ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

আমাদের চলচ্চিত্রে ভারতের প্রভাব বেশি: নিশো

আমিনুল ইসলাম শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩৩, ২২ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আমাদের চলচ্চিত্রে ভারতের প্রভাব বেশি: নিশো

অভিনেতা আফরান নিশো। অসংখ্য দর্শকপ্রিয় নাটক-টেলিফিল্ম উপহার দিয়েছেন। নিরীক্ষাধর্মী কাজ করতে বেশি আগ্রহী। এজন্য চরিত্রের প্রয়োজনে যেমন নিজেকে ভাঙতে দেখা যায়, তেমনি ভিন্নধর্মী চরিত্রে অভিনয় করতেও স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। সম্প্রতি তিনি অভিনয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন রাইজিংবিডির সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমিনুল ইসলাম শান্ত।

রাইজিংবিডি: বর্তমান ব্যস্ততা প্রসঙ্গে জানতে চাই।

আফরান নিশো: নাটক-টেলিফিল্মের কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি। সম্প্রতি সুমন আনোয়ার ভাইয়ের ‘ইডিয়ট’ নামে নতুন একটি ধারাবাহিকের কাজ করছি। নিরীক্ষাধর্মী কাজ। গল্পে আমি ডক্টরেট করা যুবক। যে জঙ্গলে বাস করে। তার প্রচুর গাছ প্রীতি রয়েছে। এখানে দর্শক আমাকে চিনতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে।

রাইজিংবিডি: যেকোনো চরিত্রে আপনাকে মিশে যেতে দেখা যায়। আসলে চরিত্র রূপায়নের বিষয়টি আপনি কীভাবে করেন?

আফরান নিশো: এক সময় এই বিষয়টি আমার কাছে কঠিন ব্যাপার ছিল। অভিনয় হচ্ছে অভিনয় না করার প্রবণতা। অভিনয় করার চেষ্টা করলে আসলে অভিনয় হবে না। আর গুণী নির্মাতা, সহশিল্পীদের সঙ্গে কাজটা এমনিতেই ভালো হয়। যে কারণে আমার কাছে তারা অনেক গুরত্বপূর্ণ। সবাই যে যার সেরা কাজটি করবে তাহলেই হলো। আর আমার অভিনয় ভালো লাগে- এটা দর্শকদের দয়া-মায়া বলতে পারেন। আমি চেষ্টা করি শুধু। প্রচুর পরিশ্রম করি, স্টাডি করি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই চেষ্টা করে যেতে চাই।

রাইজিংবিডি: টেলিভিশন নাটক নিয়ে আপনার ভাবনা জানতে চাই।   

আফরান নিশো: নাটকের জায়গাটি আমার ভালোলাগার জায়গা। কারণ গুণী অভিনেতাদের অনেকেই নাটকে কাজ করেন। এমন যদি হতো, দেশের বড় বড় অভিনয়শিল্পীদের সবাই ফিল্মে অভিনয় করছেন, তা হলে কিন্তু ফিল্মের প্রতি আমার একটা আলাদা আগ্রহ জাগত। কিন্তু বিষয়টি এখন হয়ে গেছে উল্টো। কারণ ভালো ভালো, দক্ষ অভিনয়শিল্পীরা প্রায় সবাই নাটকে কাজ করছেন। ওদিকে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির দুঃসময় চলছে। যদিও এখন তৌকির আহমেদ, দীপঙ্কর দীপন ছোট ও বড় পর্দার অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে সিনেমায় কাজ করছেন। এই মিশ্রণটা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য ইতিবাচক।

রাইজিংবিডি: দর্শক আপনাকে বড় পর্দায় কবে নাগাদ দেখতে পাবেন?

আফরান নিশো: বড় পর্দায় অভিনয়ের জন্য এ পর্যন্ত অনেক প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু ফিরিয়ে দিয়েছি। আগামী বছর দর্শক আমাকে বড় পর্দায় দেখতে পাবেন। আর অপেক্ষা করতে চাই না। দেখি প্রস্তুতি নিয়ে কাজ শুরু করব। যদিও বয়স বেড়ে যাচ্ছে। বযস বেড়ে গেলে মানুষের এনার্জি লেভেল কমে যায়। তবু আমি আশাবাদী।

রাইজিংবিডি: তবে কি কোনো সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন?

আফরান নিশো: না, এখনো চুক্তিবদ্ধ হইনি। আসলে কারো সঙ্গে আমার যাচ্ছে না। যেসব প্রস্তাব আসে, তাতে দেখা যায়- চরিত্র পছন্দ হয় কিন্তু টিম পছন্দ হয় না। আবার রেমুনারেশন মেলে তো চরিত্র পছন্দ হয় না- এরকম হচ্ছে। আর আমার চিন্তা হচ্ছে, সিনেমা করলে আর টেলিভিশন নাটক করতে চাই না। বড় পর্দায় পা রাখলে আর ছোট পর্দায় ঘুরে তাকানোর ইচ্ছে নেই। মানে দুটো কাজ একসঙ্গে করতে চাই না। আসলে সেই জায়গা থেকে বারবার দোটানায় পড়ে যাই। কারণ ধারাবাহিকভাবে আমাদের দেশে ভালো সিনেমা নির্মিত হচ্ছে না। হয়তো ছয় মাসে একটি ভালো সিনেমা আমরা পাই। এভাবে চললে তো পেটও বাঁচবে না শিল্পও বেঁচে থাকবে না।

রাইজিংবিডি: এই সময় শুধু চলচ্চিত্র বেছে নিলে আপনার ক্যারিয়ারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে না?

