ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

খ্যাতিই যার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১০, ৩১ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খ্যাতিই যার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল

শাহ মতিন টিপু : মায়াময় নীলাভ চোখের যে ব্রিটিশ রাজবধূ পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত ছিলেন সৌন্দর্য আর মানবিক কর্মকান্ডের জন্য, তিনি প্রিন্সেস ডায়ানা । ব্রিটিশ রাজপরিবারের বধূদের মধ্যে ইতিহাসে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন ।

সুন্দরীদের ‘সুন্দরী’ ডায়ানার প্রয়াণ দিবস আজ। ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট প্যারিসের রিজ হোটেল থেকে বের হওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন এই প্রিন্সেস।তার সঙ্গে মিসরীয় বংশোদ্ভূত প্রেমিক ধনকুবের দোদি আল ফায়েদও মারা যান।

মৃত্যুর আগের বছর ১৯৯৬ সালের শেষ দিকে ব্রিটিশ যুবরাজ প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় প্রিন্সেস ডায়ানার। এই বিচ্ছেদের পর ডায়ানাকে অনেক কিছু ছাড়তে হয়েছে।

বিয়ে বিচ্ছেদের পর ডায়ানার রাজকীয় উপাধি বদলে ফেলা হয়। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ যদিও তার সেই উপাধি রাখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু প্রিন্স চার্লস তা চাননি। এ জন্য প্রিন্সেস অব ওয়েলসের সেই উপাধি কেড়ে নেওয়া হয়। তবে ডায়ানাকে কেনসিংটন প্যালেসে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। এটি এখন উইলিয়াম, কেট মিডলটন এবং তাদের সন্তানদের বাসভবন। ডায়ানাকে বিনোদনের জন্য নির্ধারিত সেন্ট জেমস প্যালেস ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। রানি এলিজাবেথ সেটি ব্যবহার করার অনুমতি দেন।

ডায়ানার গয়নার বাক্সটিও কিছুটা হালকা হয়ে যায়। তাকে বিয়ের সব গয়না রাখার অনুমতি দিয়েছিলেন রানি এলিজাবেথ। তবে বিয়ের সময় পরা মুকুটটি ডায়ানা নিতে পারেননি। কেবল বিয়ের সময়ই একবার এই মুকুট পরতে পারেন রাজবধূরা। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে কেট মিডলটনকে এই মুকুট পরতে দেওয়া হয়। এটির ওপর এখনো রানির অধিকার রয়েছে।

তবে আলাদা হলেও সন্তানদের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রেখেছিলেন চার্লস ও ডায়ানা। মা–বাবার সঙ্গে পছন্দমতো সময় কাটাতে পারতেন উইলিয়াম ও হ্যারি। বোর্ডিং স্কুল ছুটির সময়ে দুই ভাই ভাগাভাগি করে মা-বাবার সঙ্গে সময় কাটাতেন। বিচ্ছেদের পর থেকে ১৯৯৭ সালের আগস্ট মাসে ডায়ানার মৃত্যু পর্যন্ত মা-বাবার সান্নিধ্যে কেটেছে দুই ভাইয়ের।

প্রিন্সেস ডায়ানার অবয়ব মানসপটে ভেসে উঠলেই যে কারোর নজর কাড়তো তার মনকাড়া সৌন্দর্য। রানি এলিজাবেথের এই পুত্রবধূর হৃদয়টাও ছিল সোনায় মোড়া! ‘হাউস অফ উইন্ডসর’-এর চৌকাঠ ডিঙিয়ে তিনি আন্তরিকভাবেই মিশে যেতেন সাধারণ মানুষের মধ্যে।

ডায়ানার জন্ম ১ জুলাই, ১৯৬১। তার পুরো নাম ডায়ানা ফ্রান্সেস স্পেন্সার। বিবাহ পরবর্তী নাম ডায়ানা ফ্রান্সেস মাউন্টব্যাটেন-উইন্ডসর। যুবরাজ চার্লসের প্রথম স্ত্রী এবং ১৯৮১ হতে ১৯৯৭ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের যুবরাজ্ঞী। তার পুত্র রাজপুত্র উইলিয়াম ও হ্যারি, ব্রিটিশ মসনদের উত্তরাধিকারীদের তালিকায় যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয়।

