ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আত্মসমর্পণ দেখতে চাই না

জাহাঙ্গীর আলম বকুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৪৫, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আত্মসমর্পণ দেখতে চাই না

জাহাঙ্গীর আলম বকুল: আমি ক্রিকেট বোদ্ধা নই, প্রেমী। বিশেষ করে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ আইসিসি চ্যাম্পিয়নশিপে জয়ী হয়ে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাওয়ার পর থেকে ক্রিকেটের সঙ্গে ভালোবাসা। ছোট বয়সে গ্রামে ক্রিকেট খেলেছি। ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসার আরও কারণ আছে, দেশের অন্য খেলা বিশ্বে এতটা কৃতিত্ব দেখাতে পারেনি। পারবে, তেমন সম্ভাবনা নেই। তাই ক্রিকেট নিয়ে যত স্বপ্ন।

জয়ী হওয়ার আশা নিয়ে খেলা দেখতে টিভির সামনে বসি। দল যখন হেরে যায়, নিজের মধ্যে অজুহাত দাঁড় করিয়ে সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা করি। দল যদি শক্ত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হারে, তখন ততটা খারাপ লাগে না। যখন দুর্বল প্রতিপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করে, তখন আহত হই। সান্ত্বনা খোঁজার অজুহাত দাঁড় করাতে পারি না। আমার মনে হয়, খেলোয়াড়রা এর চেয়ে বেশি কষ্ট পান।

বাংলাদেশ দল গত দুই-তিন বছরে দেশের মাটিতে বাঘা বাঘা দলকে হারিয়েছে। বিদেশের মাটিতেও ভালো খেলেছে। মিনি বিশ্বকাপে সেমি ফাইনালে খেলেছে। শ্রীলংকার মাটিতে দেশটির বিরুদ্ধে তিন ফরম্যাটে ১-১ জয়ে ড্র করেছে। বদলে যাওয়া বাংলাদেশ দলের কাছে প্রত্যাশাও ক্রমশ বেড়েছে।

অনেক দিন পর দেশের মাটিতে বদলে-যাওয়ার আগের বাংলাদেশ দলকে দেখলাম। যে দেশের মাটিতে দুর্দান্ত দল ভারত, আফ্রিকা, পাকিস্তান পাত্তা পায়নি, সেখানে অনভিজ্ঞ এবং অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষ শ্রীলংকার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারছে না। আগের খেলোয়াড়রাই তো দলে খেলছে, তাহলে কেন এমন আত্মসমর্পণ? উত্তর আমি জানি না- কারণ আমি ক্রিকেট বোদ্ধা নই। আমি ক্রিকেটপ্রেমী। আমি টিভির সামনে বসি দলের ভালো খেলা দেখতে। কীভাবে ভালো খেলবেন, খেলাবেন- সেই দায়িত্ব দায়িত্ববানদের।

শ্রীলংকার বাংলাদেশে সফরের আগে বাংলাদেশের হেড কোচের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন হাথুরু সিংহে। তিনি তার নিজের দেশ শ্রীলংকা দলে একই পদে চাকরি নিয়েছেন। তিনি ছাড়া বাংলাদেশ দল তো আগের দলই আছে, তাহলে দল পারছে না কেন? একজন হাথুরু সিংহে পদত্যাগ করেছেন বলে পুরো দলই এলোমেলো হয়ে যাবে? সেটা যুক্তিপূর্ণ ভাবতে পারছি না। হয়ত অন্য কারণ আছে। তবে হাথুরু সিং দায়িত্ব নেওয়ার পরই শ্রীলংকার শক্তি-সাহস যে বেড়েছে, তার প্রমাণ তারা দিয়েছে। দলটি অধিনায়কও সেই কথা বলেছেন। মাঠে সেটা তারা খেলে দেখাচ্ছে।

