ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় শেখ নূর মোহাম্মদ

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় শেখ নূর মোহাম্মদ

ডেস্ক রিপোর্ট : ১৯৭১ এর ৫ সেপ্টেম্বর যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গোয়ালহাটি গ্রামের পাক হানাদারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অবিস্মরণীয়। এই যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন ল্যান্স নায়েক বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ।

আজ এই বীরশ্রেষ্ঠর ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকী । এ উপলক্ষে আজ নূর মোহাম্মদ ট্রাস্ট ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে র‌্যালি, পুষ্পস্তবক অর্পণ, সশস্ত্র সালাম, চিত্রাংকন ও রচনা প্রতিযোগিতা আলোচনাসভা এবং দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন যশোর জেলা প্রশাসক ও নূর মোহাম্মদ ট্রাস্টের সভাপতি মোঃ এমদাদুল হক চৌধুরী।

বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক শেখ নূর মোহাম্মদের জন্ম ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার (মহিখোলা) বর্তমান নূর মোহাম্মদ নগরে। পিতা মোঃ আমানত শেখ ও মাতা মোসাঃ জেন্নাতা খানম। ডানপিটে নূর মোহাম্মদের পড়া লেখা ছিল সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত। ১৯৫৯ সালের ১৪ মার্চ নূর মোহাম্মদ তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান রেজিমেন্টে যোগদান করেন এবং কৃতিত্বের সঙ্গে প্রশিক্ষণ শেষে একই বছরের ৩ ডিসেম্বর দিনাজপুর সেক্টরে যোগদান করেন। এরপর ১৯৭০ সালের ১ জুলাই যশোর সেক্টর হেড কোয়ার্টারে বদলি হয়ে আসেন। সেখান থেকেই ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।

১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধকালে ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ ৮নং সেক্টরে সাবেক ইপিআর ও বাঙ্গালি সেনাদের নিয়ে গঠিত একটি কোম্পানিতে যোগদান করেন। ৫ সেপ্টেম্বর নূর মোহাম্মদ গোয়ালহাটি গ্রামের সম্মুখ যুদ্ধে একটি টহলের নেতৃত্ব দিচ্ছেলেন। সঙ্গী ছিল আরও ৪ জন সৈন্য। তারা পার্শ্ববর্তী ছুটিপুর পাক হানাদার বাহিনীর ঘাঁটির ওপর নজর রাখছিলেন। পাকবাহিনী টের পেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁদে ফেলার পরিকল্পনা করে। হানাদারদের এই পরিকল্পনা বুঝে উঠতেই নূর মোহাম্মদ সঙ্গীদের নিয়ে হানাদার বাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণ করেন।

শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। মারাত্মক আহত হন সঙ্গী নান্নু মিয়া। তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে মর্টার শেলে মারাত্মক জখম হন নূর মোহাম্মদ। মৃত্যু আসন্ন বুঝে তিনি সিপাহী মোস্তফা কামালের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিয়ে আহত নান্নু মিয়াকে নিয়ে সবাইকে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলেন। উপায়ান্তর না পেয়ে তারাও তাই করলেন, কিন্তু একটি এসএলআর রেখে যান মারাত্মক আহত কমান্ডারের কাছে। নূর মোহাম্মাদ মৃত্যুপথযাত্রী হয়েও এসএলআর নিয়ে শেষবারের মত ঝাঁপিয়ে পড়েন হানাদারদের উপর, সেখানেই তিনি শহীদ হন। পরবর্তীতে নিকটবর্তী একটি ঝোঁপের মধ্যে এই বীরের মৃতদেহ পাওয়া যায়। শত্রুর বেনয়টে তার দেহ ছিল ক্ষত বিক্ষত, ক্ষিপ্ত হানাদাররা চোখ দু’টি কোটর থেকে উপড়ে ফেলেছিল ।

ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ সঙ্গী সৈনিকদের প্রতি যে ভালবাসা প্রদর্শন করেন এবং মৃত্যু নিশ্চিত বুঝে দেশের জন্য আবারও হানাদারদের খতমের জন্য একা ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বাধীনতার পথ সুগম করার চেষ্টা চালিয়ে দেশপ্রেমের যে প্রমাণ রেখেছেন তার কোন তুলনা নেই। যতদিন এ জাতি থাকবে ততদিন নূর মোহাম্মদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়