ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পথশিশুদের জন্য শুভর স্কুল

সাগর হোসেন সবুজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ৬ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পথশিশুদের জন্য শুভর স্কুল

সাগর হোসেন সবুজ : শুভ চন্দ্র দাস। ২৫ বছরের যুবক। রোদে পোড়া ত্বক। চোখে তার নতুন দিনের স্বপ্ন। নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনের প্লাটফর্মের এক কোণে শিশুদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন একটি ভ্রাম্যমাণ স্কুল। যেখানে তিনি নিজেই হেডমাস্টার, নিজেই দপ্তরি, নিজেই পিয়ন, আবার নিজেই শিক্ষক। স্কুলের নাম ‘লাল সবুজের পতাকা’।

৪-১১ বছরের প্রায় ৬০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনাপয়সায় নিয়মিত পাঠ দেওয়া হয় এখানে। শুধু পাঠদানই নয়, এসব শিশুদের তাদের বাবা মায়ের অনুপস্থিতিতে দেখাশোনাও করেন শুভ। বাচ্চাদের সঙ্গে খেলাধুলা করে বাবা মার কথা ভুলিয়ে রাখে।

পড়াশোনা করে ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন ছিল শুভর। কিন্তু অর্থ আর অভাবের তাড়নায় অষ্টম শ্রেণিতেই ঝড়ে পড়তে হয় স্কুলের মেধাবী ছাত্র শুভকে। পরে জীবিকার তাগিদে পোশাক শ্রমিকের কাজ নেয় শুভ। বস্তিতেই ছোট্ট একটি ঘরে মা বাবা পরিবার নিয়ে বসবাস করে সে। এ সময় বস্তির ছেলেমেয়েদের অশিক্ষা কুশিক্ষা দেখে সিদ্ধান্ত নেয় তাদেরকে অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার। কিন্তু গার্মেন্টসে কাজ করে তা সম্ভব নয় বলে চাকরি ছেড়ে শিশুদের পড়ানোর দায়িত্ব নেয়। একটি চায়ের দোকান দিয়ে নিজের পরিবারের খরচ ও পথশিশুদের বইখাতা কেনার খরচ জোগায়।

এ প্রসঙ্গে রাইজিংবিডিকে শুভ চন্দ্র বলেন, ‘আমিও একটা সময় টাকার অভাবে পড়াশোনা করতে পারি নাই। কিন্তু আমার স্বপ্ন ছিল যারা টাকার অভাবে পড়তে পারে না তাদেরকে আমি সাহায্য করব পড়াশোনা চালিয়ে যেতে। এখানে বেশিরভাগ শিশুদের বাবা-মা রিকশাচালক অথবা গার্মেন্টস শ্রমিক। বাবা মার কাজের সময় এদের দেখাশোনা করারও তেমন কোনো লোক নেই। আমি এসব শিশুদের বেশিরভাগ সময় ময়লা আবর্জনা নিয়ে ঘাটিঘাটি করতে দেখে সিদ্ধান্ত নেই যে এদেরকে অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার। তাই বস্তির পাশের প্লাটফর্মকেই বেছে নিয়েছি উপযুক্ত জায়গা। আমার সামর্থ্য অনুযায়ী এসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বইখাতা ও পড়াশোনার ব্যবস্থা করি। এখানে প্রায় ৬০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে।’



পড়াশোনার সময় বাচ্চাদের মনোযোগ বাড়ানোর জন্য হালকা নাস্তারও ব্যবস্তা করেন শুভ। সাত বছরের এক পথশিশুর মা আসমা বেগম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমরা যখন কাজে যাই তখন বাচ্চা দেখভাল করারও কেউ থাকে না। আর আশেপাশে যে স্কুলগুলো আছে তাতে পড়ানোর মতো সামর্থ্য আমাদের নেই। তাই আমার বাচ্চা শুভ চন্দ্রের স্কুলে পড়াই। এতে আমিও নিশ্চিন্ত থাকি আমারও বাচ্চাও নিরাপদে থেকে কিছু শিখছে।’

এলাকার স্থানীয় কয়েকজন জানান, নিঃসন্দেহে এটি একটা মহৎ কাজ। এতে আমরা যতটুকু পারি সাহায্য করে স্কুলটিকে টিকিয়ে রাখবো।

শুভ চন্দ্রের স্কুলে শুধু পড়াশোনাই শেখানো হয় না। পাশাপাশি জাতীয় সংগীত, শপথ পাঠ এবং কবিতা আবৃতিও শেখানো হয়। বাচ্চারা এতে দেশপ্রেম, সততা ও সাধারণ জ্ঞান অর্জন করতে পারে।

স্কুলের শিক্ষার্থী আব্দুল হালিম (১১) জানায়, সে আগে মাদ্রাসায় পড়তো, বেতন বকেয়া হওয়ায় আর সেখানে যাওয়া হয়নি। তাই এখন সে এই স্কুলেই পড়ে। এরকম আরো অনেক পথশিশু এখানে পড়ে মানুষ হওয়ার স্বপ্ন দেখে।

সামর্থ্যবান মানুষের সহায়তা পেলে এই স্কুলটিকে আরো বড় ও সুশৃঙ্খল করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন শুভ।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ নভেম্বর ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়