হাথুরু সিংহের বিদায়ে যারা, বিশেষ করে যে দু-একটি পত্রিকা বেশি খুশি হয়েছিল, অনেক ক্ষেত্রে তারাই তার বিদায়ের জন্য অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছিল। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এমন অসহায় আত্মসমর্পণে, তারা আজ কী ব্যাখ্যা দেবেন? আমি নিশ্চিত- হাথুরু সিংহে এই সিরিজে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে থাকলে শ্রীলংকা পাত্তা পেত না। বাংলাদেশ দলের শক্তি-সামর্থ্য সবই আছে, কিন্তু জ্বলে ওঠার জন্য কী যেন নেই। এই কী যেনটাই হলো হাথুরু সিংহে অথবা তার মতো মেধাবী-অভিজ্ঞ কেউ। আমার মনে হয় না তিনি খালেদ মাহমুদ।

আমরা বড্ড আবেগী জাতি। বাংলাদেশ দল যখন হারতে হারতে নাজেহাল, আফগানিস্তানের মতো দলের বিরুদ্ধে দেশের মাটিতে হারতে থাকল, সেই দলকে হাথুরু সিংহে জয়ের ধারায় নিয়ে এলেন। দেশের মাটিতে, অনেক ক্ষেত্রে বিদেশের মাটিতে আমরা জয়ী হতে লাগলাম। বাঘা বাঘা শক্তিধর দেশকে হারালাম। এই শ্রীলংকাকে তাদের মাটিতে নাস্তানাবুদ করে দিয়ে আসলাম। এরপরও হাথুরু সিংহের দক্ষ-অভিজ্ঞতা কথা তুললেন অনেকে। বিশেষ করে মিডিয়া।

জাতীয় দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় আড্ডায় এমনও বলেছেন- দক্ষ ও অভিজ্ঞ দল ছিল বলেই হাথুরু সিংহের সময় এতটা জয় এসেছে। তার কাছে সবিনয়ে জানতে চাই- হাথুরু সিংহ দায়িত্ব নেওয়ার আগে কি অন্য দল ছিল? আর এখন নতুন দল খেলছে? আসলে একজন মেধাবী এবং শক্ত মেজাজের অভিভাবক ছাড়া বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে ভালো খেলা আদায় করা কঠিন। যা বার বার প্রমাণিত হয়েছে।

হাথুরু সিংহের সব কাজ এবং সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল তা আমি বলছি না। কিছু খেলোয়াড়কে বেশি কাছে টানা, কাউকে বঞ্চিত করা- এমন সিদ্ধান্ত তাকে নিতে দেখা গেছে। তিনি তার অবস্থান থেকে যেভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা অন্যের অবস্থান থেকে দেখলে সঠিক মনে নাও হতে পারে। আবার তার সব সিদ্ধান্ত সঠিক হবে, তাও নয়। তবে এতটা প্রাপ্তি যার সময়ে, তার কোনো অবদান নেই, এই ধারণার অবসান হওয়া উচিত। কারো অবদান স্বীকার করে নিলে তাকে যেমন সম্মানিত করা হয়, তেমনি আরো সম্ভাবনার সুযোগ তৈরি হয়।  

হাথুরু সিংহের অধ্যায় শেষ, তিনি চাকরি করতে এসেছিলেন, চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। আমাদের ক্রিকেটের উন্নতি আমাদেরই করতে হবে। হাথুরু সিংহে গেছেন  দেশের টানে, নিজের দেশের ক্রিকেটকে সমৃদ্ধ করার দায়িত্ব নিয়ে। নিশ্চেই এই সিদ্ধান্ত তার ব্যক্তিত্বকে আরো মর্যাদাপূর্ণ করবে। তিনি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন। তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সমৃদ্ধ করে নিজেও সমৃদ্ধ হয়েছেন। বাংলাদেশ দল একজন উপযুক্ত হেড কোচের অভাব দারুণভাবে অনুভাব করছে। সেই মানের কোচ নাকি পাচ্ছে না বিসিবি। একজন মেধাবী, দক্ষ ও কিছুটা শক্ত মেজাজের হেড কোচ খুঁজে বের করা ছাড়া গত্যান্তর নেই।

লেখক: সাংবাদিক



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়