ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

জবি ক্যাম্পাসের সিধু মামা

শোভন আশরাফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০৭, ১৭ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জবি ক্যাম্পাসের সিধু মামা

আবু বকর সিদ্দিক ওরফে সিধু মামা

শোভন আশরাফ : বয়সের কথা জিজ্ঞেস করতেই বললেন, ৬০ এর বেশি। মুখভর্তি পাকা দাড়ির এই মানুষটির আসল নাম আবু বকর সিদ্দিক। সবাই তাকে সিধু মামা বা কাকা নামেই চেনে। এই নামে ডাকলে তিনি সায়ও দেন। হাসিমাখা মুখে জিজ্ঞেস করেন, কয় কাপ চা দিমু?

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত চত্বর, বিবিএ অনুষদের নিচতলাতেই সারাদিন তার বিচরণ।

সকালবেলা লাল বাসগুলো যখন ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থী নিয়ে ক্যাম্পাসে আসে ঠিক তখন বাধ্য ছেলের মতো রুটিন করে তিনিও ফ্লাক্স ভর্তি চা আর বিস্কুট নিয়ে হাজির হন।

এরশাদ আমল থেকেই তিনি জবি ক্যাম্পাসে চা বিক্রি করছেন। শুরুটা জিজ্ঞেস করতেই একটু থামলেন, তারপর বলতে শুরু করলেন, তিনি আগে কাঁচা সবজির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সদরঘাট এলাকায়। ঘটনাচক্রে তখনকার সময়ের একজন শিক্ষকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। আর সে শিক্ষকই তাকে প্রথম চায়ের ফ্লাক্স কিনে দেন।

ছোটখাটো গড়নের এই মানুষটির দেশের বাড়ি কিশোরগঞ্জ। এই বয়সেও এতদূর ঢাকায় থাকার কারণ জিজ্ঞেস করতেই অতি সাধারণ ভঙ্গিতেই তিনি জানালেন, বাড়িতে কেউ নেই। তার স্ত্রী বছর ছয়েক আগে পরলোকগমন করেছেন। আর একমাত্র মেয়েকে কিছু দিন আগে বিয়ে দিয়েছেন।

ক্যাম্পাস চলাকালীন সময় ব্যতীত তিনি চা বিক্রি করেন না। এমনকি জবি ক্যাম্পাসের বাইরে অন্য কোথাও না। ক্যাম্পাস যখন মাঝে মাঝে বন্ধ দেয় তখন সিধু মামাও অন্যসবার মতো নিজ এলাকায় চলে যান। দেখে আসেন সদ্য পাত্রস্থ হওয়া একমাত্র মেয়েকে।

দিনশেষে শিক্ষার্থীরা যখন নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যায়, সিধু মামাও তখন তার চায়ের ফ্লাক্স গুটিয়ে নেন। ফিরে যান পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলীর একটি তোশকের দোকানের পেছনে ছোট্ট একটি ঘরে। এই বিশাল শহরে এই ঘরটিই তার আবাসস্থল। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া শরীরটাকে একটু বিশ্রাম দেয়ার জায়গা।

প্রতিবছর হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ক্যাম্পাসে আগমন হয় আবার হাজার হাজার শিক্ষার্থী শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করে বিদায় জানান ক্যাম্পাসকে। কিন্তু সিধু মামা থেকেই যান!



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ নভেম্বর ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়