আফরান নিশো: পেশাগত জায়গা থেকে এটা ঠিক বলেছেন। আমি চলচ্চিত্রে যাওয়ার পর আবার যদি ৬-৭ মাসের ব্যবধানে টেলিভিশনে ফিরি তখন কিন্তু আমার আগের জায়গাটা খালি থাকবে না। কারণ কোনো ফাঁকা জায়গাই খালি থাকে না, পূর্ণ হয়ে যায়। অনেকে বলেছেন, একটি সিনেমা করে দেখেন কিন্তু এই দর্শনে আমি বিশ্বাসী না। আসলে সিনেমায় গিয়ে যদি একটি জায়গা তৈরি করা যায় তবে সেটাই ভালো। পরিকল্পনা করছি, চলছে- দেখা যাক কি হয়।

রাইজিংবিডি: চলচ্চিত্র নিয়ে কেমন পরিকল্পনা করেছেন?

আফরান নিশো: সিনেমা নিয়ে আমার একটা পরিকল্পনা আছে। আমি সিনেমায় পা রাখলে সিনেমার ডিজাইনটা বদলে দিতে চাই। আমাদের সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে গিয়ে এখন সিনেমা নির্মিত হচ্ছে। যেসব সিনেমায় আমাদের দেশের কথা নাই, আমাদের সংস্কৃতি নাই, যেখানে আমাদের ধর্ম নাই। আমি অন্য দেশের সংস্কৃতি নিয়ে নাচানাচি করতে চাই না। আমি আমাদের গল্প নিয়ে কাজ করতে চাই। আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা প্রেম করার সময় তো নাচে না। প্রেম করলেই কি আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা এভাবে নাচে? অথচ আমাদের চলচ্চিত্রে এটা দেখানো হয়। এভাবে কমার্শিয়াল বিষয়গুলো আমাদের সিনেমার একটি ফরম্যাটে ফেলে দেয়া হয়েছে। আমাদের চলচ্চিত্রে ভারতের প্রভাব অনেক বেশি। কলকাতায় অনেক গল্পনির্ভর সিনেমা হয়। আমাদের এখানকার সিনেমায় সুপার ন্যাচারাল কোনো গল্প নাই, ফেলুদার মতো কোনো চরিত্র নাই, কোনো থ্রিলের গল্প নেই। অথচ এসব গল্প কিন্তু আমাদের সামাজে আছে। এসব খুঁজে বের করতে হবে।

কিছুদিন আগে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে। এটাতে কিন্তু অনেক বেশি কাহিনি আছে তা নয়। তবে ঘটনার পর ঘটনা আছে। এই যে ধারাবাহিকতা যা দর্শককে চিন্তায় ফেলে দেয় এবং পর্দার সামনে বসিয়ে রাখে। ‘আয়নাবাজি’ আরেকটি ভিন্ন প্লট। এরকম আরকি। আমার মনে হয়, আমাদের এখানে সপ্তাহে চারটি সিনেমা মুক্তি পাওয়া উচিৎ। সপ্তাহে বিনোদনের জন্য আমরা সিনেমাকেই বেছে নেব। হলে যাব, সিনেমা দেখব। এই ফিডব্যাকগুলো দিতে হবে, না হলে সিনেমা কীভাবে বেঁচে থাকবে?

রাইজিংবিডি: প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা তো কমে যাচ্ছে…

আফরান নিশো: হ্যাঁ, প্রেক্ষাগৃহ কমে যাচ্ছে। এজন্য হল সংখ্যা বাড়াতে হবে। এখন ২৫-৩০টি সিনেপ্লেক্স প্রয়োজন। আবার টিকিটের মূল্যও হাতের নাগালের মধ্যে রাখতে হবে। কারণ প্রেক্ষাগৃহে ছারপোকার কামড় খেয়ে নিশ্চয় আমার মা সিনেমা দেখবেন না! এছাড়া পরিচালকের সংখ্যা বৃদ্ধি, সিনেমার সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এক এফডিসিকেন্দ্রিক সিনেমা চলছে- তা ছাড়া সরকারও বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন না। যারা সিনেমা নির্মাণ করছেন তারা আত্মপ্রচেষ্টায় করছেন। অনেকে নিজেদের আখের গোছানোর চেষ্টা করছেন। বিষয়টি এমন হলে চলবে না- বরং সম্মিলিতভাবে সবার চিন্তা করে কাজ করতে হবে। আমার টাকা আছে আমি সিনেমা বানাব তাহলে চলবে না। বরং আমার টাকা আছে আমি যোগ্য ব্যক্তিকে দিয়ে সিনেমা বানাব। দুঃখজন হলেও আমাদের ইউনিটি অনেক কম। সবার আমি আমি চিন্তাটা বাদ দেয়া প্রয়োজন। এটা শুধু বড় পর্দা বলে কথা নয়, ছোট পর্দার জন্যও প্রযোজ্য।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ ডিসেম্বর ২০১৭/শান্ত/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়