ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

তৈজসপত্রের ব্যবসা করে শ্রমিক থেকে লাখপতি

সাজিদ সুমন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৯, ৯ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তৈজসপত্রের ব্যবসা করে শ্রমিক থেকে লাখপতি

সাজিদ সুমন: রাজধানীর রায়ের বাজারে ‘আধুনিক মৃৎশিল্প বিতান’র স্বত্ত্বাধিকারী মনির হোসেন। ১৫ বছর ধরে তিনি মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত। এক সময় শ্রমিকের কাজ করলেও ২০১৩ সালে ১ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেন মাটির তৈজসপত্রের নিজস্ব ব্যবসা।

মনির হোসেন বলেন, ‘শ্রমিকের কাজ করে খরচ বাদে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা থাকত। মাল নামাতাম, ডেলিভারি দিতাম, ভ্যান চালাতাম। মহাজন মাঝে মাঝে খারাপ ব্যবহার করত। একদিন মনে খুব ব্যথা পাই, চিন্তা করি নিজেই ব্যবসা করবো। নিজের পুঁজি ৫০ হাজার টাকা, বউয়ের গয়না বিক্রির ৩০ হাজার টাকা এবং আরো ২০ হাজার টাকা সুদে নিয়ে রায়েরবাজারে দোকান নেই। শুরু করি মৃৎশিল্পের ব্যবসা।’

৪ বছরে মাটির তৈজসপত্রের ব্যবসায় লাভ করে ২টা পপকর্নের ভ্যান কিনেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মনির। ঋণ পরিশোধ করে বছরে আয় করছেন প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা এবং ছোট ছেলে ইয়াসিনকে পড়ালেখা করাচ্ছেন। বড় ছেলে শরীফ পপকর্নের গাড়ির ব্যবসা দেখাশোনা করে।  

দুই সন্তানের জনক মনির বলেন, ‘দোকানে প্রতিদিন প্রায় চার হাজার টাকা বিক্রি হলে সব খরচ বাদে এক হাজার টাকা লাভ থাকে। ব্যবসা ভালো হলে মাসে প্রায় ৪০ হাজার টাকা লাভ হয়। মৃৎশিল্পের ব্যবসা করে আমার উন্নতি হয়েছে।’

আধুনিক মৃৎশিল্প বিতান ঘুরে দেখা যায়, মাটির তৈরি বিভিন্ন রকমের তৈজসপত্র। হাড়িপাতিল, কলসি, ফুলের টব, শোপিস, ফুলদানি, মাটির ব্যাংক, দইয়ের হাড়ি, হালিমের বাটি, পেয়ালা, জালা, মটকা, টালি, ঢাকনা, প্রদীপ, ছাঁচ, পুতুল, গহনা, খেলনা, প্রতিকৃতিসহ বিভিন্ন মাটির পণ্য সাড়ি সাড়ি করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বাঁশের বেত দিয়ে তৈরি ছোট ছোট খোপের মধ্যে। মাটির এসব পণ্যের মান, আকার-আকৃতির ওপর বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে খুচরা এবং পাইকারি।

শুধু মনির হোসেন নয়, রাজধানীসহ দেশের হাজারো মানুষের জীবন জড়িয়ে আছে কুমারের দক্ষ হাতে গড়া পণ্য উৎপাদন, বহন এবং বাজারজাতকরণের কাজে। দেলু মিয়া রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ভ্যানে করে মাটির তৈজসপত্র পোঁছে দেন। তিনি শুধু বহনের কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘রায়েরবাজার ছাতা মসজিদ থেকে কাওরান বাজারে পাতিল নিয়ে যাচ্ছি ৪০০ টাকা ভাড়ায়। কোনোদিন ১ খেপ দেই, আবার কোনো কোনো দিন ২-৩ খেপ হয়।’

শিল্পীর সৃজনশীলতা দিয়ে গড়া মাটির এসব শিল্প পাওয়া যায় রাজধানীর শাহবাগ, দোয়েল চত্বর, ধানমণ্ডি, কলাবাগান, মোহাম্মাদপুর, মিরপুর, নয়াবাজার, বকশীবাজার, সদরঘাট, নিউমার্কেট, উত্তরাসহ বিভিন্ন স্থানে খুচরা ও পাইকারি দামে। কুমারের নিখুঁত হাতে পূর্ণ রূপ পাওয়ার পরে এসব মৃৎপাত্র হাত বদল হয়ে রাজধানীতে আসে ফরিদপুর, মাদারিপুর, গোপালগঞ্জ, কুমিল্লা, সাভার ও ধামরাই, রাজশাহী, পাবনা, নাটোর, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে।
 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ জানুয়ারি ২০১৮/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়