ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

টবে গোলাপ চাষ

চাপা বিনতে কনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৭, ১৩ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
টবে গোলাপ চাষ

চাপা বিনতে কনা : সৌন্দর্য ও লাবণ্যের প্রতীক গোলাপ। এটি শীতকালীন মৌসুমী ফুল। তবে বর্তমানে গোলাপ সারা বছর ধরেই চাষ হচ্ছে। বর্ণ, গন্ধ, কমণীয়তা ও সৌন্দর্যের বিচারে গোলাপকে ‘ফুলের রানী’ বলা হয়। পুষ্পপ্রেমীদের সবচেয়ে প্রিয় ফুল গোলাপ। বিভিন্ন জলবায়ুতে খুব সহজেই মানিয়ে নিতে পারে বলে পৃথিবীর সব দেশেই কম-বেশি গোলাপের চাষ হয়। গোলাপ সাধারণত কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে বহুলভাবে ব্যবহৃত ফুল। এছাড়াও সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, বাগান, লন, কেয়ারী, বারান্দা সাজাতে গোলাপের জুড়ি নেই। আতর ও সুগন্ধি শিল্পেও গোলাপের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। পৃথিবীতে অনেক জাতের গোলাপ আছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে চাষ হয় এমন কতকগুলো জাত হলো মিরান্ডি, পাপা মেলান্ড, ডাবল ডিলাইট, তাজমহল, প্যারাডাইস, ব্লু-মুন, মন্টেজুমা, টাটা সেন্টার, সিটি অব বেলফাস্ট ইত্যাদি

গোলাপ রোপণের সময় : গোলাপ শীত ও নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলের ফুল। অধিক উষ্ণ ও আর্দ্রতায় গোলাপ ভালো হয় না। ২২-৩০ ডিগ্রী সে. তাপমাত্রা, ৮৫ শতাংশ আপেক্ষিক আর্দ্রতা এবং ১০০-১২৫ সেমি গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত গোলাপ চাষের জন্য উপযোগী। গোলাপ চাষের জন্য ঊর্বর দোঁ-আশ মাটি উত্তম। ফুলের গুণগতমান সূর্যালোকের উপস্থিতির ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। এক্ষেত্রে বিকাল অপেক্ষা সকালের রোদ বেশি কার্যকর। বাংলাদেশে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত গোলাপের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।

যেভাবে চারা হয় : গোলাপ সাধারণত বীজ, কাটিং, গুটি কলম এবং চোখ কলমের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করে। বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার শুধুমাত্র প্রজনন বা ফসল উন্নয়ন কর্মসূচীতে ব্যবহৃত হয়। নতুন গাছ উৎপন্নের প্রধান পদ্ধতি বাডিং বা চোখ কলম। এই পদ্ধতিতে যে জাতের বংশবৃদ্ধি করা হয় তার চোখ অপর একটি সুবিধামত আদিজোড়ের উপর স্থাপন করা হয়। আদিজোড় গাছের সজীবতা, উৎপাদনশীলতা, ফুলের গুণাবলী, ঝোপের স্থায়ীত্ব, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং মাটি ও আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আদিজোড়ের কাটিং সমূহ (পেন্সিল আকৃতি) গ্রীষ্মের শেষে তৈরি করা হয়ে থাকে এবং নার্সারীতে সারি করে ২৫ -৩০ সেমি দুরত্বে রোপণ করা হয়। প্রায় ৬ মাস পর এই কাটিংগুলো বাডিংয়ের জন্য উপযুক্ত আকৃতির কাণ্ড তৈরি করে।

