ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

শেষলগ্নে এসে শত্রুপক্ষ মেতে ওঠে জঘন্য খেলায়

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শেষলগ্নে এসে শত্রুপক্ষ মেতে ওঠে জঘন্য খেলায়

‘বিজয় ৭১’ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

শাহ মতিন টিপু : ১৩ ডিসেম্বর মুক্তিসেনাদের বিজয়ের পরিস্থিতি আরো অনুকূলে এসে যায়। অন্যদিকে পাকিস্তানিরা একেবারেই দিশেহারা হয়ে পড়েন ।

পাকিস্তানি সেনারা ঢাকার বাইরেতো তারা নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেনই, ঢাকায়ও তারা প্রবলভাবে আক্রান্ত। প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে মুক্তিযোদ্ধাদের জয়ের নিশ্চিত সম্ভাবনা। কেবল ঢাকা দখলের অপেক্ষায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

পরাজিত হওয়ার শেষলগ্নে এসে শত্রুপক্ষ মেতে ওঠে আরও জঘন্য খেলায়। পরাজয় ঠেকাতে না পেরে বাঙালী জাতিকে নেতৃত্ব ও মেধাশূন্য করতে তাদের রাজাকার-আলবদর দোসরদের নিয়ে ঘৃণ্য ও বর্বর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে থাকে। চালাতে থেকে শিক্ষক, সাংবাদিকসহ বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে নিষ্ঠুর ও নির্মম কায়দায় হত্যাযজ্ঞ।

এদিকে যুদ্ধ জয়ের  সম্ভাবনা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় মিত্রবাহিনীও যুদ্ধের কৌশল পরিবর্তন করে। তারা জানমালের ক্ষতি কম করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পনের দিকে নিয়ে যায়। ঢাকা দখলই তাদের একমাত্র লক্ষ্য।

বালীগঞ্জে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের স্টুডিওতে বসে বার্তা বিভাগীয় প্রধান কামাল লোহানী, আলী যাকের, আলমগীর কবির ঘনঘন সংবাদ বুলেটিন পরিবেশন করে চলেছেন। আজ থেকে রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রের অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে হয়ে গেছে। বাংলাদেশ দখলদার মুক্ত হতে চলেছে এই সংবাদে প্রতিটি বাঙালি উদ্বেলিত। শরণার্থী শিবিরগুলোতে স্বাধীন দেশে ফেরার প্রস্তুতি চলছে। স্বাধীন মানুষের মনে ঘরে ফেরার আনন্দ আর নতুন জীবনের প্রত্যাশা।

এদিনে চতুর্থ বেঙ্গল চট্টগ্রামের দিকে এগোনোর পথে নাজিরহাটে হানাদাররা বাধা দেয়। এখানে ব্যাপক যুদ্ধের পর পালিয়ে যায় হানাদাররা। এদিকে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী ঢাকার দিকে যতই অগ্রসর হচ্ছিল, পাকিস্তানি জেনারেলদের মনোবল ততই কমছিল।

এদিন উত্তর দিক থেকে জেনারেল নাগরার বাহিনী ও কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সন্ধ্যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হালকা প্রতিরোধ ব্যর্থ করে কালিয়াকৈর পর্যন্ত এসে পৌঁছান। একই দিনে বাংলাদেশের নিয়মিত বাহিনীর সর্বপ্রথম ইউনিট হিসেবে ২০-ইবি ঢাকার শীতলক্ষ্যার পূর্বপাড়ে মুরাপাড়ায় পৌঁছায়। পূর্ব দিকে ডেমরা ফেরির দিকে অগ্রসরমান ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানি প্রতিরোধের মুখে পড়ে। সমুদ্রপথে শত্রুদের পালানোর সুযোগ কমে যাওয়ায় ঢাকায় পাকিস্তানি হানাদারদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকে।

ঢাকা চূড়ান্ত লড়াইয়ের স্থল বলে চিহ্নিত হতে থাকায় সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও দ্রুত বাড়তে থাকে। ঢাকার আকাশ ভারতীয় বিমানবাহিনীর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে থাকায় তারা পাকিস্তানী সামরিক অবস্থানের ওপর তীব্র আক্রমণ চালাতে থাকে। ঢাকার সর্বত্র অগণিত মুক্তিযোদ্ধা ও জনতা ছিল সুযোগের অপেক্ষায়। পাকিস্তানি সেনানায়কদের মনোবল উঁচু রাখার সামান্যতম অবলম্বন কোথাও ছিল না। তাদের একমাত্র ভরসা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ। কিন্তু এ কাজেও ব্যর্থ যুক্তরাষ্ট্র তাদের সামরিক বৃহৎ নৌযান ২৪ ঘণ্টা নিশ্চল রাখার পর এ দিন সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগরের দিকে এগুতে শুরু করে।

ইসলামাবাদে বার বার সাহায্যের করুণ আবেদন জানাতে থাকে। ইসলামাবাদ থেকে সামরিক কর্তারা ঢাকায় অবস্থানরত ঘাতকদের এই বলে আশ্বস্ত করে, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে, আরও কয়েকটা দিন অপেক্ষা কর। ভারতীয় বাহিনীকে এমন মার দেওয়া হবে যে তারা নতজানু হয়ে ক্ষমা চাইবে ও যুদ্ধ থেমে যাবে। কিন্তু সবই ছিল ধোকা, পাকিস্তানি সেনাদের জন্য সেদিন আর আসেনি।

এ দিকে শান্তি কমিটি, ডা. মালিক মন্ত্রিসভা ও স্বাধীনতাবিরোধী দালালদের বেশির ভাগই অবস্থা বেগতিক দেখে গা-ঢাকা দেয়। কিন্তু এর মধ্যেও ঘাতক আলবদরচক্র সক্রিয় ছিল। দেশের সবচেয়ে কৃতী সন্তানদের পরিকল্পিত হত্যাকান্ডে যার নির্লজ্জ বহিঃপ্রকাশ ঘটে ।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ ডিসেম্বর ২০১৭/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়