ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

দেশপ্রেমিক রাজনীতিক ছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ২ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দেশপ্রেমিক রাজনীতিক ছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত

শাহ মতিন টিপু : একাত্তরে আমরা যেসব কৃতি পুরুষদের হারিয়েছি তাদেরই একজন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। এই মহান ভাষাসংগ্রামী, আইনজীবী ও সমাজকর্মীর ১৩১ তম জন্মবার্ষিকী আজ।

১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ রাতের অন্ধকারে চিরদিনের জন্য নিখোঁজ হয়েছিলেন এই দেশপ্রেমিক রাজনীতিক। তার সঙ্গে পুত্র  দিলীপকুমার দত্তকেও ধরে নিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। পরে জানা যায়, তাদেরকে ময়নামতি সেনানিবাসে নিয়ে হত্যা করা হয়।

ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন বর্ণাঢ্য ও বৈচিত্রময় জীবনের অধিকারী। ১৮৮৬ সালের ২ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রামরাইল গ্রামে জন্ম তার। বাবা জগবন্ধু দত্ত ছিলেন কসবা ও নবীনগর মুন্সেফ আদালতের সেরেস্তাদার।

তার পুরো জীবনটাই ছিল সাধনাময়। অনেক পরিশ্রমে নিষ্ঠতার সঙ্গে ধাপে ধাপে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিতে পরিনত হয়েছিলেন।

পড়াশোনার অধ্যায় শেষ করেই তিনি বছরকাল কুমিল্লার মুরাদনগর বাঙ্গুরা উমালোচন হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ১৯০৭ সালে ত্রিপুরা হিতসাধনী সভার সেক্রেটারি নির্বাচিত হন ।  ১৯১১ সালে তিনি কুমিল্লা জেলা বারে যোগদান করেন। ১৯১৯ সালে ময়মনসিংহ শহরে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের সম্মেলনে তিনি অংশগ্রহণ করেন।  তিনি মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ অনুসরণে মুক্তি সংঘ নামে একটি সমাজকল্যাণমূলক সংস্থা গঠন করেন। কুমিল্লার অভয় আশ্রম-এর কর্মকান্ডের সাথেও তিনি জড়িত ছিলেন এবং ১৯৩৬ সালে ত্রিপুরা (বর্তমানে কুমিল্লা) জেলা বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন। চিত্তরঞ্জন দাশ এর আহবানে তিনি অসহযোগ আন্দোলনে  অংশ নেন। আবার  ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দেন। ব্রিটিশ বিরোধী কার্যকলাপের জন্য তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হয়ে বিভিন্ন কারাগারে কখনো বিনাশ্রম আবার কখনো সশ্রম দন্ড ভোগ করেন।

১৯৪৬ সালের নির্বাচনে তিনি কংগ্রেস দলের পক্ষে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন। পাকিস্তানের সংবিধান রচনার জন্য ঐ বছর ডিসেম্বরে পূর্ববঙ্গ হতে তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালের পর একজন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিক হিসেবে পাকিস্তানের রাজনীতিতে সক্রিয় হন।

পাকিস্তানে ভাষা আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূত্রপাত ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকেই । করাচীতে পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম  অধিবেশনের শুরুতে আলোচনার সূত্রপাত করে পূর্ব বাংলার কংগ্রেস দলীয় সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বলেনঃ Mr. President, Sir, I move: “That in sub-rule (1) of rule 29, after the word ‘English’ in line 2, the words ‘or Bengalee’ be inserted.”

১৯৪৮ সালের ২৫ আগস্ট পাকিস্তান গণপরিষদে তিনি অধিবেশনের সকল কার্যবিবরণী ইংরেজি ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলাও অন্তর্ভুক্ত রাখার দাবি করেন।  ১৯৫৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর পর্যন্ত আতাউর রহমান খান-এর মন্ত্রিসভায় তিনি পূর্ব পাকিস্তানের স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় তিনি গৃহবন্দি হন। ফলে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হন। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ রাতে পুত্রসহ তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।

কুমিল্লা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ তার স্মরণে কুমিল্লা শহরে তার বাসভবনের সামনের রাস্তাটির নামকরণ করা হয়েছে ’ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সড়ক’। এ ছাড়া ২০১৭ সালে ১৮ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে তার নামে একটি ই-লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ নভেম্বর ২০১৭/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়