যেভাবে মাটি তৈরি করবেন : এঁটেল মাটি গোলাপ চাষের জন্য ভালো না। টবের জন্য সার মাটি এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে মাটি বেশ ফাঁপা থাকে, পানি না জমে। ১ ভাগ দো-আঁশ মাটি, ৩ ভাগ গোবর সার বা কম্পোষ্ট, ১ ভাগ পাতা পচা সার, আধ ভাগ বালি (নদীর সাদা বালি হলে ভালো) দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে তাতে এক মুঠো সরিষার খৈল ও এক চামচ চুন মিশিয়ে ১টি ৮ ইঞ্চি টবে একমাস রেখে দিতে হবে। এই একমাস টবে পানি দিয়ে মাটি উল্টে পাল্টে দিতে হয়। এতে মাটির মিশ্রণ ভালো হবে। মাটির মিশ্রণে ব্যবহৃত চা পাতা ব্যবহার করেও ভালো ফল পাওয়া যায়। টবে নিচের কয়েক সেমি পরিমাণ অংশে ইট বা মাটির হাড়ি পাতিলের ভাংগা টুকরা এমনভাবে বিছিয়ে দিতে হয় যাতে টবের মাটি এগুলোর উপর থাকে। এতে বাড়তি পানি নিষ্কাশনে সুবিধা হবে।

 



চারা সংগ্রহ : চারা সংগ্রহের সময় এর গোড়ার মাটির গোল্লাটি অবিকল আছে কিনা তা ভালো করে দেখে নিতে হবে। মাটির গোল্লাসহ চারার গোড়ার শিকড় বেরিয়ে থাকা অবস্থার চারা গাছ না নেওয়াই ভালো। বিশ্বস্ত এবং পরিচিত নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করা উচিত। চারা সংগ্রহের ব্যাপারে অভিজ্ঞ লোকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।

টবে যেভাবে পরিচর্যা করবেন : খোলামেলা আলো বাতাসপূর্ণ এমন স্থানে টব রাখতে হবে যাতে সকালের সূর্য কিরণ পায় এবং অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা পায়। বিকেলের রোদ না লাগানোই ভালো, কেননা এতে ফুলের রং ফ্যাকাসে হয়ে যায়। গোলাপ গাছে যাতে চারিদিক হতে আলো পড়ে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। তা না হলে গাছটি কেবল আলোর দিক দিয়েই বাড়বে। এজন্য টবসহ গাছটি মাঝে মাঝে ঘুরিয়ে দিতে হবে। গ্রীষ্মের প্রখর রোদ থেকে টবের গোলাপ গাছ রক্ষা করার জন্য পর্যায়ক্রমে রোদ ও ছায়ায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে টব রাখলে গাছ ভালো থাকবে। ফুলও বেশি দিন ধরে পাওয়া যাবে। টবের আকার নির্ভর করে যে গোলাপের চাষ করা হবে তার জাতের উপর। ছোট জাতের জন্য ৮ ইঞ্চি) টব ভালো। বড় জাতের জন্য ১২ ইঞ্চি বা আরো বড় টব ব্যবহার করতে হয়। বছরের যে কোন সময় টবে গোলাপের চারা বসানো যায়। তবে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস চারা বসানোর উত্তম সময়। এসময় চারা লাগালে বেশি দিন ধরে ফুল পাওয়া যায়, গাছের পরিচর্যা করতে সুবিধা হয, রোগ পোকার আক্রমণও কম থাকে।

টবে কীভাবে চারা বসাবেন : চারাগাছ বা কলমচারা মাটির গোল্লাসহ পলিথিন ব্যাগে অথবা ছোট মাটির টবে কিনতে পাওয়া যায়। চারাটি যদি টবের হয়, তাহলে টব থেকে মাটিসহ চারাটি এমনভাবে নিতে হবে যাতে ভেঙে না যায় বা শিকড়ের কোনো ক্ষতি না হয়। ভেজা মাটির গোল্লাসহ চারা সংগ্রহ করলে তা শুকিয়ে নিতে হয়। চারা বসাবার আগেই গাছের অপ্রয়োজনীয় পুরোনো বা মরা ডাল হালকা ছেঁটে দিতে হবে। এরপর চারাটি টবের মাঝখানে সোজা করে বসিয়ে টবের ওপরে কিছু কম্পোষ্ট সার দিয়ে গাছের গোড়ার মাটি হালকা চাপ দিয়ে বসিয়ে দিতে হবে। চারা এমনভাবে বসাতে হবে যাতে কুঁড়ি বের হবার গিট বা পর্বটি মাটির ওপরেই থাকে।

