৪ সালের শেষভাগ পর্যন্ত আরাফাত ইসরাইলী সেনাবাহিনীর হাতে তার রামাল্লার দপ্তরে কার্যত গৃহবন্দী হয়ে থাকেন। ২০০৪ এর শেষদিকে আরাফাত অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কোমায় চলে যান। সেখান থেকে আর জীবনে ফেরা সম্ভব হয়নি তার।

২০১৩ সালে (১২ জানুয়ারি) রেডিও তেহরান পরিবেশিত এক খবরে বলা হয়, ‘ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজ শেষ পর্যন্ত স্বীকার করেছেন যে পিএলও’র সাবেক প্রধান ইয়াসির আরাফাত হত্যায় তাদের হাত ছিল। ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষের সাবেক প্রধান ইয়াসির আরাফাত হত্যাকান্ডে হাত থাকার কথা এই প্রথমবারের মতো স্বীকার করলেন শিমন পেরেজ। তিনি বলেছেন : ইয়াসির আরাফাতকে হত্যা করা ঠিক হয়নি, কারণ তার সাথে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক সৃষ্টির সুযোগ ছিল...ইয়াসির আরাফাতের অবর্তমানে পরিস্থিতি আরো খারাপ এবং জটিল হয়ে উঠেছে।’

খবরটির বিশ্লেষণে বলা হয়, ২০০৪ সালের ১২ অক্টোবরে ইয়াসির আরাফাতকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ফ্রান্সের একটি সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে তাঁর অবস্থার উন্নতি না হয়ে বরং দ্রুত অবনতি হতে থাকে। অল্প সময়ের ব্যবধানে অর্থাৎ ১১ নভেম্বরে তিনি বিষক্রিয়ায় সেই হাসপাতালেই মারা যান।

বার্তা সংস্থাগুলো লিখেছিল আরাফাতের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি বরং বিষাক্ত প্লুটোনিয়ামের সাহায্যে তাকে হত্যা করা হয়েছে, তার জামা কাপড়ে প্লুটোনিয়ামের উচ্চমাত্রা খুঁজে পাওয়া গেছে।

১৯৯৬ সালে ফিলিস্তিনের সাধারণ নির্বাচনে ইয়াসির আরাফাত ফিলিস্তিনের প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি আমৃত্যু লড়াই করেছেন কূটনৈতিকভাবে আর যুদ্ধের ময়দানে। সারা বিশ্ব ঘুরে বেড়িয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন আদায়ের জন্য।

ফিলিস্তিনের জনগণ এখনো এই মহান নেতাকে তাদের হৃদয়ে ধরে রেখেছেন। তার রহস্যজনক মৃত্যুর ১২ বছর পেরিয়ে গেছে, তবু আজও ফিলিস্তিনিরা আজও ভুলেননি তাদের প্রিয় নেতাকে। এখনো জন্ম-মৃত্যু কিংবা ফিলিস্তিনিদের বিশেষ কোন দিবস এলে বহিঃপ্রকাশ ঘটে সেই ভালবাসার। এই মহান নেতার স্মরণে আজও ভরে ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাতাগুলো । আজো ঘরে ঘরে শোভা পাচ্ছে তার বাঁধানো ছবি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ আগস্ট ২০১৭/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়