বিয়ের পর থেকে ১৯৯৬ তে বিবাহ বিচ্ছেদ পর্যন্ত তাকে সম্বোধন করা হত ‘হার রয়াল হাইনেস দি প্রিন্সেস অফ ওয়েল্স’। এর পরে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের আদেশক্রমে তাকে শুধু ডায়ানা, প্রিন্সেস অফ ওয়েল্স বলে সম্বোধনের অনুমতি দেয়া হয়।

প্রিন্সেস ডায়ানা ও চার্লসের প্রেম ছিল সেরা রোমাঞ্চকর । ডায়ানাকে দেখেই তার রূপে মুগ্ধ হয়েছিলেন তৃতীয় চার্লস। চার্লসের দৃষ্টিতে ডায়না পৃথিবীর সেরা সুন্দরী। আর ডায়ানার দৃষ্টিতেও প্রিন্স চার্লসই সবচেয়ে আরাধ্য পুরুষ। দুজন দুজনের প্রেমে মজে গেল। সারা বিশ্বে ঝড় উঠল।

রানী এলিজাবেথ প্রথমে এ বিয়েতে অমত করলেও পরে রাজি হয়ে যান। ১৯৮১ সালের ২৯ জুলাই ধুমধামের সঙ্গে তাদের বিয়ে হয় । বিশ্বের প্রায় ৫০০ কোটি মানুষ টেলিভিশনের পর্দায় উপভোগ করল সত্যিকারের এক রাজকীয় বিয়ে। তখন প্রিন্স চার্লসের বয়স ৩২ আর প্রিন্সেস ডায়ানার বয়স ২০। রাজকীয় জাহাজ ব্রিটানিয়াতে চড়ে হানিমুন করলেন তারা। সব ঠিকঠাক মতোই চলছিল। কিন্তু বিয়ের এক বছরের মাথায় ডায়ানা অনুভব করলেন চার্লস তাকে আগের মতো আর ভালোবাসেন না।

সন্দেহ বাড়ল। দূরত্ব বাড়ল। প্রিন্স চার্লসও ডায়ানাকে নিয়ে নানা ঘটনা-রটনার খবর জানল বিশ্ব। বিয়ের সাত বছর পর প্রিন্স চার্লসের হাতে এলো একটি টেপ রেকর্ড ক্যাসেট। তাতে দুটি কণ্ঠের সংলাপ। একটি নারীকণ্ঠ, অন্যটি পুরুষ। নারীকণ্ঠটি প্রিন্সেস ডায়ানার। পুরুষকণ্ঠটি জেমস গিলাবের। চার্লস অনুসন্ধান করে জানলেন গিলাব ছিলেন ডায়ানার বিয়ে-পূর্ব জীবনের বয়ফ্রেন্ড। আর এই কথোপকথনটি ওই সময়ের। ক্যাসেট প্রকাশের পর সারা বিশ্বে আলোড়ন ওঠে। এর ছোঁয়া লাগে রাজপ্রাসাদেও। সংসারে ভাঙনের সুর ওঠে। ডায়ানা ও চার্লস আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা থাকার ঘোষণা দেন। এরপর মিসরীয় ধনকুবের দোদি আল ফায়েদের সঙ্গেও জড়ান ডায়ানা। মৃত্যুর সময় তিনি-ই সঙ্গী ছিলেন।

নব্বইয়ের দশকে ডায়ানার পরকীয়া প্রেমের কাহিনী সারা বিশ্বের পত্র-পত্রিকায় ছড়িয়ে যায়। চার্লসের বিশ্বাসঘাতকতাসহ নানা কারণে অবশেষে ১৯৯৬তে ঘটে বিবাহ বিচ্ছেদ।

সমালোচকদের মতে, খ্যাতিই ডায়ানার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যার পরিণতি ফ্রান্সের প্যারিস শহরে ১৯৯৭ সালের গাড়ি দুর্ঘটনা।  মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত নানা কারণেই ডায়ানা ছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে খ্যাতিমান । ফ্যাশন, সৌন্দর্য, এইডস রোগ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে তার অবদান, ভূমি মাইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন আরও বিখ্যাত করেছে তাকে।

প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যু আজো রহস্যের চাদরে আবৃত। সন্দেহ করা হয়- সড়ক দুর্ঘটনায় নয়,  ডায়ানা তার বন্ধু দোদি এবং গাড়িচালক হেনরি পল হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিলেন। ডায়ানার মৃত্যু হত্যা নাকি নিছকই দুর্ঘটনা সেটি আজও রহস্যই রয়ে গেছে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ আগস্ট ২০১৭/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়