সেচ : টবে বসানোর পর অন্তত ২-৩ বার পানি দিতে হবে। চারা অবস্থায় গাছ যাতে প্রখর রোদ বা বৃষ্টির ঝাপটা থেকে রক্ষা পায় সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। প্রথম অবস্থায় ৩-৪ ঘণ্টা এবং ধীরে ধীরে বাড়াতে বাড়াতে ৭-৮ ঘণ্টা রোদ পাওয়ার ব্যবস্থা করলে গোলাপ ভালো হবে। পানি সেচের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে গাছের গোড়ায় পানি না জমে। কঁচি পাতা ও কুঁড়ি ছাড়ার সময় একটু বেশি পানি দরকার। এ সময় সকালসন্ধ্যা সেচ দেয়া উচিত। ঝাঁঝরি দিয়ে ডাল-পালাসহ সমস্ত গাছ পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে।

 



সার প্রয়োগ : টব বসাবার পর গাছ ধরে গেলে একমাস পর থেকে ১৫ দিন বা এক মাস পর পর সার দিতে হয়। শীতের ঠিক পরেই অর্থাৎ মার্চের শেষে বা এপ্রিলের প্রথম দিকে টবের উপরের ৮-১০ সেমি মাটির স্তর তুলে দিয়ে খালি জায়গায় পচা গোবর সার ও নতুন ফাঁপা মাটি দিয়ে ভরে দিতে হয়। এর পর খড় বা পাতা দিয়ে ঢেকে গ্রীষ্মের প্রখর রোদ থেকে গাছের শিকড়কে রক্ষা করতে হয়। শীতকালে গাছ ছাটার পর, প্রতি টবে ৩ মুঠা গুঁড়া গোবর সার ও ১ মুঠা স্টিমড্ হাড়ের গুঁড়া বা স্টেরামিল প্রয়োগ করিতে হইবে। এরপর পুরো শীতকাল ধরে ১ মাস অন্তর অন্তর ১ মুঠা করে স্টিমড্ বোন মিল বা স্টেরামিল প্রয়োগ করতে হবে।

গোলাপের ভালো ফুল উৎপাদনের জন্য পাতার সার ও ফলিয়ার স্প্রের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কয়েকটি রাসায়নিক সার মিশিয়ে এই সার প্রস্তুত করতে হয়। শীতকালে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের সকাল ৮টার মধ্যে ফলিয়ার স্প্রে করতে হয়। দুই প্রকারের পাতা সার গাছে ব্যবহার করা হয়, ১টি গাছের স্বাস্থ্য ও ফুল ভাল করার জন্য অপরটি ট্রেস এলিমেন্টের জোগান দেয়ার জন্য, যেমন- ইউরিয়া, ডাই-অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ডাই-পটাশিয়াম ফসফেট প্রতিটি ১০ গ্রাম করে ১০ লিটার পানিতে গুলে স্প্রে দ্রবণ তৈরি করতে হবে। ট্রেস এলিমেন্টের জন্য ম্যাগনেশিয়াম সালফেট ২০ গ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ সালফেট ১৫ গ্রাম, ফেরাস সালফেট ১০ গ্রাম, বোরাক্স ৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে প্রতি লিটার পানিতে উল্লেখিত মিশ্রণটির ২ গ্রাম করে গুলিয়ে স্প্রে করতে হবে। দুইটি পাতা সারের সাথেই কীটনাশক বা বালাইনাশক মিশিয়ে স্প্রে করা যায় কিন্তু দুটি সার এক সাথে মিশিয়ে স্প্রে করা যাবে না। পাতার সার টবের গোলাপের জন্য অপরিহার্য এবং জমির গোলাপের জন্য উপকারী। স্প্রে করার সময় যেন পাতার দুই দিকেই ভালোভাবে লাগে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। টবের গাছে সারা বছরই তরল সার প্রয়োগ করতে হবে। সঠিক মাত্রা বা প্রয়োগ বিধি না জেনে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করাই ভালো। কেননা, মাত্রায় বা ব্যবহারবিধিতে একটু ব্যতিক্রম হলে গাছের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। রাসায়নিক তরল সারের পরিবর্তে গোবর ও সরিষার খৈল ৪-৫ দিন পানিতে পচিয়ে তরল করে সপ্তাহে দুদিন করে ব্যবহার করা যায়। গাছের নতুন ডাল-পালা বাড়াতেও ফুলের আকার বড় করতে এ ধরনের তরল সার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তরল সারের অভাবে ছোট মাছপঁচা পানি গাছের গোড়ায় দেয়া যায়। দুর্বল গাছে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হিসারে ইউরিয়া মিশিয়ে সকাল বিকাল পাতায় স্প্রে করলে গাছ তাজা হয়। এছাড়া প্রতি লিটার পানিতে ১ চামচ গুঁড়ো চুন পরিষ্কার পানিতে ভালো করে গুলে পাতলা ন্যাকড়ায় ছেঁকে প্রতি ৩ মাস পর পর দিতে হয়। চুন-পানি দেবার ১৫ দিনের মধ্যে অন্য কোনো সার না দিয়ে শুধু পানি দিতে হয়।

