ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

প্লেবয় ম্যাগাজিনের হিউ হফনারের বেড়ে ওঠা

অহ নওরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১৮, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্লেবয় ম্যাগাজিনের হিউ হফনারের বেড়ে ওঠা

হিউ হেফনার

অহ নওরোজ : আন্তর্জাতিক প্রাপ্তবয়স্ক ম্যাগাজিন প্লেবয়-এর প্রতিষ্ঠাতা হিউ হফনার গত ২৭ সেপ্টেম্বর মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।

১৯৫৩ সালে নিজ বাড়ি হতে প্লেবয় ম্যাগাজিন প্রকাশ করা থেকে শুরু করে আজকের দিনে বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত পত্রিকার আসন দখল করা, প্লেবয় ম্যাগাজিনের মাধ্যমে নগ্নতাকে পশ্চিমী মূলধারার প্রকাশনায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করা, ম্যাগাজিনের ব্যাবসা করে কোটিপতি হয়ে যাওয়া, এই সবকিছুর পেছনে ছিল তার জীবনের একটি বড় যাত্রা। তার এই ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সাধারণ পাঠকদের বেশ আগ্রহ রয়েছে।

হিউ হফনার ১৯২৬ সালের ৯ এপ্রিল আমেরিকার শিকাগোতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যখন জন্মগ্রহণ করেন সে সময়ে আমেরিকায় চলছিল প্রহিবিশন ইরা বা নিষিদ্ধ যুগ। সে সময়ে আমেরিকায় ব্যক্তি স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করা হতো। এই সময়কাল ছিল ১৯২০ থেকে ১৯৩৩। যা হোক, সেই সময়ে জন্মগ্রহণ করেও পরবর্তীতে হফনারের হাত দিয়ে প্লেবয় ম্যাগাজিনের যাত্রা শুরু হয়, যার মাধ্যমে নগ্নতা পশ্চিমী মূলধারার প্রকাশনায় স্থান পায়। বিশ্বব্যাপী এই প্রাপ্তবয়স্ক ম্যাগাজিন একমাসে সবচেয়ে বেশি বিক্রির রেকর্ড গড়ে।

হফনার ছিলেন পরিবারের প্রথম পুত্র। তার পরিবারে তার একটি ছোট ভাইও ছিল। হফনারের বাবা-মা দুজনেই পেশায় ছিলেন শিক্ষক। মজার ব্যাপার হল, হফনারের পূর্বপুরুষেরা কেউই আমেরিকান ছিলেন না। মা গ্রেস ক্যারোলিন ছিলেন সুইডিশ বংশোদ্ভূত আর পিতা গ্লেন লুসিয়াস হফনারের পিতামাতার একজন ছিলেন ইংরেজি একজন ছিলেন জার্মান। হফনার তার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তার পরিবার ছিল প্রচণ্ড পরিবারের রক্ষণশীল এবং খ্রিষ্টান ধর্ম প্রবলভাবে বিশ্বাসী।

হফনার বেড়ে উঠেছিলেন শিকাগোর ইলিনয়ে। এখানে প্রথমে সায়রা ইলিমেন্টরি স্কুল, স্টেইনমেটস কলেজ এবং সবশেষে ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইকোলজিতে পড়াশোনা করেন এবং এই বিষয়ের উপরেই ব্যাচেলর অব আর্টস ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্র অবস্থাতেই তার সাংবাদিকতার হাতেখড়ি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে ১৯৪৪ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্র আর্মিদের পত্রিকা মিলিটারি নিউজপেপারে কাজ করেন।

গ্রাজুয়েশন শেষ করে তিনি এস্কয়ার ম্যাগাজিনে কপি রাইটার হিসেবে চাকরি শুরু করেন। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর বাঁধাধরা নিয়মের চাকরিতে তিনি বিরক্ত হয়ে ১৯৫২ সালের অক্টোবর কিংবা নভেম্বরে এই চাকরি ত্যাগ করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি ব্যাংক থেকে ৬০০ ডলার ঋণ নেন এবং বিনিয়োগকারিদের মাধ্যমে এটিকে ৮০০০ ডলারে উন্নীত করেন। এরপর মায়ের কাছ থেকে আরো ১০০০ ডলার নিয়ে নিজ বাড়ি থেকেই প্লেবয় ম্যাগাজিনের সূচনা ঘটান। ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বর সংখ্যা দিয়ে যাত্রা শুরু করে আজকের সর্বাধিক বিক্রি হওয়া ম্যাগাজিন প্লেবয়।

এই পত্রিকার প্রথম কভার স্টোরি করা হয়েছিল মেরিলিন মনরোকে। যদিও সে ইসুর জন্য ম্যাগাজিনের কভারে যে ছবিটি ব্যাবহার করা হয়েছিল তা ছিল ১৯৪৯ সালে একটি ন্যুড ক্যালেন্ডারের জন্য তোলা মনরো একটি ছবি। কিন্তু প্রথম সংখ্যাতেই ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিলেন হফনার। প্রথম সংখ্যা বিক্রি হয়েছিল ৫০ হাজার অধিক কপি। হফনারের সবচেয়ে পারদর্শিতা ছিল নতুন আইডিয়া তৈরিতে। তিনি প্লেবয় পত্রিকার মাধ্যমে এমন কিছু ধারণার সূচনা করেন যা আগে কেউ ভাবেননি। এছাড়া পত্রিকার মেকআপ এবং পরিচ্ছন্ন স্টাইলে তার জুড়ি নেই। পরিবর্তীতে এই পত্রিকার মাধ্যমেই বহু সাধারণ ব্যক্তিতে তারকায় পরিণত করেছেন হফনার।

শুধু ম্যাগাজিনই নয় পরবর্তীতে ক্যাসিনো ও নাইটক্লাবের ব্যবসাও শুরু করেছিলেন হেফনার। যা তাকে কোটিপতির আসনে বসায়। জীবনের বিভিন্ন সময়ে প্রাপ্তবয়স্ক সিনেমায় প্রযোজনার পাশপাশি অভিনয়ও করেছেন।

হফনারের ব্যক্তিজীবন আর ব্যবসায়িক জীবনের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য ছিল না। ১৯৪৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে সে সময়ে ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মিল্ড্রিড উইলিয়ামসকে বিবাহ করেন। তার সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটান ১৯৫৯ সালে। এরপর দ্বিতীয় বিবাহ করেন আমেরিকান মডেল ও অভিনেত্রী কিমবারলি কোনারডকে, ১৯৮৯ সালে। তার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে ২০১০ সালে। এরপর ২০১২ সালে আবার আমেরিকান মডেল ক্রিস্টাল হ্যারিসের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই ক্রিস্টাল হ্যারিসের গর্ভেই জন্মগ্রহণ করেন হফনারের অন্যতম উত্তরসূরি ক্রিস্টাল হফনার। যিনি এখন আমেরিকার অন্যতম পরিচিতি ডিজে এবং মডেল, এছাড়া তিনি এখন প্লেবয় এন্টারপ্রাইজের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।  মিল্ড্রিড উইলিয়ামসের গর্ভে জন্ম নেওয়া হফনারের প্রথম সন্তানের নাম ক্রিস্ট্রি হেফনার। যিনি দীর্ঘদিন ধরে প্লেবয় এন্টারপ্রাইজের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন।

ব্যক্তিজিবনে হফনার চার সন্তানের জনক। হফনার বেঁচে ছিলেন ৯১ বছর। গত ২৭ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলসের হম্বি হিলসে নিজস্ব বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

পড়ুন :
 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭/ফিরোজ 

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়