ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

আলো জ্বলবে কবে?

সাইফ বরকতুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৪, ১১ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আলো জ্বলবে কবে?

রাজিফা আকতার সাথী। ছবি: সংগৃহীত

সাইফ বরকতুল্লাহ : একে একে অনেক আলো নিভে যাচ্ছে। সাথীর মৃত্যুর খবর পড়ে আয়েশার কথা মনে পড়ে গেল। মাত্র একদিন বয়সে আয়েশা আক্তারকে নিজেদের কাছে নিয়ে এসেছিলেন নিঃসন্তান দম্পতি হযরত আলী ও হালিমা বেগম। গত আট বছরে একদিনের জন্যও মেয়েকে কাছছাড়া করেননি। সেই মেয়েকে সুরক্ষা দিতে না পেরে আত্মঘাতী হন বাবা। গত ২৯ এপ্রিল শিশু মেয়ে ধর্ষণের শিকার হওয়ার পরও বিচার না পাওয়ায় শ্রীপুরে মেয়েকে নিয়ে চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন হযরত আলী। আয়শা হেরাপটকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

এর ঠিক পাঁচ মাস পর এমনই আরেকটি হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটল। রাজিফা আকতার সাথী। বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় এক বখাটে যুবকের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সাথী (১৪) আত্মহত্যা করেছে। ৮ অক্টোবর  সন্ধ্যায় উপজেলার জিয়ানগর গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে। আত্মহননকারী সাথী জিয়ানগর গ্রামের ক্ষুদে ব্যবসায়ী গোলাম রব্বানীর মেয়ে।[সূত্র: সমকাল, ৯ অক্টোবর ২০১৭,]।

খবরে বলা হয়, সাথীর বাবা গোলাম রব্বানী জানান, বখাটে যুবক হুজাইফা ইয়ামিন তার মেয়েকে পথে উত্যক্ত করতো। এ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় একাধিকবার সালিশ-বৈঠক করা হলেও ওই বখাটেকে নিবৃত্ত করা যায়নি। রোববার বিকেলে সাথী বাড়ি থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরে প্রাইভেট পড়তে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা আমাকে জানিয়েছেন, সন্ধ্যার কিছু আগে আমার মেয়ে যখন বাড়ি ফিরছিল তখন রাস্তায় ওই বখাটে আবারও আমার মেয়ের পিছু নেয় এবং কটূক্তি করে। এতে আমার মেয়ে অপমানিত বোধ করে তবে কাউকে কিছু না বলেই সে বাড়ি ফিরছিল। আমি তখন জিয়ানগর বাজারেই ছিলাম। আমার সামনে দিয়ে যাবার সময় সাথী আমাকে বলেছিল ‘আব্বা আপনি তাড়াতাড়ি বাড়ি আসেন তো আপনার সাথে কথা আছে’। তখন আমি তাকে বলেছিলাম ‘ঠিক আছে মা তুমি যাও আমি আসছি’। জিয়ানগর বাজারের মাছ ধরার জাল বিক্রেতা গোলাম রব্বানী জানান, সাথী বাড়ি ফিরেই নিজের ঘরে গিয়ে ওড়না দিয়ে গলা পেঁচিয়ে ফাঁস নিয়ে ঝুলে পড়ে। এতে সঙ্গে সঙ্গে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। পরে বাড়ি থেকে আমাকে খবর দেওয়া হয় যে সাথী আত্মহত্যা করেছে।

দুই ভাই বোনের মধ্যে ছোট সাথী খুবই মেধাবী ছাত্রী ছিল। সাথীকে তার বাবা দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরে বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলে (ইংলিশ মিডিয়াম) ভর্তি করে দিয়েছিলেন। সেখান থেকে সে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি) জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল। আর্থিক সংকটের কারণে পরে সাথীর বাবা আর মেয়েকে ওই ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াতে পারেননি। পরে তাকে বাড়ির পাশে জিয়ানগর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়। পড়ালেখার প্রতি মেয়েটির খুব আগ্রহ ছিল। বিজ্ঞানের প্রতিটি বিষয়ে সে খুব ভালো নাম্বার পেত এবং ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল ছিল। প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিভিন্ন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সে অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে বেশ কিছু পুরস্কারও পেয়েছে।

বখাটের অত্যাচার নতুন কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু সমস্যা হলো ইদানীং বখাটের অত্যাচারের কারণে ঝরছে প্রাণ। সমাজের কিছু প্রভাবশালীর কারণে হচ্ছে না এর বিচার। বিশেষ করে যারা নিম্নবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত- এসব পরিবার অসহায়। বখাটেদের অত্যাচারে মেয়েদের কি স্কুল-কলেজে যাওয়া বন্ধ করে ঘরে বসে থাকতে হবে? দেশে কি মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষের এতই অভাব যে একজন বখাটে ছাত্রীর ওপর চড়াও হলেও কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসে না? চেয়ারম্যান, মেম্বারদের কাছে বিচার দিয়েও কেউ বিচার পায় না। দেশটা কি বখাটেদের হাতে চলে গেল? চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্কুল ছাত্রী কণিকা ঘোষ, রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশা, মাদারীপুরের নিতু  মণ্ডলকে প্রাণ দিতে হয়েছে। সিলেটের কলেজ ছাত্রী খাদিজা বখাটের হামলার শিকার হয়েছিলেন। আর কত এমন ঘটনা ঘটবে? এই সমাজে কী আলো জ্বলবে না? সমাজের এই অসহিষ্ণুতা অনুদারতার ও অমানবিকতা-নিষ্ঠুরতার চিত্র পাল্টাতে হবে। চুপ না থেকে সাহসের সঙ্গে প্রতিবাদ করতে হবে। মোদ্দা কথা এরকম সমাজ ব্যবস্থা বদলানো এখন জরুরি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ অক্টোবর ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়