কখন গাছ ছাটবেন : মৃত ও রোগে আক্রান্ত ডাল অপসারণের জন্য, গাছের উপযুক্ত আকৃতি প্রদানের জন্য, প্রতিটি ডালে ফুল আসবার জন্য এবং প্রয়োজনীয় রোদ পাবার জন্য নিয়মিত গাছ ছাটাইয়ের প্রয়োজন হয়। গোলাপ প্রচুর শাখা বিস্তারকারী গুল্ম জাতীয় গাছ। গাছের ফুল দেয়া শেষ হলেই গাছ ছেটে দিতে হবে। নিয়মিত গাছ ছাটাই করলে বেশি ও বড় আকারের ফুল পাওয়া যায়। বর্ষার পর অক্টোবর-নভেম্বর মাস ছাটাইয়ের জন্য ভালো সময়। সাধারণত ২০-২৫ সেমি বড় রেখে ডাল ছেটে দিতে হয়। ডাল এমনভাবে কাটতে হবে যাতে থেতলে বা ছিঁড়ে না যায়। এ জন্য ধারালো ছুরি ব্যবহার করতে হয়। সাদা, হলুদ, হালকা হলুদ ও দো-রঙা জাতের গোলাপ গাছ খুব হালকা ছাট আর লাল জাতের গোলাপ গাছে শক্ত ছাট দিতে হয়। গাছ ছাটাইয়ের পর ডাইব্যাক রোগের আক্রমণ হতে পারে। সুতরাং গাছ ছাটাইয়ের আগে ও পরে কীটনাশক ও ছত্রাক নাশক দুইই প্রয়োগ করা দরকার।

রোগ-পোকা দমন : শুঁয়ো পোকা বা অনিষ্টকারী অন্য যে কোন পোকা দেখা মাত্র ধরে মেরে ফেলা উচিত। লাল মাকড়সার আক্রমণ ও ডাইব্যাক রোগই মারাত্মক। সেচের সময় টবে জল জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করলে লোহার শিক দিয়ে টবের মাটি ছিদ্র করে পানি বের হবার পথ করে দিতে হবে। এ কাজটা একটু সাবধানে করা দরকার যাতে শিকড়ের ক্ষতি না হয়। পানি দেবার আগের দিন প্রতিবারই টবের ধারের কাছের মাটি বেশি করে এবং মাঝখানের মাটি কম করে খুঁচিয়ে দিতে হয়।

 



গ্রীষ্মকালীন পরিচর্যা : টব ছাদে বা পাকা স্থানে রাখলে পুরু খড় বিছিয়ে তার উপর ইট বা কাঠের টুকরা রেখে সেগুলোর ওপর টব রাখা উচিত । গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড তাপের সময় পানি না দিয়ে রাতের দিকে যখন তাপমাত্রা কমতে থাকে (রাত ৮ টার পর) ছাদের টবে তখন জল দেয়াই ভাল। এসময় পানির তাপমাত্রা আবহাওয়ার সঙ্গে মোটামুটি সামঞ্জস্য পূর্ণ থাকে। বর্ষাকালে টবের নিচের খড় কুটো, ইট এসব সরিয়ে টবগুলো কেবল ছাদ বা পাকা স্থানেই রাখতে হবে এবং ঝড় থেকে টব ও গাছকে রক্ষার প্রস্তুতি নিতে হবে। টবের মাটি মাঝখানের দিকে উচিয়ে কোণাকৃতি করে দিলে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করতে পারবে না। অতিরিক্ত মাটি বর্ষা শেষে সরিয়ে ফেলতে হয়।

প্রদর্শনী ফুলের জন্য করণীয় : প্রদর্শনীর জন্য বর্ষাকালে উন্নত জাতের গোলাপ গাছ নির্বাচন করে টবে রোপণ করতে হবে। নিয়মিত সেচ ও সার প্রয়োগের দ্বারা গাছটিকে এমন করে তুলতে হবে যেন গাছে প্রচুর ও সুন্দর পাতা জন্মায় এবং প্রস্ফুটিত ফুল বেশ বড় আকারের হয়। প্রদর্শনীর সময় থেকে অন্তত আড়াই মাস আগে গাছটিকে বিবেচনার সঙ্গে ছাটাই করা উচিত। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি গাছ ছাটাই করলে ফেব্রুয়ারি মাসে গাছে ফুল ফোটে। মাঝে মাঝে কঁচি ডালগুলো এমনভাবে ছেটে দিতে হবে যেন গাছটি বেশ ঝোপালো হয়। গাছের প্রতিটি শাখায় দু'টো কুঁড়ি রেখে বাকি কুঁড়িগুলো ছিড়ে ফেলে দিতে হবে। যাতে বড় ফুল ফোটে সেদিকে যত্ন রেখে পরিচর্যার কাজ করতে হয়। যদি নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কুঁড়ি জন্মায়, তাহলে কুঁড়িগুলো ছিঁড়ে ফেলতে হবে। ফুলের ঔজ্বল্য বড়াতে হলে ৪ লিটার পানিতে ২৫ গ্রাম আয়রন সালফেট গুলে ফুলে প্রয়োগ করতে হয়। প্রদর্শনী শুরু হবার অন্তত ১ সপ্তাহ পূর্বে ছায়াযুক্ত স্থানে টব রাখলে ভালো। এতে দুপুরের প্রখর রোদে ফুলের পাঁপড়ি নষ্ট হয় না। দুর্বল গোলাপ গাছে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হিসাবে ইউরিয়া মিশিয়ে সকাল বিকাল কয়েকদিন পাতায় স্প্রে করলে গাছ দ্রুত তাজা হয়।

কখন কীভাবে ফুল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করবেন : গোলাপ ফুল সাধারণত কুঁড়ির পর্যায়ে আসার পর কাটা উচিত। কাট ফ্লাওয়ার হিসাবে ফুল লম্বা পুষ্প দন্ড কয়েকটি পাতা সহ ধারালো ছুরি দিয়ে কাটতে হয়। ফুল কাটার কাজটি খুব সকালে অথবা শেষ বিকেলে করা উচিত। ফুলদানীর পানিতে ৩ শতাংশ গ্লুকোজ মিশ্রিত করে তামার ফুলদানির মধ্যে ডুবিয়ে ফুলদানির মুখে জড়িয়ে রেখে কাট ফ্লাওয়ার আয়ুস্কাল বৃদ্ধি করা সম্ভব। এভাবে যত্ন নিয়ে গোলাপ চাষ করলে একটি আদর্শ লম্বা কাণ্ডযুক্ত গোলাপ গাছের জাত প্রতি বছর প্রায় ১৫ থেকে ৩০ টি ফুল উৎপন্ন করে।

লেখিকা: উদ্ভিদবিদ, ছবি : কিসমত খোন্দকার



রাইজিংবিডি/ঢাকা/ ১৩ জানুয়ারি ২০১৮/হাসনাত/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়